• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০১৯, ১১:০৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২৭, ২০১৯, ১১:০৩ এএম

হলি আর্টিজান হত্যাযজ্ঞ : ছাড়া পেয়ে হাসনাত করিম লন্ডনে 

হলি আর্টিজান হত্যাযজ্ঞ : ছাড়া পেয়ে হাসনাত করিম লন্ডনে 
হাসনাত করিম - ফাইল ছবি

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গিদের কবল থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া হাসনাত করিম বিদেশে অবস্থান করছেন। হত্যাযজ্ঞের কবল থেকে বেঁচে গেলেও দীর্ঘদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আটক ছিলেন ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি পুরো পরিবার নিয়ে লন্ডনে পাড়ি জমিয়েছেন। এমনটাই বলেছেন স্বজনরা। 

স্বজনরা বলেন, এমনিতেই হাসনাত করিম লন্ডনের পাসপোর্টধারী। এর পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের নাগরিকও। তিনি দ্বৈত নাগরিক হওয়ায় খুব দ্রুত এবং সহজেই সপরিবারে দেশের বাইরে চলে যেতে পেরেছেন। 

ধানমণ্ডির ৩ /এ রোডের ২৬ নম্বরে  তার বাসার কেয়ার টেকার মনির হোসেন বলেন, জঙ্গি হামলার পর স্যার অনেকদিন আটক ছিলেন।  সেখান থেকে মুক্ত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে স্ত্রী শারমিনা পারভিনকে নিয়ে লন্ডনে গেছেন। লন্ডনে স্যারের অনেক আত্মীয় আছে। আগেও স্যার এবং মেমসাহেব লন্ডন ছিলেন অনেকদিন। এ বাসায় কেউ থাকে না। শুধু বাড়ি পাহারা দিই। মাস শেষ হলে স্যার লোক মারফত বেতনের টাকা পাঠিয়ে দেন। হাসনাত স্যারের আরো একটি বাড়ি আছে বনানীতে। ওই বাড়িতে স্যারের ছোট ভাই থাকতেন। কিন্তু গুলশানে গণ্ডগোলের পর থেকে ওই ভাইও চলে গেছেন দেশের বাইরে। বনানীর বাড়িতে এখন অন্য পরিবার রয়েছেন। তারা স্যারের দূর্সম্পর্কের আত্মীয়। 
 
গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, হাসনাত করিম পুরো পরিবার নিয়ে হামলার দিন হলি আর্টিজান বেকারিতে গিয়েছিলেন তার কন্যার জন্মদিন উদযাপন করতে। সেখানে তিনি জঙ্গি হামলার কবলে পড়েন। তবে সেসময় তাকে জঙ্গিদের কয়েকজনের সঙ্গে হাঁটতে, কথা বলতে এবং ধূমপান করতে দেখা গেছে। সূত্র জানায়, হাসনাত করিম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকাকালে হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। 

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর একজন কোরিয়ান নাগরিকের গোপনে ধারণ করা ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর হাসনাত করিমের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। 

তবে জঙ্গি হামলার ঘটনার বিষয়ে হাসনাত করিমের স্ত্রী শারমিনা পারভিন লন্ডনের দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, জঙ্গিরা যখন বুঝতে পেরেছিল, হাসনাত করিমের পুরো পরিবারই রেস্টুরেন্টে রয়েছে, তখনই তারা হাসনাত করিমকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য বেছে নিয়েছিল। কারণ তারা ভেবেছিল পরিবার রেখে হাসনাত করিম পালিয়ে যাবে না। তিনি জানান, এরপর হাসনাত করিমকে জঙ্গিরা নানা কাজ করতে বাধ্য করে এবং তাদের সামনে সামনে হাঁটতে বলে যেন বাইরে থেকে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালালে প্রথমে তাকে এর শিকার হতে হয়। 

শারমিনা পারভিন দ্য ইন্ডিপেনডেন্টকে আরো বলেন, জঙ্গিরা তাদেরকে সুরা ফাতিহা পাঠ করতে বলেছিল। তখন প্রাণভয়ে তার স্বামী সুরা ফাতিহা পড়ছিলেন, তখন বেশ নার্ভাস ছিলেন হাসনাত করিম। তখন জঙ্গিরা তাকে এই বলে ভর্ৎসনা করেছিল যে তিনি এর প্রকৃত অর্থ জানেন না।

প্রসঙ্গত, হাসনাত করিমের ব্রিটেন এবং বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। তিনি বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করলেও কিশোর বয়সে লন্ডনে চলে যান। লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি প্রকৌশল বিদ্যায় গ্রাজুয়েশন করার পর লিডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন। এরপর কয়েক বছর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের পর তিনি বাংলাদেশের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন গত দশকের শুরুর দিকে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে শিক্ষকতা করেছেন।

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে যৌথ বাহিনীর কমান্ডো অভিযান শুরুর কিছু আগে জঙ্গিরা হাসনাত করিম এবং তার পরিবারকে ছেড়ে দেয়। তবে এর পর থেকেই তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে ছিলেন।

এইচ এম/ এফসি