• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১, ০৫:৩৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১, ০৫:৩৭ পিএম

স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর সূত্র ধরে সংঘবদ্ধ চক্রের ৬ জন গ্রেপ্তার

স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর সূত্র ধরে সংঘবদ্ধ চক্রের ৬ জন গ্রেপ্তার

অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে সেক্স টয় ও যৌন উদ্দীপক পণ্য বিক্রিকারী একটি চক্রের মূল হোতাসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডির সাইবার অপরাধ তদন্ত দল। রাজধানীর কলাবাগানে বিকৃত যৌনাচারের শিকার হয়ে মারা যাওয়া স্কুলছাত্রীর ঘটনার সূত্র ধরে এই সংঘবদ্ধ চক্রটির সন্ধান পায় সংস্থাটি।

রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত সিআইডির সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির সাইবার ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি মো.কামরুল আহসান।

অতিরিক্ত ডিআইজি জানান, শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর পল্লবী এলাকার সিদ্দিক নগরের অলিভিয়া ক্যাফে এন্ড রেস্টুরেন্ট এবং বাইগারটেক এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে চক্রটির ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল সেক্স টয়, যৌন উদ্দীপক পণ্য, ৫টি মোবাইল, ১টি ল্যাপটপ ও ৯টি সিম কার্ড জব্দ করা হয়। ওইদিনই তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পল্টন থানায় একটি মামলা করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন— রেজাউল আমিন হৃদয় (২৭), মো.সিয়াম আহমেদ ওরফে রবিন (২১), মীর হিসামউদ্দিন বায়েজিদ (৩৮), মো. ইউনুস আলী (৩০), আরজু ইসলাম জিম (২২) ও চক্রের মূলহোতা মো. মেহেদী হাসান ভূইয়া ওরফে সানি (২৮)। তাদের কাছ থেকে জব্দকৃত নিষিদ্ধ পণ্যের আনুমানিক বাজার মূল্য ১২ লাখ টাকা বলে জানিয়েছে সিআইডি।

মো.কামরুল আহসান জানান, চক্রটি বিদেশ থেকে বিভিন্ন বৈধ পণ্যের আড়ালে নিষিদ্ধ সেক্স টয় ও যৌন উদ্দীপক পণ্য আমদানি করতো। তারপর  সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ অনলাইনের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে সেগুলোর লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে এক শ্রেণির ক্রেতার কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করতো। মূলত তাদের টার্গেট ছিলো নিঃসঙ্গ বা ৩০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিরা। চক্রটি তাদের এসব নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে বিকাশ ও রকেটের মতো মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করতো।

যেভাবে গ্রেপ্তার হয় চক্রটি

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মো.কামরুল আহসান জানান, গত ৭ জানুয়ারি রাজধানীর কলাবাগানের একটি বাসায় বন্ধু তানভীর ইফতেখার দিহানের বিকৃত যৌনাচারের শিকার হয়ে প্রাণ হারায় মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের এক শিক্ষার্থী। ময়নাতদন্তে জানা যায়, তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে এক ধরনের ফরেন বডি ব্যবহার করা হয়েছিল। যার কারণে রক্তক্ষরণ হয়ে তার মৃত্যু হয়।

মো. কামরুল আহসান আরো জানান, ওই ছাত্রীর মৃত্যুর বিষয়টি সিআইডির সাইবার মনিটরিং ও ইনভেস্টিগেশন টিমের নজরে এলে তারা অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে দেখা যায়, কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র নিজেদের নাম-পরিচয় গোপন করে TVC SKY SHOP BD, Sky Shop BD, TVC SKY SHOP, Asian Sky Shop-এর মতো অনলাইনে নিষিদ্ধ সেক্স টয় ও যৌন উদ্দীপক পণ্য বিক্রি করছে।

পরে আরো বিস্তারিত অনুসন্ধানের পর শনিবার সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পল্লবীর অলিভিয়া ক্যাফে এন্ড রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে একটি চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাইগারটেক এলাকার ভাড়া বাসা থেকে চক্রটির মূল হোতা মো. মেহেদী হাসান ভূইয়া ওরফে সানিকেও গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান অতিরিক্ত ডিআইজি।

কে এই সানি

জিজ্ঞাসাবাদের সানি সিআইডিকে জানিয়েছে, সে ২০১০ সাল থেকে Asian Sky Shop এ ডেলিভারি ম্যান হিসেবে চাকরি করতো। পরে ২০১৩ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজে ব্যবসা শুরু করে। অনলাইনে প্রোডাক্ট কেনার জন্য সে ভারত ও চীনেও যায়। পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সাল থেকে নিজস্ব ওয়েবসাইট খুলে ব্যাপক পরিসরে আমদানি নিষিদ্ধ সেক্স টয় ও যৌন উদ্দীপক ওষুধ আমদানি ও বিক্রি শুরু করে।

সানি সিআইডিকে আরো জানায়, এসব নিষিদ্ধ পণ্য সে সরকারের শুল্ক ও কর ফাঁকি দিয়ে কৌশলে বৈধ পণ্যের আড়ালে বিদেশ থেকে আমদানি করতো। তার এ কাজে বিভিন্ন সিএন্ডএফ এজেন্টরাও সহযোগিতা করতো। অনেক সময় তিনি ক্রেতাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে তাদের পণ্য ডেলিভারি দিতো না।