• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০১৯, ০৯:৪৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৫, ২০১৯, ০৯:৫৩ পিএম

সরেজমিন ঢাকা শিশু হাসপাতাল

ওয়ান স্টপ সার্ভিসে চলছে ডেঙ্গু চিকিৎসা

ওয়ান স্টপ সার্ভিসে চলছে ডেঙ্গু চিকিৎসা
ঢাকা শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে চিকিৎসারত শিশুরা 

ঘড়ির কাটায় বেলা ১২টা।ঢাকা শিশু হাসপাতালের প্রধান ফটকে ঢুকে বা দিকে তাকাতেই চোখে পড়ে একটি ব্যানার। ব্যানারে লেখা, ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার- ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কিত তথ্য কেন্দ্র’। এ সেন্টারে দায়িত্ব পালন করছিলেন হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স জাকিয়া বেগম। তিনি দৈনিক জাগরণকে জানান, ডেঙ্গু মোকাবিলায় গত ২৭ জুলাই থেকে এ হাসপাতালে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করা হয়েছে। এই সেন্টার থেকে বিনামূল্যে ‘কুইক সার্ভিস’ পাচ্ছেন সেবা গ্রহীতারা। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এক থেকে ১৮ বছর বয়সীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। 

ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার বীণা বাড়ৈ। তিনি দৈনিক জাগরণকে বলেন, শিশুদের ডেঙ্গু নিয়ে অভিভাবকরা ভীষণ উদ্বিগ্ন। জ্বর হলেই তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। এ কারণে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারে কোনো রোগী এলে শুরুতেই আমরা জ্বরের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছি এবং লক্ষণে ডেঙ্গু জ্বর সন্দেহ হলে তাদের ‘কুইক সার্ভিস’ দেয়ার চেষ্টা করছি।

বীণা বাড়ৈ আরও বলেন, আগে কারো জ্বর তিনদিন পার হলেই সঙ্গে সঙ্গে তার ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছিলো। এখন লক্ষণ থাকলে এক দিনের জ্বরেও টেস্ট করানো হচ্ছে এবং সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হচ্ছে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত তাঈকবে দুধ খাওয়াচ্ছেন বাবা 

শিশু হাসপাতালের পরিচালক সৈয়দ শাফি আহমেদ জাগরণকে বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় আমাদের সমন্বিত ব্যবস্থা নেয়ার অংশ হিসেবে আমরা ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করেছি। যদিও কিছু ক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৬৬৬টি। ফলে সবাইকে আমরা ভর্তি রেখে সেবা দেয়া সম্ভব নয়।এ কারণে বহির্বিভাগে এই সেবা দেয়া হচ্ছে। রোগীর শারীরিক অবস্থা ‘ক্রিটিক্যাল’ হলেই কেবল আমরা ভর্তি নিচ্ছি। তিনি জানান, সোমবার (৫ আগস্ট) বেলা ২টা পর্যন্ত শিশু হাসপাতালে ১৫২টি শিশু ডেঙ্গু জ্বরের টেস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ শিশুর ডেঙ্গু ধরা পড়েছে।

হাসপাতালে কথা হয় নুহাদ সাজেদ নামের ১৩ মাস ৪ দিন বয়সী শিশুর মা নিশা রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, মিরপুর ৭ নম্বর রোডে ৬ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় থাকেন তারা। স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। গত ৩০ জুলাই দুপুরে বাবুর জ্বর আসে। সন্ধ্যায় স্থানীয় ডিজি ল্যাবে বাবুর ব্লাড টেস্ট করা হয়। তাতে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। রাতেই মিরপুর শিশু হাসপাতাল ও স্থানীয় এক  ক্লিনিকে সিট না পেয়ে এখানে এসে সিট পাই। আর বাবুকে ভর্তি করি। ৫ দিন পর বাবুর শরীরটা আজ  (৫ আগস্ট) বেশ ভালো। আশা করছি, এক-দু’ দিনের মধ্যে রিলিজ নিয়ে বাসায় ফিরতে পারবো।

নিশা রহমান বলেন, অবশ্য মন থেকে ডেঙ্গু ভীতি দূর করতে পারছি না। বাসায় ফিরলে যদি আবার এডিস মশা কামড়ায়! দ্বিতীয়বার যদি বাবু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়?

ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় ঢাকা শিশুতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার

নুহাদ সাজেদের দাদী শাহনেওয়াজ খাতুনও একই ধরনের আতঙ্কের কথা জানিয়ে বলেন, আমরা ৬তলায় থাকি। আর ৬ তলা ভবনের ছাদেই বাগান। আশঙ্কা হচ্ছে, ছাদ-বাগান থেকেই এডিস মশা জন্মাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা তো বলছেন, নোংরা পানিতে এডিস মশা জন্মায় না, এডিস জন্মায় পরিষ্কার-স্বচ্ছ পানিতে!

কল্যাণপুর ৫ নম্বর রোড থেকে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ১৬ মাস বয়সী শিশু তাঈবকে। তাঈবের বাবা হুমায়ুন কবির দৈনিক জাগরণকে বলেন, দ্বিতীয় সন্তানের ১৫ বছর পর তাঈবের জন্ম। ৩১ জুলাই সন্ধ্যায় ছেলের জ্বর দেখা দেয়। কান্না শুরু করে। বাবুর হাত-পা অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে থাকে। চোখ উল্টাতে থাকে। আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তৎক্ষণাৎ ক্লিনিকে গিয়ে ব্লাড টেস্ট করা হয়। ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এরপর সোজা চলে আসি এই হাসপাতালে। ৫ দিনে বাবুর জ্বর এখন অনেকটাই ভালো। চিকিৎসকরা হয়তো কালই আমাদের রিলিজ দেবেন।

এইচএস/বিএস 
 

আরও পড়ুন