• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০১৯, ১২:৪৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২০, ২০১৯, ১২:৫৫ পিএম

যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক

কী বার্তা দেবেন শেখ হাসিনা?

কী বার্তা দেবেন শেখ হাসিনা?
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-ফাইল ছবি

রা জ নী তি

.........................................

যুবলীগের জাতীয় কংগ্রেসকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনা নিতে আজ রোববার (২০ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে যাচ্ছেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। দলীয় প্রধানের সঙ্গে যুবলীগ নেতাদের ওই বৈঠকে সংগঠনটির সমালোচিত চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ভাগ্য নির্ধারণও হতে পারে। এ ছাড়া কোন বয়স পর্যন্ত যুবলীগ করা যাবে সেটাও নির্ধারণ হয়ে যেতে পারে ওই বৈঠকে। যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের কথা-বার্তায় তেমনটাই প্রকাশ পেয়েছে। তবে সব কিছু খোলাসা হয়ে যাবে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক শেষ হওয়ার পর পরই। তাই আজ সবার নজর থাকবে ওই বৈঠকের দিকে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের নেতৃত্ব সংগঠনের শীর্ষ নেতারা গণভবনে যাবেন।

বয়স সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কোন বয়স পর্যন্ত যুবলীগ করা যাবে, সেসব আলোচনা রোববারের (আজ) মিটিংয়েই করা হবে।

যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন,  যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে নেত্রী নির্দেশনা দেবেন।এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

যুবলীগ নেতৃবৃন্দ বলছেন, বৈঠকেই নির্ধারণ হবে যুবলীগের ভবিষ্যত নেতৃত্ব। একাধিক নেতা জানান, যুবলীগের গৌরব ফিরয়ে আনতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে সব ধরনের দিক-নির্দেশনা চাইবেন তারা। যুবলীগের নেতৃত্ব নিয়ে দলীয় প্রধানের চিন্তা ও সংগঠনের আগামী নেতৃত্বে তিনি কেমন নেতৃত্ব চান তাও জানাবেন সংগঠনের নেতারা। এ ছাড়া সম্মেলনের আগে সংগঠনের পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে দলীয় প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করবেন যুবলীগ নেতারা। ঢাকা মহানগর (উত্তর-দক্ষিণ) যুবলীগের নেতৃত্ব নিয়েও আলোচনা করা হবে। ঢাকা মহানগর (উত্তর-দক্ষিণ) যুবলীগের সম্মেলনের দিনক্ষণও নির্ধারিত হওয়ার সম্ভাবনায়ও রয়েছে। 

এক রকম নিশ্চিত হওয়া গেছে সম্মেলনের আগে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা হচ্ছে না যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর।

যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী দৈনিক জাগরণকে বলেন, নেত্রীর কাছে যাচ্ছি সংগঠনের বর্তমান পরিবেশ-পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য। আশা করছি বৈঠকে যুবলীগের আগামী জাতীয় কংগ্রেস নিয়ে গতিশীল গাইডলাইন দেবেন আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা।

সাম্প্রতিক সময়ে যুবলীগের কোনও কার্যক্রমে দেখা যাচ্ছে না চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে। অথচ সংগঠনের সম্মেলন ২৩ নভেম্বর। কিন্তু সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাকে খুঁজেই পাচ্ছেন না। তবে জানা গেছে, ওমর ফারুক চৌধুরী তার ঘনিষ্ঠ কিছু নেতা-কর্মী ছাড়া কারও সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। ক্যাসিনো কান্ডে তার নাম না আসলেও নেতৃত্বে প্রশ্নে গণমাধ্যমে বেশ সমালোচিত হয়েছেন তিনি। এমতাবস্থায় যুবলীগ চেয়ারম্যান সংগঠন থেকে বহিস্কার করে ভারপ্রাপ্ত কাউকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে আজকের দলীয় প্রধানের সঙ্গে সংগঠনের বৈঠকে। 

গুঞ্জন রয়েছে, গণমাধ্যমের নানা রকম খবরে চাপে পড়েছেন ওমর ফারুক চৌধুরী। বেকায়দায় অবস্থায় যাতে গ্রেফতার হতে না হয় সেজন্য সরকারের শীর্ষমহলে তদবির করে যাচ্ছেন তিনি।  তিনি এখন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। 

যুবলীগের গত সভাপতিমণ্ডলির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না ওমর ফারুক চৌধুরী। এ সম্মেলনে যুবলীগের বর্তমান অবস্থার জন্য অনেকে তাকেই দায়ী করেছেন। একই সঙ্গে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ ওই বৈঠকে যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্যদের তোপের মুখে পরেন। সভায় যুবলীগ চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কয়েকজন সভাপতিমণ্ডলির সদস্য। একই সঙ্গে যদি যুবলীগ চেয়ারম্যান সংগঠনের আসন্ন সম্মেলনে উপস্থিত না থাকেন তা হলে কে সভাপতিত্ব করবেন তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়েও আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে আজ রোববারের বৈঠকে আলোচনায় উঠতে পারে বলে সংগঠন সূত্রে জানা গেছে। 

যুবলীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা মনে করেন, খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়াদের মতো  কু-চক্রীদের পদ-পদবি দিয়ে সংগঠনের বারোটা বাজিয়েছেন চেয়ারম্যান নিজেই। যুবলীগের বতর্মান শীর্ষ নেতৃত্ব সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারেননি বলেও মনে করেন তারা।

২০১২ সালে যুবলীগের জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই কংগ্রেসে যুবলীগ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ওমর ফারুক চৌধুরী।

বয়স যখন ফ্যাক্টর

৭ম জাতীয় কংগ্রেস ২৩ নভেম্বর। তাই নেতৃত্বের পালাবদল ঘিরে ঘুরে-ফিরে বয়স কত হবে তা নিয়ে যুবলীগের ভেতর-বাইরে নানা রকম আলোচনা চলছে গত কয়েক দিন ধরেই। 

যুবলীগ প্রতিষ্ঠার সময় যেহেতু বয়সের একটি বাঁধা-ধরা নিয়ম ছিল সেই হিসেবে এবারের বয়স কতো হবে এ নিয়েই চলছে আলোচনা। আজ রোববারের বৈঠকে বয়সের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে কি না জানতে চাইলে যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলি সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী দৈনিক জাগরণকে বলেন, যুবলীগের যতগুলো সম্মেলন হয়েছে সব সময়ই এ ধরনের কথা আলোচনা হয়ে থাকে। তারপরও এ বিষয়টি নেত্রীর সিদ্ধান্ত। এসব বিষয় তো আলোচনায় আসবেই।

সূত্র জানায়,  যদিও তাদের অনেকেই প্রকাশ্যে নিজ নিজ প্রার্থিতার বিষয়ে এখনই ঘোষণা দিচ্ছেন না। ক্যাসিনো, মাদক ও টেন্ডারের সঙ্গে সম্পৃক্ততায় কারো কারো নাম আসায় অনেকটা চুপচাপই রয়ছেন। বেশিরভাগই বলছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা যে কোনও দায়িত্ব দিলে আমি পালন করবো।

সম্ভাব্য প্রার্থীরা কয়েক দিন ধরেই রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ও ধানমণ্ডির দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত যাওয়া-আসা শুরু করে দিয়েছেন।যোগাযোগ বাড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে।

দলের বেশিরভাগ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরাবরের চেয়ে এবার সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে।  তারা বলছেন, এবার সরাসরি নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা। তাই তিনি নিজেই বিভিন্ন মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।এবার সংগঠনে স্থান পাবেন পরিচ্ছন্ন ইমেজ, দক্ষ সংগঠক ও ত্যাগী নেতারা।ছাত্রলীগের ব্যাকগ্রাউন্ড আছে এ রকম দেখে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।

কেন্দ্রীয় কমিটির পদ- প্রত্যাশী যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু বলেন, যুবলীগে নবীনদের স্থান দেয়া হোক, এটাই প্রত্যাশা দীর্ঘদিন ধরে। ছাত্র রাজনীতি করে যারা পদ-পদবি পান নাই তাদের মূল্যায়ন করা হবে বলে প্রত্যাশা রাখি। সেই সঙ্গে উচ্চ শিক্ষিতরা যুবলীগের নেতৃত্বে আসুক এমনটাও চাই।  

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম আকন্দ বলেন, ‘পরিচ্ছন্ন যুবকরাই যুবলীগের নেতৃত্বে আসুক এমনটা আমরা চাই।যাদের দলের প্রতি কমিটমেন্ট আছে, দলকে ব্যবহার করে নানা অপকর্মে লিপ্ত হন না এমন কেউ নেতৃত্বে আসুক এটাই আমাদের আশা।

জানা গেছে, যুবলীগের সম্মেলনে প্রত্যেক জেলা ইউনিট থেকে ২৫ জন করে কাউন্সিলর আসবে। কেন্দ্রসহ মোট কাউন্সিলর হবে ২২০০ জন। ডেলিগেট আনুমানিক ২০ হাজার।

গৌরবময় যুবলীগের ইতিহাস  

১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় যুবলীগ। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি। ফজলুল হক মনির পর দীর্ঘ দিন যুবলীগ দেখভাল করছেন এমনকি চেয়ারম্যান হিসেবেও ছিলেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম।  

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছয়টি জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠনটির সবশেষ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালে।

১৯৭৪ সালের প্রথম জাতীয় কংগ্রেসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই সময়ে তার বয়স ছিল মাত্র ৩২ বছর। ওই সময় যুবলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৪০ বছরের একটি বয়স-সীমার বিধান ছিল। তবে ১৯৭৮ সালে অনুষ্ঠিত সংগঠনটির দ্বিতীয় জাতীয় কংগ্রেসে ওই বিধানটি বিলুপ্ত করা হয়।এরপর অনুষ্ঠিত কংগ্রেসে ৩৮ বছর বয়সী আমির হোসেন আমু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।১৯৮৬ সালের তৃতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মোস্তফা মহসীন মন্টু। ওই সময় তার বয়স ছিল ৩৭ বছর। ১৯৯৩ সালে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন।

১৯৯৬ সালের চতুর্থ জাতীয় কংগ্রেসে ৪৭ বছর বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শেখ ফজলুল হক সেলিম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগিনা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ ফজলুল হক মনির ছোট ভাই শেখ ফজলুল হক সেলিম।

২০০৩ সালের পঞ্চম জাতীয় কংগ্রেসে ৪৯ বছর বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর কবির নানক।

২০০৮-১২ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। সর্বশেষ ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত হয় সংগঠনটির ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেস।ওই কংগ্রেসে ৬৪ বছর বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ওমর ফারুক চৌধুরী। ওমর ফারুক যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতিমণ্ডলির সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বোনের জামাই।  

এএইচএস/এসএমএম

আরও পড়ুন