• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০১৯, ০৯:২৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৫, ২০১৯, ০৯:২৫ এএম

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সৌদি আরবের বিখ্যাত ১১ জাতের খেজুর

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সৌদি আরবের বিখ্যাত ১১ জাতের খেজুর

ষাটোর্ধ্ব মোকসেদ আলী। কখনো সৌদি আরব যাওয়ার সুযোগ হয়নি তার। লোকমুখে, টেলিভিশনে আর বাংলাদেশের অন্যত্র জায়গায় সৌদির খেজুর চাষের গল্প দেখে শুনে তার নিজের খেজুর চাষের শখ জাগে। আর সেই শখকে বাস্তবে রূপ দেন কৃষক মোকসেদ আলী। বরেন্দ্র ভূমির নাচোলে ২৫ কাঠা জমিতে গড়ে তুলেছেন সৌদি খেজুর বাগান। তার বাগানে ‘আজোয়া’, ‘ক্ষীর’, ‘সুলতান’, ‘খালাস’, ‘মরিয়ম’সহ ১১ জাতের খেজুর রয়েছে। এর মধ্যে দামি জাত হচ্ছে আজোয়া।

ঘটনার শুরু ২০১৭ সালের দিকে। শখকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য মোকসেদ আলী প্রথমে যোগাযোগ করেন আফগানিস্তানে থাকা প্রকৌশলী এক আত্মীয়র সাথে। তার কাছে সৌদি খেজুর চাষের ইচ্ছা পোষণ করেন। সেই আত্মীয়ই সৌদি আরব থেকে খেজুরের বীজ পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক কৃষক মোকসেদ আলীর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ভেরেন্ডি গ্রামে। নাচোল-আড্ডা সড়কে ভেরেন্ডি বাজার থেকে আধা কিলোমিটার পূর্বে গেলেই রাস্তার ডান পাশে চোখে পড়বে একটি ফলক। ফলকে লেখা রয়েছে ‘বরেন্দ্র ভূমিতে সৌদির খেজুর বাগান ও নার্সারী’। বাড়ির পাশেই লাগোয়া জমিতে ছেলে ওবাইদুল ইসলাম রুবেলকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন সৌদির খেজুর বাগান।

প্রথম দফায় মোকসেদ আলী সৌদি আরব থেকে ৮০০ খেজুর বীজ নিয়ে আসেন। একেকটি বীজের জন্য খরচ পড়ে প্রায় ২৮৮ টাকা। সেগুলো চারা করে তার মধ্যে ৪২৭টি খেজুর গাছ তিনি ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে রোপণ করেন। বাকিগুলো চারা হিসেবে বিক্রি করছেন বলে জানান মোকসেদ আলী। তার একেকটি চারার দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। দ্বিতীয় দফায়ও আরো ৮০০ খেজুর বীজ আনেন তিনি। যেগুলো চারা করে বিক্রি করছেন। 

এ পর্যন্ত মোকসেদ আলী প্রায় ৭০০ চারা বিক্রি করেছেন। তবে বীজ ক্রয়, চারা তৈরি, রোপণ এবং এ পর্যন্ত পরিচর্যা বাবদ প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে মোকসেদ আলীর।

মোকসেদ আলী জানান, আশপাশের উপজেলাসহ সিলেট, নেত্রকোনা, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুর, নওগাঁ ও রাজশাহীতেও তার চারা বিক্রি হয়েছে। ‘কীভাবে বাইরের মানুষ জানতে পারল’- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার ছেলে ফেসবুকে প্রচার করছে। সেখান থেকে তারা জানতে পারছে। শিবগঞ্জের একজন ৬২০টি চারার অর্ডার দিয়েছেন।

মোকসেদ আলী বলেন, অনেকেই শখের বসে তার খেজুর বাগান দেখতে আসেন। 

এছাড়া উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের মাঠকর্মী ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক কৃষি কর্মকর্তা তার খেজুর বাগান দেখে গেছেন। আগামীতে আরো আড়াই বিঘা জমিতে খেজুর বাগান করার ইচ্ছে আছে বলে জানান মোকসেদ আলী।

সৌদির খেজুর চাষে আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। কীটনাশক বা বালাইনাশক সবই স্বাভাবিক নিয়মেই দিতে হয়। তবে খেজুর বাগানে সঠিক পরিচর্যা জরুরি। খেজুর উৎপাদনের স্বাভাবিক সময় আড়াই থেকে তিন বছর হলেও সঠিক পরিচর্যার কারণে অনেক সময় আগেও উৎপাদন হতে পারে বলে জানান তিনি। তবে তার ১৬ মাস বয়সী বাগানে কিছু কিছু গাছে খেজুর ধরতে দেখা গেছে।

কৃষক মোকসেদ আলীকে খেজুর বাগান গড়ে তুলতে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে যাছেন তার ছেলে ওবাইদুল ইসলাম রুবেল। 

তিনি জানান, একটি গাছ ৫০ থেকে ১৫০ বছর পর্যন্ত খেজুর দেয়। আর প্রতি মৌসুমে একটি পরিপূর্ণ খেজুর গাছ ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি পর্যন্ত ফল দেয়। আর তাই ভালো উৎপাদনের আশা নিয়ে সামনে এগোচ্ছেন কৃষক মোকসেদ আলী ও তার ছেলে রুবেল।

বরেন্দ্র ভূমিতে সৌদির খেজুর চাষে সফলতা কিংবা সম্ভাবনা কতটুকু তা জানতে যোগাযোগ করা হয় জেলা হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মকর্তা জহুরুল ইসলামের সঙ্গে। 

তিনি বলেন, বরেন্দ্র ভূমিতে খেজুর চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা খেজুর গাছে পানি কম লাগে। তাছাড়া বরেন্দ্রর আবহাওয়া খেজুর চাষের উপযোগী। 

এ কর্মকর্তা আরো বলেন, হর্টিকালচার সেন্টারেও ২৫-৩০টি খেজুর গাছ লাগানো হয়েছে। তবে তাদের চারা টিস্যু কালচারের। আগামী বছরই খেজুর পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

টিএফ

আরও পড়ুন