• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০১৯, ০৮:২৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২৮, ২০১৯, ০৮:২৫ পিএম

রোববার বিয়ে, স্কুলে যাওয়া হবে না উর্মির

রোববার বিয়ে, স্কুলে যাওয়া হবে না উর্মির
উর্মিদের উঠানে সাজানো হচ্ছে বিয়ের প্যান্ডেল  -  ছবি : জাগরণ

তিন দিন পর রোববার (২ সেপ্টেম্বর) উর্মির বিয়ে। বিয়ের গেট সাজানো হয়েছে। বাড়িতে স্বজনসহ মেহমানও আসতে শুরু করেছে। পুরো বাড়িতেই আনন্দ বিরাজ করছে। কিন্তু উর্মির মন খারাপ। সে আর কখনো স্কুলে যেতে পারবে না, বান্ধবীদের সাথেও খেলা করতে পারবে না। ঘরের ভেতরে তার কান্নার গোঙানি শোনা গেলেও মা ও মামার বাধার কারণে দেখা করতে দেয়া হয়নি।

ঘটনাটি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চরকাচিয়া গ্রামের বেপারি বাড়িতে। জান্নাতুল ফেরদাউস উর্মি একই এলাকার প্রবাসী মাজেদ মালের বড় মেয়ে এবং এলকেএইচ উপকূল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।

বুধবার (২৮ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়িতে ঢুকতেই বিয়ের গেট সাজানো হচ্ছে। ভেতরে প্যান্ডেলও সাজানো হচ্ছে। বাড়ির উঠানে উর্মির প্রবাসফেরত বাবা, ব্যবসায়ী মামা, চার স্বজনসহ কয়েকজন মেহমান খোশগল্পে মেতে আছেন। সাংবাদিক দেখেই তারা নড়েচড়ে বসেন। আগামী ২ সেপ্টেম্বর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে উর্মিকে একই গ্রামের সর্দার বাড়ির মফিজুল হক সর্দারের ছেলে মোল্লার হাট বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল করিমের কাছে।

এদিকে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিদ্যালয়ে পরীক্ষা শুরু হবে তার। কয়েক দিন স্কুলে না গেলেও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিল উর্মি। কিন্তু বিয়ের কারণে স্কুলেও যাওয়া হলো না, পরীক্ষাও আর দেয়া হলো না। ঘরের ভেতরে ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। উর্মির এ কান্নার শব্দ শুনে তার সাথে কথা বলার জন্য অনেক অনুরোধ করলেও মা, বাবা ও মামার কারণে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

বিদ্যালয়ে গেলে কয়েকজন সহপাঠী জানায়, উর্মি একদিকে যেমন মেধাবী শিক্ষার্থী, অন্যদিকে রূপসীও। স্থানীয় কয়েকজন বখাটে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার সময় উর্মিকে উত্ত্যক্ত করত। তাই ওর মা-বাবা এ পরিস্থিতিতে তাকে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তাকে না পেয়ে আমাদেরও মন খারাপ।

এ ব্যাপারে উর্মির বাবা মাজেদ মাল বলেন, ‘প্রায় পাঁচ বছর আগে ভোলার কালিগঞ্জ থেকে এ গ্রামে জমি কিনে বসবাস করছি। প্রায় এক বছর হয়েছে আমি প্রবাসে থাকি। গত মাসে মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে এসেছি। তিন মেয়ের মধ্যে উর্মি সবার বড়। বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার সময় এলাকার বখাটেরা তাকে উত্ত্যক্ত করে। আমার স্ত্রী, তিন মেয়েকে নিয়ে আতঙ্কে রাত যাপন করে। কোথাও বিচার পাইনি। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে বিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু বাল্যবিবাহের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ মোহাম্মদ মিন্টু ফরাজীকে জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের আয়োজন করেছি।’

দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সালেহ মোহাম্মদ মিন্টু ফরাজী বলেন, ‘আমার এলাকায় কোন বাল্যবিবাহ হতে দেওয়া হবে না। আপনারা (সাংবাদিক) আসছেন, বিয়েটা ভেঙে দেন। পরে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম বানু শান্তি জানান, ‘ঘটনাটি আমি অবহিত হয়েছি। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এনআই

আরও পড়ুন