• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০১৯, ০৯:২৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১, ২০১৯, ০৯:২৮ এএম

‘রশি টেনে’ নৌকায় ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার

‘রশি টেনে’ নৌকায় ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার

লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার টুমচর ইউনিয়নে কালিরচর গুচ্ছগ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে রহমত খালী খাল। তীব্র ভাঙনের ফলে খালটি দেখে মনে হচ্ছে এটি কোন একটা নদী। খালের দুই পাশে লম্বা বাঁশের খুটির সঙ্গে বাঁধা রয়েছে একটি রশি। সেই রশি টেনে টেনে পারাপার হচ্ছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ রোগী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, কৃষক ও দিনমজুরসহ প্রায় ৮টি গ্রামের বাসিন্দারা। ফলে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে খালের দুই পাড়ের লক্ষাধিক মানুষের। বাধ্য হয়ে রশি টেনে নৌকায় ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার হচ্ছে প্রতিদিন। অথচ সেতুটি নির্মাণ হলে ভোগান্তি লাগবের পাশাপাশি যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতো বলে ধারণা স্থানীয়দের। তবে স্থানীয় চেয়ারম্যান বলছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করেও একটি সেতু পাওয়া যাচ্ছে না।

সরেজমিন দেখা যায়, ভাঙনের ফলে খালটি দেখে মনে হচ্ছে এটি কোন একটা নদী। খালের দুই পাশে লম্বা বাঁশের খুটির সঙ্গে বাঁধা রয়েছে একটি রশি। সেই রশি টেনে টেনে পারাপার হচ্ছেন প্রায় ৮টি গ্রামের বাসিন্দা। অনেক সময়ই নৌকা থেকে খালে পড়ে যায় অনেকেই। মেঘনা নদীর সঙ্গে খালটির সংযোগ থাকায় বর্ষাকালে জোয়ারের সময় খালটিতে কচুরিপাতা জমে যায়। ফলে কেউ সাঁতার দিয়ে কেউবা কষ্ট করে কচুরিপাতা সরিয়ে রশি টেনে টেনে নৌকায় পারাপার করে। বেশিরভাগ সময়ই নৌকা পারাপার বন্ধ থাকে। খালটির দু’পাড়ে অবস্থিত গ্রামগুলোতে প্রচুর পরিমাণে সবজি চাষ হয়ে থাকে। সেতু না থাকায় সঠিক সময়ে বাজারে নেওয়া সম্ভব হয় না চাষিদের পক্ষে। ফলে অল্প দামে খাল পাড়ে পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই খরচের তুলনায় লাভ না হওয়ায়, সবজি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ। অন্যদিকে সেতু না থাকায় খাল পাড়ে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় পারাপারের জন্য, যার কারণে সঠিক সময়ে কেউ গন্তব্য স্থানে পৌঁছাতে পারে না।

লক্ষ্মীপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন ও ইমি আক্তার বলেন, খাল পারাপারের সময় কয়েকদিন নৌকা থেকে পড়ে গিয়েছি, এতে জামা-কাপড়সহ বই-কাগজ সব ভিজে গিয়েছে। আমাদের এত কষ্ট দেখেও কেউ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। খালের দুই পাড়ের বাসিন্দারা অধিকাংশ দরিদ্র হওয়ায় নিজেদের উদ্যোগেও সেতুর বিকল্প কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।

কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন এলাকার বাসিন্দা হনুপা বেগম খাল পাড়ে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে রয়েছেন অসুস্থ নাতিন শিমুকে নিয়ে। লক্ষীপুর সদর হাসপাতালে ডাক্তার দেখাবেন। তিনি জানান, জেলা শহরে যাওয়ার সহজ পথ এটি, তাই এ পথেই যাতায়াত করেন । সবসময় খালটি পার হওয়ায় জন্য দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, অনেক সময় নৌকা পেলেও লোকজন বেশির কারণে নৌকায় উঠতে পারেন না। যার জন্য হাসপাতালে সঠিক সময় যেতে পারি না। হাজার মানুষের কষ্টের কথা ভেবে খালটির উপর দ্রুত সরকার একটি সেতু নির্মাণ করবে এমনটি প্রত্যাশা তার।

নৌকার মাঝি জামাল মিয়া জানান, রশি টেনে টেনে খাল পার করতে খুব কষ্ট হয়। স্থানীয়দের কষ্টের কথা চিন্তা করেই এ কাজ করি। বর্ষাকালে খালে অনেক পানি ও ঢেউ থাকে, তখন রশি টানতে খুব কষ্ট হয়। এখানে খাল পারাপারে নির্দিষ্ট কোন ভাড়া নেই, লোকজন যত টাকা দেয় তাই নেই। তবে কচুরিপাতা খালে ভরে গেলে নৌকা চালানো বন্ধ থাকে। কারণ কচুরিপাতার মধ্যে রশি টানতে পারবো না।

টুমচর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সৈয়দ নুরুল আমিন লোলা বলেন, রহমত খালী খালের উপর একটি সেতুর অভাবে এখানকার মানুষের দুর্ভোগের কথা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ভালো ফলাফল পাইনি। দ্রুত একটি সেতু নির্মাণ করে দিলে এ অঞ্চলের মানুষ বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকবে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুর রেদওয়ান আরমান শাকিল বলেন, সেতুর কারণে খালের উপর দিয়ে নৌকার মাধ্যমে মানুষের যাতায়াত দুর্ভোগের কথা শুনেছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করবেন এবং কিছু সময়ের জন্য পারাপারে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান।

কেএসটি

আরও পড়ুন