• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৯, ০৯:৪৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৯, ০৯:৫৪ এএম

১২ বছর শিকলবন্দি কৃষিবিদ বজলুর রহমান

১২ বছর শিকলবন্দি কৃষিবিদ বজলুর রহমান

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ধীতপুর ইউনিয়নের টুংরাপাড়া গ্রামে প্রায় ১২ বছর শিকলবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন সাফল্যের সাথে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএসসি, এজি, অনার্স পাস করা মৃত আ. মালেকের পুত্র বজলুর রহমান (৪৮)। 

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) টুংরাপাড়া গ্রামে মৃত মালেকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটি ঘরের দরজা খোলা ভিতরে পাতলা কাপড় গায়ে জড়িয়ে শিকলবন্দি অবস্থায় বসে আছে বজলুর রহমান। মেঝের মাঝখানে একটি বাঁকা লোহার সঙ্গে কয়েকটি তালা অনুমান দেড় ফুট লম্বা শিকল পায়ে লাগানো। ঘরে মধ্যে মলমূত্র ত্যাগ করায় প্রতিদিন ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হয়। অপুষ্টিতে ভোগে তার শরীরে ও চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ পড়েছে। কোন কিছু জানতে চাইলে প্রলাপ বকেন, স্মৃতি নষ্ট হওয়ায় সন্তানদের কথাও কিছু বলতে পারেন না। 

বজলুর রহমানের বৃদ্ধা মা দৈনিক জাগরণকে বলেন, প্রায় ২০/২২ বছর পূর্বে তার ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করা হয়েছে। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর বিয়ে করানো হয়। বিয়ের পর শিফাত ও সুপ্তি নামে দুটি কন্যা সন্তান হয়। পুনরায় খারাপের দিকে গেলে ৫/৬ বৎসরের মাথায় বজলু ও দুই মেয়েকে ফেলে তার স্ত্রী চলে যায়। সে সময় মস্তিষ্ক বিকৃত হওয়ার কারণে নানা রকম তাণ্ডব করায় নিরাপত্তার জন্য ভাইয়েরা তাকে শিকলে বেঁধে ঘরবন্দি করেন।

ঘুমায় কিভাবে জানতে চাইলে তিনি জানান, হাঁটুঘেরে মেঝে উপুর হয়ে কখনো বা বসা অবস্থায়। চাচাদের তত্ত্বাবধানে দুই মেয়ে লেখাপড়া চলাকালীন সিফাতের বিয়ে দেয়া হয়েছে। ছোট বোন সুপ্তি কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। 

এ ব্যাপারে কথা হয় তার সহপাঠি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অধ্যাপক ওমর ফারুক মানিকের সঙ্হে। তিনি জানান, ৮৮/৮৯ ব্যাচে তারা দুজনেই এক সঙ্গে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি, এজি অনার্স ভর্তি হন। বজলু এ সেকশনে সোহরাওয়ার্দী হলে আর তিনি বি সেকশনে আশরাফুল হক হলে অধ্যয়নরত ছিলেন। তিনি জানান, বজলু লেখাপড়ায় বরাবরই এগিয়ে থাকতো। দেখা হলে অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতেন। সেশন জটের কারণে ১৯৯৬ সনে তারা অনার্স ফাইনাল সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হন। পরিবারের লোকজনের বিশেষ করে মায়ের কথা তারা মানসিক রোগের যথেষ্ট চিকিৎসা করে অনেক টাকা পয়সা নষ্ট করেছেন কোন ফয়দা হয়নি। সরকারের কাছে এলাকাবাসীর দাবি বজলুর রহমানকে এ অবস্থা হতে উদ্ধার করে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে একজন কৃষিবিদকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করবেন।

কেএসটি
 

                                                                                       
 

আরও পড়ুন