• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০১৯, ১০:৩৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ৮, ২০১৯, ১০:৫১ এএম

যুবককে নির্যাতন করে মল-মূত্র খাওয়ালো প্রভাবশালীরা 

যুবককে নির্যাতন করে মল-মূত্র খাওয়ালো প্রভাবশালীরা 

বরিশালের হিজলায় এক তেল ব্যবসায়ী যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের পরে মুখে মল-মূত্র ঢেলে দেয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে দেখা যায় যুবকটির পেছন থেকে হাত-পা বেঁধে বুকের ওপর পাড়া দিয়ে জোর করে মল-মূত্র খাওয়ানো হচ্ছে। যুবকটি অনেক চেষ্টা করেও তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।

হিজলার হরিনাথপুর তালতলা জামে মসজিদ রোড নামক স্থানে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। যা নিয়ে গত কদিন ধরেই পুরো হিজলা উপজেলাজুড়ে তোলপাড় চলছে। তবে এ ধরনের কোন ঘটনা ইতিপূর্বে জানা ছিল না বলে দাবি করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

নির্যাতনের শিকার ওই যুবকের পরিচয় খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, তিনি হিজলা উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের হরিনাথপুর বাজার সংলগ্ন টমুচরের বাসিন্দা মহিউদ্দিন বেপারীর ছেলে আজম বেপারী (২৫)। সে হরিনাথপুর লঞ্চ ঘাটের জ্বালানী তেল ব্যবসায়ী।

এছাড়া তাকে যারা নির্যাতন করেছে তাদের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা গেছে। তিনি হলেন- একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল খালেক সিকদারের ছেলে ও হরিনাথপুর লঞ্চ ঘাটের সুপারভাইজার মাহবুব সিকদার। সে স্থানীয় এমপি পঙ্কজ নাথ এর লোক হিসেবে পরিচিত। তার নেতৃত্বেই যুবককে নির্যাতন ও মল-মূত্র খাওয়ানোর ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

তাছাড়া ঘটনার পর থেকেই আজম বেপারী নামের ওই যুবকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও তার পরিবারের দাবি আজম ঘটনার পরে তাবলিক জামায়াতে গেছে। তবে এ বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি তার পরিবারের সদস্যরা।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, ‘আজম বেপারীকে হাত-পা বেঁধে হেরিংবনের রস্তার ওপর সুয়িয়ে রাখা হয়েছে। তার চার দিক ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে ৭-৮ জন লোক। এর মধ্যে একজন আজমের বুকের ওপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়া অপর একজন লোক আজমের পা এবং একজন লোক তার মাথা মাটির সাথে চেপে ধরে আছে।

একটু পরেই বুকের ওপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি বিশেষ পাত্রে মল-মূত্র নিয়ে তা জোর করে আজমের মুখে ঢালার চেষ্টা করছে। তখন আজম অনেক অনুনয় বিনয় এবং ধস্তাধস্তি করেও তাদের থেকে রক্ষা পায়নি। এসময় পাশে দাঁড়িয়ে কিছু লোক ওই ঘটনা উপভোগ করলেও কেউ প্রতিরোধে এগিয়ে আসেনি। আর পুরো ঘটনাটি পাশ থেকে দাঁড়িয়ে কেউ একজন মোবাইল ফোনে ভিডিও করে।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, ‘ঝাঁড়-ফুকের কাজ করে বলে অপবাদ দিয়ে আজম নামের ওই তেল ব্যবসায়ী যুবককে এমন মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে মাহবুব ও তার লোকজন। এমনকি ঘটনার পরে ওই যুবক লোক লজ্জায় মোবাইল ফোন বন্ধ করে তাবলিগ জামায়াতে চলে যায়। তবে সে কোথায় আছে সে সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে পারছে না।

এদিকে, অভিযোগ উঠেছে খবর পেয়ে হিজলার হরিনাথপুর শাওড়া সৈয়দখালী পুলিশ ফাঁড়ির ইন-চার্জ পরিদর্শক তারেক আহসান রাসেল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তিনি ঘটনাটি এড়িয়ে যান।

তবে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে ফাঁড়ি ইনচার্জ পরিদর্শক তারেক আহসান রাসেল এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটেছে বলে জানেন না বলে দাবি করেন তিনি। পরে অবশ্য বলেন, ‘আমি রাতেই (সোমবার) ঘটনাটি শুনেছি। তবে ভিডিও ভাইরালের বিষয়টি আমার জানা নেই। সেটি এখনো আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি। মঙ্গলবার এই বিষয়ে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার ঘটনা আমি শুনেছি। রাতেই স্থানীয়দের মাধ্যমে এ বিষয়ে আমার কাছে খবর আসে। তবে এখন পর্যন্ত ভিডিওটি দেখিনি। থানা পুলিশকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

কেএসটি
 

আরও পড়ুন