কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার প্রথম বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাংলার নারী শিশু শিক্ষার্থীদের শিক্ষার জন্য প্রাথমিক শিক্ষাদান কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ভবনটি এখন শুধুই ইতিহাস।
জানা গেছে, ১৯১৮ সালে বিদ্যালয়টি ভারতের নদীয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তী সময়ে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার একমাত্র বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টি অযত্ন, অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে কালের সাক্ষী হয়ে শতবর্ষী এ বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ অবস্থায় জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে।
তবে, বিদ্যালয়টি এখনও পুরাতন গার্লস স্কুলপাড়া হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। এদিকে, এ বিদ্যালয়টি সংরক্ষণ করে এখানে একটি লাইব্রেরি নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয় সুধীজনরা।
গ্রামের আবুল হাসান রাঙা জানান, উথলী গ্রামে এ বিদ্যালয়টি শুধুমাত্র মেয়েদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা ছিল। এখানে বিভিন্ন স্থান থেকে জমিদার বংশের মেয়েরা এসে লেখাপড়া করত। এ বিদ্যালয়টি নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি মুরব্বিদের কাছ থেকে। আজ সবই স্মৃতি, আর ইতিহাস। ভবনসহ জমিটি বর্তমান উথলী গার্লস স্কুলের নামে থাকায় সাধারণ মানুষ কোনো কিছু করতে পারছে না। তবে সরকারিভাবে যদি পরিত্যাক্ত এ ভবনটি পাঠাগারের ব্যবস্থা করা হয়, তা হলে এ পুরাতন স্কুলটি তার ঐতিহ্য ফিরে পাবে। পাশাপাশি এলাকার যুবক ও প্রবীণরা অবসর সময়ে এখানে বই পড়তে পারবেন।
সরেজমিনে স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৮০ সালের দিকে এ বিদ্যালয়ে বাংলা শিক্ষার পাশাপাশি মেয়েদের আরবি শিক্ষা দেয়া হতো।
ওই গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বন্ধু রক্তদান কেন্দ্রের সম্পাদক নিলয় হাসান জানান, পুরোনো এ বিদ্যালয়টি আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য স্মৃতি। এই গ্রামে তেমন একটি ভালো পাঠাগার নেই, যেখানে যেয়ে এলাকার যুবক বা প্রবীণ ব্যক্তিরা বই পড়বেন। যদি এ পুরেনো বিদ্যালয়টি সংস্কার করে একটি পাঠাগার নির্মাণ করা যায়, তা হলে বিদ্যালয়টি একদিকে যেমন তার ঐতিহ্য বহন করবে, অপর দিকে গ্রামের তরুণ-যুবকেরা বাজে আড্ডা না দিয়ে পাঠাগারে বসে অবসর সময়ে বই পড়তে পারবেন।
উথলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সালাউদ্দিন কাজল জানান, পুরোনো ভবনটি অনেক দিন থেকে পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে আছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে স্মৃতিবিজড়িত এ স্কুলটির ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য একটি পাঠাগার নির্মাণের ব্যবস্থা করব।
উথলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, এখানে একটি পুরোনো বিদ্যালয় আছে, এটি আমি জানি। এটি উথলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের নামে থাকায় সাধারণ মানুষ কোনো কিছু করতে পারছেন না। তবে, যদি স্কুল কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়, তা হলে ওখানে একটি পাঠাগার নির্মাণ করলে ভালো হবে। আর এর জন্য আমার পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।
টিএফ