• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০১৯, ০১:০৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৮, ২০১৯, ০১:০৭ পিএম

মোংলা বন্দর আধুনিকায়নে ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

মোংলা বন্দর আধুনিকায়নে ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প
মোংলা বন্দর -ছবি : জাগরণ

মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ বাড়াতে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার আধুনিকায়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পদ্মা সেতু, রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, মোংলা-খুলনা রেললাইন ও খান জাহান আলী বিমানবন্দর চালু হলে এ বন্দরের উপর যে চাপ বাড়বে তা সামলাতেই সক্ষমতা বৃদ্ধির এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, বন্দরের কার্যক্রম গতিশীল করতে সম্প্রতি জার্মানি থেকে অত্যাধুনিক একটি মোবাইল হারবার ক্রেন আনার পর এরইমধ্যে এর সংযোজন ও অপারেশনাল কাজ শুরু করা হয়েছে। এছাড়া বন্দরের জেটি সম্প্রসারণসহ নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে সক্ষমতা বাড়াতে ‘মোংলা বন্দর আধুনিকায়ন’ নামে যে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে সেটি বন্দর প্রতিষ্ঠার পর ও বন্দরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প।

 বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ সমুদ্র বন্দরটি ২০০১ সাল থেকে লোকসানে পড়ে প্রায় মৃত বন্দরে পরিণত হয়েছিল। দেশি-বিদেশি আমদানি-রফতানিকারকরা ওই সময়ে এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ২০০৭ পর্যন্ত চলে বন্দরের এই রুগ্ন দশা।

সৃষ্টির শুরুতে বেশ কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছিল মোংলা বন্দর। সেসময় নোঙ্গর করা সারি সারি জাহাজের আলোর ঝলকানিতে রাতে পশুর নদী মনোরম হয়ে উঠতো। তবে মাঝামাঝি সময়ে সেই আলোর ঝলকানিতে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। সেই অন্ধকার কাটিয়ে আবারো আলোতে ফিরেছে এ বন্দর। যেখানে দিনের পর দিন পশুর চ্যানেল জাহাজশূন্য পড়ে থাকতো, সেখানে এখন ৭০ থেকে ৮০টি জাহাজ অবস্থান করছে। ক্রমেই দৃশ্যপট পাল্টাচ্ছে এ বন্দরের।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. মোস্তফা কামাল বলেন, গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এ বন্দরে ৯১২টি বিদেশি জাহাজ ভিড়েছে। কার্গো হ্যান্ডেলিং হয়েছে প্রায় ১ কোটি ১৩ লাখ মেট্রিক টন। আর কন্টেইনার আনা নেয়া হয়েছে প্রায় ৫৮ হাজার টিউজ (২০ ফিট সমকক্ষ কন্টেইনার)। এই অর্থবছরে পাথর, সার আর কয়লা, রিকন্ডিশন্ড গাড়ি, মেশিনারি ও ক্লিংকার পণ্য সবচেয়ে বেশি এসেছে।

 মোংলা বন্দরের ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, জার্মানি থেকে মোংলা বন্দরে যে মোবাইল হারবার ক্রেন এনেছে তাতে তারা উপকৃত হচ্ছেন। এখন তারা কন্টেইনার ভ্যাসেল থেকে পণ্য আনলোড করতে পারছেন। কিন্তু এর সঙ্গে প্রাইম ওভার, মুভমেন্ট করার জন্য ফর্কলিফ্ট না থাকার কারণে একটু অসুবিধা হচ্ছে। বিদেশ থেকে যে কন্টেইনারগুলো আসছে তা চাহিদানুযায়ী শিপমেন্ট করার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কন্টেইনার ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থাও বাড়ানো প্রয়োজন। 

তিনি আরও জানান, মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এই মুহূর্তে বহির্নোঙ্গরে ড্রেজিং খুব জরুরি। দীর্ঘদিন ধরে এই ড্রেজিং প্রকল্প ঝুলে আছে। বহির্নোঙ্গরে প্রায় ৭ কিলোমিটার নদীপথ ড্রেজিং না হওয়ায় এ বন্দরে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ প্রবেশ করানো সম্ভব হয় না।

এদিকে দ্রুত বহির্নোঙ্গরে ড্রেজিং না হলে বন্দরের কোনো প্রকল্পেরই সফলতা আসবে না বলে জানিয়েছেন অপর বন্দর ব্যবহারকারী মেসার্স নুরু অ্যান্ড সন্স এর সত্ত্বাধিকারী এইচ এম দুলাল ও ইউনিক মেরিটাইম লিমিটেডের পরিচালক মো. বদিউজ্জামান টিটু।

তিনি বলেন, ড্রেজিং এখন এ বন্দরের বড় সমস্যা। ড্রেজিং না হওয়ায় বড় কোনো জাহাজই এ বন্দরে ঢুকাতে পারছেন না তারা। বন্দরের বহির্নোঙ্গরে বিদেশি বড় জাহাজ অবস্থান করিয়ে সেখান থেকে ছোট লাইটারেজে করে পণ্য খালাস করতে হয়। যা অত্যন্ত ঝুঁকি এবং ঝামেলার কাজ। ড্রেজিং না হওয়ায় নাব্য সংকটের কারণে জাহাজগুলো উপরে আসতে পারে না। এজন্য বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হলে আগে এই ড্রেজিং করতে হবে বলে এ দুই ব্যবসায়ী জানান।


 মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম মোজাম্মেল হক বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে মোংলা হবে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের বড় কেন্দ্র। তাই এর আগেই নিজেদের সক্ষমতা বাড়িয়ে নিতে চান তারা। এজন্য বন্দরের নাব্য ঠিক রাখতে আমরা বহির্নোঙ্গরে ড্রেজিং করবো।

তিনি আরও বলেন, মোংলা বন্দরে সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এই মূহূর্তে অনেকগুলো প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রথমত, সমুদ্র থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত ১৪৫ কিলোমিটারের পশুর নদীতে ড্রেজিং প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ড্রেজিং সম্পন্ন হলে ৯ থেকে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ এ বন্দরে অনায়াসেই ঢুকতে পারবে। বহির্নোঙ্গরে ড্রেজিং প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদন হওয়া মাত্র আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে এর কাজ শুরু হবে। এছাড়া সক্ষমতা বাড়াতে শুধু ড্রেজিং করলেই হবে না, বন্দরের ভেতরের অবকাঠামো আরও উন্নত করতে হবে। বন্দরের জেটি, ক্রেন, জেটি ইয়ার্ড ও রাস্তাঘাটের বেশ কিছু দুর্বলতা আছে। এগুলো ঠিক করতে বড় বড় প্রকল্পের অনুমোদন হয়ে আছে, আরও ৪টি বড় প্রকল্প এ বছরের ডিসেম্বরে অনুমোদন পাবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হচ্ছে ‘মোংলা বন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্প’। যা টাকার অঙ্কে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- সম্প্রসারণ নতুন দুটি জেটি, গ্যাংট্রি ক্রেন, ইয়ার্ড, মাল্টি পারপাস কার ইয়ার্ড, বন্দর ভবন সম্প্রসারণ, অফিসার স্টাফদের বাসভবন, মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স, শিপ ইয়ার্ড ও ফ্লাইওভারসহ প্রভৃতি। এসব প্রকল্প হয়ে গেলে এ বন্দরের সীমানা আরো ৪ কিলোমিটার সম্প্রসারণ হবে, যা বর্তমানে আছে এক কিলোমিটার। আগামী ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলেও বন্দরের চেয়ারম্যান জানান। 

একেএস
 

আরও পড়ুন