• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০১৯, ০৩:০৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১০, ২০১৯, ০৩:১৭ পিএম

রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ দীর্ঘ দ্বন্দ্বের সমাপ্তি

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে অযোধ্যা মামলার রায়

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে অযোধ্যা মামলার রায়

নানা নাটকীয়তা এবং চরম উৎকণ্ঠার মাঝে শেষ পর্যন্ত ভারতের রাম জন্মভূমি খ্যাত অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে অযোধ্যা মামলার রায় দিলেন সর্বোচ্চ আদালতের পাঁচ বিচারপতি। শনিবার (৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টায় বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এর নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।   আনন্দবাজার

এই রায় ঘোষণার পর ভারতের আভ্যন্তরিণ পর্যায় থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন মহলেও শুরু হয় এ রায়ের পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। আলোচিত রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলার এই রায় নিয়ে শনিবার সরব ছিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও। এক নজরে দেখে নেয়া যাক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থায় অযোধ্যা তথা রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলার রায় প্রসঙ্গে বিশেষ কয়েকটি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থার প্রকাশিত সংবাদ সমূহ।

... মামলার প্রেক্ষাপট ও রায়

ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের দেয়া ঐতিহাসিক এই রায়ে জানিয়েছে, বাবরি মসজিদ যেখানে ছিল সেই স্থানে শর্তসাপেক্ষে জমি পাবে হিন্দুরা। তবে মসজিদ নির্মাণের জন্য মুসলিমদের বিকল্প জমি বরাদ্দের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। রায় ঘোষণা করতে গিয়ে প্রথমেই জানালেন, মামলার অন্যতম পক্ষ শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের কোনও দাবিই জন্মায় না ওই বিতর্কিত জমির উপরে।

পরে জানানো হল, আর এক মামলাকারী নির্মোহী আখড়ার দাবিও খারিজ করে দেওয়া হচ্ছে। অতএব আইনি লড়াই পড়ে রইল রামলালা বিরাজমান এবং সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের। সে লড়াইয়ে বিতর্কিত জমির অধিকার পেলেন রামলালা বিরাজমান। অযোধ্যারই অন্য কোনও অংশে মসজিদ তৈরির জন্য বিকল্প জমির ব্যবস্থা করার নির্দেশও দিল সুপ্রিম কোর্ট।

পরাধীন ভারতে আইনি লড়াইটা শুরু হয়েছিল। স্বাধীনতার প্রায় ৭২ বছর পরে শেষ হল। অবশ্য সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড এই রায়ে যে ভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করতে শুরু করেছে, তাতে টানাপড়েন শেষ হল বলা যায় কি না, তা নিয়ে সামান্য হলেও সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কিন্তু ঐতিহাসিক মামলা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ যে রায় এ দিন দিল, তা যে ঐতিহাসিক এবং মাইলফলক-সম, তা নিয়ে সংশয় কমই।

... আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বহুলালোচিত রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলার রায়

হিন্দুদের তো বটেই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও জয়। অযোধ্যা রায়কে এ ভাবেই ব্যাখ্যা করল মার্কিন মিডিয়া। ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’, ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর মতো অধিকাংশ দৈনিকের এক সুর, এই রায় মোদীর জয় এবং তাঁর হাত আরও শক্ত করবে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলির বক্তব্যের সুরও প্রায় এক। যদিও এই রায়ের হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে সংঘাত আরও বাড়বে— এমন মতও প্রকাশ করেছে পাক মিডিয়ার একাংশ।

এই রায় প্রকাশের খবর বিশ্বের অধিকাংশ সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় ঠাঁই করে নেয়। এই রায়ে ভারতের 'সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোদীরও জয় হয়েছে' এমনই বলছে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম। একই সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমের একাংশ বলছে, এই রায় ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে আঘাত হানতে পারে।

.................................... WORLD MEDIA ON AYODDHA VERDICT

সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস

 ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ যেমন লিখেছে, ‘কয়েক শতাব্দীর বিতর্কিত জমি নিয়ে শনিবার ভারতের সুপ্রিম কোর্ট হিন্দুদের পক্ষে রায় দিয়েছে। মোদী এবং তাঁর অনুগামীরা যে নতুন করে ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ ভিত্তি থেকে সরিয়ে হিন্দুত্বের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে, তার পক্ষে এটা বড় জয়।’ অর্থাৎ মোদী এবং তাঁর অনুগামীদের জয় বলে কার্যত হিন্দুত্ব লাইনের সমালোচনাই করেছে মার্কিন এই দৈনিক।

সূত্র: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট

 টাইমসের সঙ্গে প্রায়ই একই সুরে কন্ঠ মিলিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অপর এক বার্তা সংস্থা ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’। তবে ‘মোদীর বড় জয়’-এর পাশাপাশি ভারতকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’র পরিবর্তে ‘হিন্দু’ রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করায় তাদের প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ভারতীয় বার্তা সংস্থা আনন্দবাজার। এই সংক্রান্ত প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘মুসলিমদের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বিতর্কিত জমি হিন্দুদের পুরস্কার দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এটা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বড় জয়।’ আরও বলা হয়েছে, ‘হিন্দু জাতীয়বাদী ও ভারতীয় জনতা পার্টি দীর্ঘদিন ধরেই অযোধ্যায় হিন্দু দেবতা রামের মন্দির তৈরির চেষ্টা করে আসছে।’ তবে একই সঙ্গে প্রাথমিক ভাবে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ নয়’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

 ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর ব্যাখ্যাও প্রায় একই রকম। অযোধ্যা রায়কে মোদীর লোকসভা ভোটে জয়ের সঙ্গে তুলনা টানা হয়েছে। জয়ের সঙ্গে তুলনা টানা হয়েছে। প্রতিবেদনের মূল বক্তব্য, ভোটে বিপুল জয়ের পর আদালতেও বিরাট জয় পেলেন নরেন্দ্র মোদী। আর এক ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি অবশ্য মূল ঘটনার রিপোর্টের উপরেই জোর দিয়েছে। খুব বেশি মতামত প্রকাশ করেনি।

সূত্র: আল জাজিরা ও সিএনএন

• পাকিস্তানি দৈনিকগুলিতেও স্বাভাবিক ভাবেই প্রাধান্য পেয়েছে অযোধ্যা রায়ের খবর। অধিকাংশ সংবাদপত্র ও টিভিতে শিরোনামে অযোধ্যার বিতর্কিত জমির রায়। তবে ‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর জয়’-এর চেয়েও পাক মিডিয়ায় গুরুত্ব পেয়েছে হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক। ‘দ্য ডন’-এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের রায় ‘ভারতের যুযুধান হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।’ জিও টিভির রিপোর্টে অবশ্য শুধু রায়ের অংশই বেশি উল্লেখ করা হয়েছে। ‘দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন’ আবার অযোধ্যার রায়কে ‘হিন্দু জাতীয়বাদী এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর জয়’ বলে উল্লেখ করেছে।

তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার

এসকে

আরও পড়ুন