• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০১৯, ০১:৩০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১১, ২০১৯, ০১:৩০ পিএম

পানি নেই, মাছ নেই

পানি নেই, মাছ নেই

গত কয়েক বছর থেকে রতনাই নদীতে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। সারা দিন জেলেরা নদীতে জাল ফেলে মাছ না পেয়ে শূন্য হাতে ফিরছে। এতে পরিবারের ভরণ পোষণের ব্যয়ভার নিতে অনেক জেলেকেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, রতনাই নদীতে হাঁটু পানি থাকায় জেলেদের জালে আর আগের মতো মাছ মিলছে না। পানি নেই, মাছ নেই। সংসার চলবে কি করে। ফলে সামান্য মাছ নিয়ে প্রতিদিনই অনেক জেলে ডাঙ্গায় ফিরে আসছেন। অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের। কষ্টে জীবন চলছে জেলে ও মাছ ব্যবসার সাথে জড়িত লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের রতনাই নদী সংলগ্ন বাবুপাড়া জেলেপল্লীর ৩৫টি জেলে পরিবারের এখন মাছের আকালে চলছে দুর্দিন। 

মহাজনের দায়-দেনা সত্ত্বেও সংসার চালাতে ফের একাধিক এনজিও থেকে লোন নিয়ে কিস্তি শোধ করতে পারছে না তারা। আবার সংসারের সচ্ছলতার জন্য মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে দাদন নিয়ে স্কুল পড়ুয়া কন্যা সন্তানকে বিয়ে দিচ্ছেন। ফলে দেনার দায়ে অনেক জেলে এখন এলাকা ছাড়া। এতে স্কুল পড়ুয়া মেয়েরা বাল্যবিয়ে শিকার হচ্ছে এবং ছেলে শিশুরা অভাবের কারণে শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়ছেন এবং ওই পল্লীতে বেশি সংখ্যক পরিবারের মেয়েরা বাল্য বিয়ের শিকার হচ্ছেন। এছাড়াও বাবুপাড়া জেলেপল্লীতে স্বাস্থ্যসম্মত কোন টয়লেট নেই। যত্রতত্রভাবে মলমূত্র ত্যাগ করায় পরিবেশ দূষণে ভুগছে বসবাসরত বাসিন্দারা। সামান্য বৃষ্টিতে টিনের চাল দিয়ে পানি পড়ছে। টিনের উপর পলিথিন দিয়ে বৃষ্টি থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে তারা। সেখানে স্থাপিত নলকূপের মধ্যে অধিকাংশ বিকল। নিচু এলাকা হওয়ার কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায় ঘরগুলো। ফলে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে নারী ও বৃদ্ধারা। সবমিলে ওই এলাকার বাসিন্দাদের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। 

চল্লিশোর্ধ জেলে নিবারণ দাসের তিন কন্যা ও স্ত্রী নিয়ে তার পরিবার। থাকেন রতনাই নদী সংলগ্ন বাবুপাড়া জেলেপল্লীতে। এ পরিবারটির জীবন চলে রতনাই নদীতে মাছ ধরে। আর এ মাছ ধরার কাজে জেলে নিবারণ দাস মহাজন, ব্যাংক আর বিভিন্ন এনজিও ঋণের জালে আটকা। তবুও মাছ ধরে কোনমতে চলছিল এ পরিবারটির ভরণ পোষণ। 

নিবারণ দাস বলেন, ত্রিশ বছর রতনাই নদীতে মাছ ধইরা খাই, এবার আকাল পড়ছে। হারাদিন (সারাদিন) জাল পাইত্যা সামান্য মাছ পাইতেছি। আমাগো ক্যামনে দিন চলবে আল্লায় জানে। সংসারে পাঁচজনের খাওন জোগাইতে মুহে রক্ত উইঠা যায়। যেদিন মাছ পাই হেদিন দুইডা জোডে আর যে দিন পাইনা হে দিন পোলা মাইয়া লইয়া অর্ধাহারে অনাহারে থাহি। রতনাই নদী মোগো বাঁচায় আবার রতনাই নদী মোগোই মারে।  তিনি আক্ষেপ করে জানান, পানির অভাবে নদীতে মাছ না থাকায় তার সংসারের দুর্দিন চলছে। অভাবের কারণে বড় মেয়ে ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া রিনা রানীকে গত বছর মাহাজনদের কাছ থেকে তিনি ত্রিশ হাজার টাকা দাদন নিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ঋণের চাপে গা ঢাকা দিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। এরকম অভাব চলতে থাকলে আবার দাদন নিয়ে মেজো মেয়ে ৭ম শ্রেণি পড়ুয়া বিনা রানীকে বাল্য বিয়ে দিবেন। যাতে কিছুটা সংসারের সচ্ছলতা আসে। 

একই পল্লীর সুবাশ চন্দ্র রায় বলেন, রতনাই নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার ও ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাই। অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করে ইতোমধ্যে বড় মেয়ে ১৪ বছর বয়সে বিয়ে দিয়েছি। তিনি আরো জানান, দখল দূষণ ও অপরিকল্পিতভাবে রতনাই নদীর খাল বিল ব্যবহার করায় আজ এ অবস্থা।  নিবারণ দাস ও সুবাশ চন্দ্র রায়ের মতো ওই পল্লীর জীবনযুদ্ধে লিপ্ত সকলেরই জীবন কাহিনী প্রায় অভিন্ন।    

এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারুক হাসান জানান, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অভাবে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও মৎস্য খাতে সফলতা হচ্ছে না। তবে, আমাদের পক্ষ থেকে বাবুপাড়া জেলে পল্লীর জেলেদের সকল ধরনের সহযোগিতা করা হয় বলে তিনি দাবি করেন। 

কেএসটি

আরও পড়ুন