২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত বজ্রপাতে সারাদেশে ৭৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। যার মধ্যে ৭০ জনই মারা গেছেন লকডাউনে থাকা এপ্রিল মাসে। অবিশ্বাস্য হলেও এবার শীতকালেও বজ্রপাতে ৩ জন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (৭ মে) সকালে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় লকডাউনের দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম।

সংগঠনের গবেষণা সেলের প্রধান আবদুল আলিম সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন।

সংগঠনটি বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ টেলিভিশনের স্ক্রল থেকে তথ্যগুলো সংগ্রহ করেছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।

এতে জানান হয়, চলতি বছরের ৪ মাসে নিহতের মধ্যে ১০ জন নারী, ৩ জন শিশু এবং ৬৮ জনই পুরুষ। নারী ও পুরুষের মধ্যে ৩ জন শিশু এবং ৯ জন কিশোর নিহত হয়েছে। এ চার মাসে বজ্রাঘাতে আহত হয়েছেন ২১ জন। তার মধ্যে ১৫ জন পুরুষ এবং ৬ জন নারী রয়েছে। নারী ও পুরুষের মধ্যে ২ জন কিশোর রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সাধারণত জানুয়ারি মাসে প্রচন্ড শীত থাকায় এ মাসে বজ্রপাত হয় না। তবে এবার কনকনে শীতের মধ্যেও জানুয়ারি মাসে বজ্রপাতে নিহত হয়েছে ৩ জন। তারা সবাই পুরুষ। ফেব্রুয়ারি মাসে কোনও হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও মার্চ মাসে ৬ জন এবং এপ্রিল মাসে ৭০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

অন্যদিকে মার্চ মাসে ২ জন নারী এবং ৪ জন পুরুষের মৃত্যু হয়েছে। একই সঙ্গে মার্চ মাসে আহত হয়েছেন ৬ জন। এর মধ্যে ২ জন পুরুষ এবং ৪ জন নারী।

এপ্রিল মাসে মোট নিহত হয়েছেন ৭০ জন। এর মধ্যে নারী ৮ জন এবং ৬২ জনই পুরুষ। নারী ও পুরুষের মধ্যে শিশু ৩ জন, কিশোর ৭ জন এবং কিশোরী ২ জন। এছাড়া এপ্রিল মাসে বজ্রাঘাতে মোট ১৫ জন আহত হয়েছেন। তার মধ্যে ১৩ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী।

প্রাণহানির মাধ্যমও তুলে ধরেছেন তারা। যেখানে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি ৪০ জন নিহত হয়েছে কৃষি কাজ করার সময়। নৌকায় বসে মাছ ধরার সময় ২ জন। মাঠ থেকে গরু আনার সময় নিহত হয়েছে ১২ জন। আম কুড়ানোর সময় ১ জন। ঘরে অবস্থানকালীন ৪ জন। পাথর উত্তোলনের সময় ২ জন। মাঠে খেলা করার সময় ১ জন। বাড়ির আঙিনায় খেলা করার সময় ২ জন। ফাঁকা রাস্তায় চলার সময় ৪ জন। রিকশা চালানোর সময় ১ জন। গাড়িতে থাকাকালীন ২ জন। অন্যদিকে চিকিৎসা নিয়ে ফেরার সময়, নির্মাণ কাজ করার সময় ও হাওরে অবস্থানকালেসহ বিভিন্ন সময় বজ্রপাতে নিহত হয়েছে ৬ জন।

চলতি বছরের প্রথম চার মাসে নিহতের মধ্যে শরীয়তপুরে- ৩ জন, কিশোরগঞ্জে- ২ জন, মুন্সিগঞ্জে-২ জন, রাজবাড়ী-১ জন, মাদারীপুর-৩ জন, ফরিদপুর-৩ জন, কুমিল্লা-১ জন, কক্সবাজার-৫ জন, খাগড়াছড়ি -১ জন, নোয়াখালী-৩ জন, চাঁদপুর-১ জন, লক্ষীপুর-৪ জন, সিরাজগঞ্জ-১ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ জন, নাটর-১, নওগাঁ-১, খুলনা-১, যশোর-২ জন, নড়াইল-১, চুয়াডাঙ্গা-১, মাগুরা-১, ঝিনাইদহ-১, পটুয়াখালী-৭, পিরোজপুর-২, ভোলা-১, বরগুনা-১, সিলেট-৭, হবিগঞ্জ-২, সুনামগঞ্জ-৪, দিনাজপুর-১, গাইবান্ধা-৫, ময়মনসিংহ-৩, শেরপুর-১, জামালপুর-১ ও নেত্রকোনায় ৪ জন। পটুয়াখালী ও সিলেট জেলায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

এর আগে ২০১৯ সালে সারাদেশে বজ্রপাতে নিহত হন ২৪৬ জন। এর মধ্যে ৩০ জন নারী, ৬ জন শিশু, ৮ জন কিশোর-কিশোরী এবং ২০২ জনই পুরুষ ছিল বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

বজ্রপাত বৃদ্ধির কারণ তুলে ধরে সংগঠনের প্রধান নির্বাহী রাশিম মোল্লাহ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার ধরন পরিবর্তন, লম্বা গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, আকাশে কালো মেঘের পরিমাণ ও মেঘে মেঘে ঘর্ষণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে বজ্রপাত। তাপমাত্রা গড়ে এক ডিগ্রি বেড়ে গেলে বজ্রপাত ১০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইদানীং মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে বা ঘন কালো মেঘের ওপরের ও নিচের অংশ দুটি পুল হিসেবে প্রবাহিত হয়। এই কারণে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে বজ্রপাতের সৃষ্টি হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কালো মেঘের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় হঠাৎ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে বজ্রপাতের পরিমাণ। 

বজ্রপাতের সময় করণীয় কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। 

তারা বলেন, বিশেষ করে যে স্থান বা বস্তু যত উঁচু সে স্থান মেঘের তত সন্নিকটে থাকায় সেখানে বজ্রপাতের সম্ভাবনা তত বেশি বলে জানিয়ে, খোলা জায়গা, বাড়ির ছাদ কিংবা উঁচু স্থানে অবস্থান করলে দ্রুত সেখান থেকে নেমে নিরাপদ স্থানে যাওয়া, বজ্রপাতের সময় জানালার কাছে না থাকা, পায়ে রাবারের স্যান্ডেল পরে থাকা এবং পানি ও যে কোনও ধাতব-বস্তুর স্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে। পুকুর বা জলাশয়েও থাকা যাবে না।

এসএমএম