• ঢাকা
  • বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০১৯, ০৬:০৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৫, ২০১৯, ০৬:০৮ পিএম

হংকংয়ে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে চীনের হুঁশিয়ারি

হংকংয়ে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে চীনের হুঁশিয়ারি

হংকংয়ের গণতন্ত্রকামীদের বিক্ষোভ এখনো অব্যাহত আছে। অতীতের মতো সোমবার (৫ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকাল থেকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির কেন্দ্রীয় সড়কগুলোর দখল নেয় হাজার হাজার জনগণ। এর আগে রোববারই দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে সৃষ্ট সংঘর্ষের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফের বিক্ষোভের পাশাপাশি ধর্মঘটের ডাক দেন আগত বিক্ষোভকারীরা। এ সময় সরকার বিরোধী স্লোগানে মুখোর হয়ে উঠে গোটা এলাকা। যদিও আগামীতে এই বিক্ষোভ অব্যাহত থাকলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকি অনেক আগে থেকেই দিয়ে রেখেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র চীন। যার অংশ হিসেবে এবারও বিক্ষোভকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। সোমবার কর্তৃপক্ষের বরাতে চীনা গণমাধ্যম জানায়, বেইজিং এখন থেকে হংকং ইস্যুতে আর হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।

রোববার (৪ আগস্ট) চীনের এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘হংকং ইস্যুতে আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার অলস বসে থাকবে না; এমন পরিস্থিতি আর চলতে দেয়া যায় না। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, হংকং সমস্যার সমাধান সম্ভব; তবে আগে বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে।’

টানা নয় সপ্তাহ যাবত চলমান বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে কার্যত অচল হয়ে উঠেছে হংকং। আসামি প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে গত জুনে আন্দোলন শুরু করে দেশটির গণতন্ত্রপন্থিরা। পরবর্তীতে এ দাবির প্রেক্ষিতে সৃষ্ট বিক্ষোভের জেরে হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম বিলটিকে ‘মৃত’ ঘোষণা করেন। যদিও তখন তিনি এটিকে পুরোপুরি বাতিল করেননি। মূলত এর পরপরই ল্যামের তাৎক্ষণিক পদত্যাগ ও জাতীয় নির্বাচন আয়োজনসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলনে মাঠে নামেন গণতন্ত্রকামীরা; যা এখনো অব্যাহত আছে। যার অংশ হিসেবে সোমবার সড়ক দখল করে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভের পাশাপাশি ফের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।

এ দিকে চলতি সপ্তাহেই হংকংয়ের বিক্ষোভকারীদের হুশিয়ারি দিয়ে দেশটিতে মোতায়েন চীনা পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) কমান্ডার চেন ডাওজিয়াং মাত্র ৩ মিনিটের একটি ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন। যেখানে তিনি বলেন, ‘আগামীতে এই অশান্তি চলতে থাকলে শক্ত হাতে বিষয়টির মোকাবিলা করা হবে।’ অপর দিকে দেশটির গণতন্ত্রপন্থি অ্যাকটিভিস্টরা এরই মধ্যে তাদের টুইট বার্তায় রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাসের ব্যবহৃত খোলসের ছবি প্রকাশ করেছেন। যেখানে তারা জানান, সেগুলো বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ ব্যবহার করেছে। টুইট বার্তায় তারা লিখেন, ‘এসব অস্ত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা।’ তাছাড়া গত বেশ কিছুদিনে সড়কে আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংস আচরণের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

প্রায় ১৫০ বছর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের অধীনে থাকার পর ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই লিজ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় অঞ্চলটি শক্তিশালী চীনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ঐতিহাসিক এই দিবসটির ২২ বছর পূর্তিতে গত ১ জুলাই আন্দোলনে সড়ক অবরোধ করেন গণতন্ত্রকামী লোকজন। প্রতি বছরের এই দিনে কর্মকর্তারা এক দিকে সরকারি ভবনগুলোতে উৎসব পালন করেন আর অপর দিকে গণতন্ত্রকামীরা অবস্থান নেন রাজপথে।

দীর্ঘদিন যাবত হংকং চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হলেও ২০৪৭ সাল থেকে অঞ্চলটিকে স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দেয় দেশটি। এর আগে গত মাসেও চীনপন্থি এক বিল নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে ইউরেশিয়ার দক্ষিণপূর্ব উপকূলের এই দেশ। মূলত চীন এবং তাইওয়ানে আসামি প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত প্রস্তাবিত একটি বিলের বিপক্ষে তখন গোটা দেশে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এতে আন্দোলনকারীদের মূল ক্ষোভ দাঁড়ায় চীনের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে। বেইজিংয়ের দুর্বল আইন ব্যবস্থা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ডের কারণে হংকংয়ের সাধারণ মানুষ সেখানে কাউকে ফেরত পাঠাতে চাইছেন না। তাদের মতে, পার্লামেন্টে বিলটি পাস হলে তা অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে চীনা হস্তক্ষেপের সুযোগ অনেকাংশে বাড়িয়ে দেবে।

সূত্র : রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান

এসজেড

আরও পড়ুন