• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০১৯, ০৯:৩০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ৪, ২০১৯, ০৯:৩০ পিএম

ভেসে উঠছে মরা মাছ, মরা কচ্ছপ

ছট দূষণের জেরে বিষাক্ত সরোবর

ছট দূষণের জেরে বিষাক্ত সরোবর
কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর - ফাইল ছবি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও প্রশাসনের প্রচ্ছন্ন মদতে আদালতের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শনিবার (২ নভেম্বর) ছট পূজার আচার পালনের নামে কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে রবীন্দ্র সরোবরের তালা ভেঙে তাণ্ডব চালানো হয়। এরপর গত ৪৮ ঘণ্টা ঘরে সেই তাণ্ডবের ছবি একাধিক নিউজ চ্যানেলে দেখানো হয়েছে। পরিবেশবিদ থেকে শুরু করে বহু মানুষ আপত্তি ও প্রতিবাদ জানিয়ে ফোন করেছেন পুলিশ ও প্রশাসনের পদস্থ কর্তাদের। কিন্তু তাতেও পুলিশের ভূমিকার কোনো পরিবর্তন হয়নি। রোববারও দিনভর সরোবরের পানিতে ফেলা হয়েছে ফুল-মালাসহ পূজার নানা উপকরণ। ছট দূষণের সরাসরি প্রভাব সোমবার প্রত্যক্ষ করা গেছে রবীন্দ্র সরোবরে। সোমবার সকালে ওই সরোবরে ভেসে উঠেছে মরা মাছ এবং মরা কচ্ছপ। বিষাক্ত পানির নমুনা তুলে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে কলকাতা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।

রবীন্দ্র সরোবরে মাছের চাষ হয়। রয়েছে কিছু কচ্ছপও। সোমবার সকালে সরোবরে মরা মাছ ও কচ্ছপ ভাসতে দেখে তুমুল প্রতিক্রিয়া হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশবিদদের মধ্যে। পরিবেশবিদদের বেশ কয়েকটি সংগঠন এই ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের কৈফিয়ত দাবি করেছে। আদালতের নির্দেশ এড়িয়ে গিয়ে রবীন্দ্র সরোবরের মতো কলকাতার একটি সিগনেচার ল্যান্ডমার্কে এই দূষণের দায় কে নেবে, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

শনিবারের পর অনেকেই মনে করেছিলেন- রোববার হয়তো কলকাতার পুলিশ সক্রিয় হয়ে আদালতের রায় কার্যকর করার চেষ্টা করবে। কিন্তু এদিনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ ছিল ঠুঁটো জগন্নাথ। উল্লেখ্য, ছট পূজার আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, কেউ যদি ছটের সময় নিয়ম লঙ্ঘন করে জলাশয় ব্যবহার করেন, তাহলে তাদের ওপর পুলিশ লাঠি বা গুলি চালাবে না। তার ওই মন্তব্যের পর পুলিশ নিষ্ক্রিয় থেকে যেনতেনপ্রকারেণ সেই বার্তা কার্যকর করার চেষ্টা শুরু করে। পরোপুরি নিষ্ক্রিয় থেকে তারা সুযোগ করে দিয়েছে ছট পূজার অছিলায় রবীন্দ্র সরোবরসহ কলকতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার একাধিক জলাশয়ে লাগামহীন দৌরাত্ম্যের।

রোববার রবীন্দ্র সরোবরে পুলিশ উপস্থিত ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পুলিশ দেখেও কিছু দেখেনি। রোববার থেকেই রবীন্দ্র সরোবর পরিষ্কার করার কাজ শুরু করেছেন পৌরসভার কর্মীরা। তবে সরোবরের ওপরে ভাসতে থাকা তেল ও ঘি কীভাবে সরাবেন তা ভেবে কূল করতে পারছেন না তারা। এরইমধ্যে ছট পূজার আয়োজকদের কয়েকজন গত সপ্তাহে (বৃহস্পতিবার) পোস্তায় মুখ্যমন্ত্রী কী বলেছিলেন, তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তাদেরই একজন বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী সেদিন যা বলেছিলেন তাতে আমরা বেশ উৎসাহিত বোধ করেছি। মমতা বলেছিলেন, দুর্গাপূজার বিসর্জনে, ছট পূজায় মানুষ গঙ্গার ঘাটে যেতে পারবেন না বলে আদালত রায় দিয়েছে। তাহলে মানুষ যাবে কোথায়? তিনি এ-ও বলেছিলেন, বহু মানুষ এসব নির্দেশ সম্পর্কে জানতেই পারেন না। তাই কিছু মানুষ যদি না জেনে অন্যত্র চলে যান, তাহলে কি লঠিপেটা করব? নাকি গুলি চালাতে বলব। তার চেয়ে আদালত আমাকেই জেলে পুরে দিক।

এদিকে রবীন্দ্র সরোবর ছাড়াও কলকাতার আরও বেশ কয়েকটি বড় জলাশয়ের আবর্জনা সাফ করতে প্রশাসনের সঙ্গে হাত লাগিয়েছেন স্থানীয় ক্লাব ও বাসিন্দারা। এর পাশাপাশি পরিবেশবিদরা প্রস্তুত হচ্ছেন রবীন্দ্র সরোবরের ছট দূষণের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের গ্রিন বেঞ্চে মামলা দায়ের করতে। তাদের বক্তব্য, পরিবেশ বাঁচাতে পুলিশ ও প্রশাসনের এই নিস্পৃহ ভূমিকা আদালত অবমননারই সামিল।

এফসি

আরও পড়ুন