দুর্গাপূজার পর থেকেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গুর থাবা। এই পরিস্থিতিতে শুক্র ও শনিবারের টানা ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে মশাবাহিত রোগ আরও বাড়বে, এমনটাই আশঙ্কা স্বাস্থ্যমহলে। সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে রোববার থেকেই ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকাগুলো জমা পানির সন্ধানে নেমে পড়েছেন পৌরসভার কর্মীরা। ওড়ানো হয়েছে ড্রোনও। সোমবার (১১ নভেম্বর) সংবাদমাধ্যমকে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ (ববি) হাকিম জানিয়েছেন, মশাবাহিত রোগ দমনে অভিযানে গিয়ে প্রায়ই আবাসনের ভিতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না জঞ্জাল সাফাই বিভাগের কর্মীদের। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আবাসনগুলো থেকে এমন অভিযোগ আবার পেলে সেখানে পুলিশ নিয়ে ঢোকা হবে। ডেঙ্গু মশার লার্ভা মিললেই সঙ্গে সঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।
কলকাতা পৌরসভার পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ দেবাশিস বিশ্বাস জানিয়েছেন, পৌরসভার কর্মীরা ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে জমা পানির সন্ধান করছেন। নাগরিকদের সচেতন করার কাজ আমরা গুরুত্ব দিয়ে করছি। কলকাতা বিমানবন্দরের অদূরে বিধাননগর পুরনিগমের কেষ্টপুর ও বাগজোলা খাল সংলগ্ন অর্জুনপুর, অশ্বিনীনগর, বাগুইআটি, দশদ্রোণ, বাবলাতলা এলাকায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের জন্য মশাবাহিত রোগ নতুন করে মাথা তুলবে বলে মনে করছেন মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায়। তিনি বলেছেন, জোরে বৃষ্টি হলে এই চিন্তাটা হত না। রোববার থেকেই আমরা যে সমস্ত এলাকায় মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বেশি, সেখানে জমা পানি সরানোর লক্ষ্যে অভিযান শুরু করেছি।
এদিকে দিনে দিনে পশ্চিমবঙ্গে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। যেভাবে তার থাবা বাড়ছে তাতে ঘুম ছুটেছে স্বাস্থ্য মহল থেকে শুরু করে প্রশাসনের। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ মাত্র ১০ দিনে দ্বিগুণ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। তথ্য অনুযায়ী ২৪ হাজার থেকে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজারে। তাও মাত্র গত ১০ দিনে।
পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দফতরের কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ের ফলে কলকাতা ও আশপাশের অঞ্চলে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, তাতে নতুন করে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী আরও এডিস ইজিপ্টাই মশা জন্মাবে।
পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যভবন সূত্রে গত ৩০ অক্টোবর তথ্য পেশ করে জানানো হয়েছিল, গোটা রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ হাজার। ডেঙ্গুর জেরে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। চলতি সপ্তাহের শেষে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে পর্যালোচনা বৈঠকের পর জানানো হয়েছে ওই ১০ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। বর্তমান সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪৬ হাজারের কাছাকাছি। এই বৃদ্ধির পেছনে কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে ডেঙ্গুর চরিত্র বদলকে। পাশাপাশি ডেঙ্গুকে যে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি, তা একরকম স্বীকারই করে নিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা।
উল্লেখ্য, বর্ষার আগেই ডেঙ্গু মোকাবিলা করতে এবার আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পৌরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নেতৃত্বে একের পর এক বৈঠকের পাশাপাশি রাজ্যের মানুষকে ডেঙ্গু নিয়ে সচেতন করতে নেয়া হয়েছিল একাধিক পদক্ষেপ। কিন্তু কোনো কিছুই যে কাজে আসেনি এই সংখ্যাটা সেটাই প্রমাণ করছে। এবারের ডেঙ্গুতে সবচেয়ে আক্রান্ত কলকাতার পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ পুরসভা, নৈহাটি পুরসভাসহ জেলার একাধিক অঞ্চল।
এফসি