হেলিকপ্টারে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বুলবুল কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শনে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে তিনি কাকদ্বীপে একটি প্রশাসনিক বৈঠকও করেন। আর বুধবার দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনার বিধ্বস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শনে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তবে একাধিক এলাকায় তাকে এদিন তৃণমূল সমর্থকদের কাছে শুনতে হয়েছে ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি। তার সঙ্গে যাওয়া বিজেপির স্থানীয় সমর্থকরা অবশ্য পাল্টা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতে কাঁপিয়ে তোলেন চারপাশ।
বাবুল আগেই বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশেই তিনি পশ্চিমবঙ্গের বুলবুল পরবর্তী পরিস্থিতি দেখতে এবং ক্ষয়ক্ষতির আন্দাজ পেতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসেছেন।
উল্লেখ্য, বুলবুল আছড়ে পড়ার পরের দিনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ। বুধবার বাবুলের সঙ্গে এসেছিল একটি কেন্দ্রীয় টিমও। মমতা ফিরে গিয়ে মৃতদের পরিবারপিছু ২ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা ঘোষণা করেন।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থ দফতরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে রাজ্যের ক্ষতির পরিমাণ ১৫ হাজার থেকে ১৯ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। শনিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মাঝের উপকূল অঞ্চলে তাণ্ডব চালায় এই ঘূর্ণিঝড়। তারপর থেকেই চলছে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব-নিকাশের পালা। ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়বিধ্বস্ত এলাকায় সমীক্ষা চালিয়ে এবং বিভিন্ন দফতরের পেশ করা রিপোর্টের ভিত্তিতে আপাতত একটি হিসাব করা হয়েছে। সব রিপোর্ট পাওয়ার পরেই চূড়ান্ত হিসাব করা সম্ভব হবে।
তার কথায়, প্রাথমিক হিসাব যা বলছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি থেকে ১৯ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাওয়ার পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ত্রাণ ও উদ্ধারের জন্য এই বিপুল খরচ মেটাতে বিশেষ প্যাকেজের আর্জি জানাবে বলেও অর্থ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে এখনও দুই ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরের সব হিসাব পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবারের মধ্যে কৃষি, শক্তি, জনস্বাস্থ্য ও পঞ্চায়েত দফতরসহ সমস্ত দফতরকে বুলবুলের রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। চূড়ান্ত রিপোর্ট পাঠানো হবে দিল্লিতে।
এদিকে বাবুল সুপ্রিয়ও সদলবলে বুধবার বুলবুল পরবর্তী পরিস্থিতি দেখতে যান। বসিরহাটের একাধিক জায়গায় বুলবুল দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন বাবুল সুপ্রিয়। তিনি অভিযোগ করেন, বেশ কিছু জায়গায় ত্রাণ বণ্টন নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে তিনি অভিযোগ করেছেন, গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন, অনেকেই নাকি ঠিকমতো ত্রাণ পাননি এবং ভেঙে যাওয়া বাড়িঘর সারানোসহ নানা বিষয় নিয়ে এখনও তারা অন্ধকারে রয়েছেন। রাজ্য প্রশাসনের কাছে তিনি আবেদনও করেছেন, সর্বত্র যাতে সমানভাবে ত্রাণ পৌঁছয় তার ব্যবস্থা করতে।
একই কথা অবশ্য শোনা গিয়েছে কলকাতায় নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকেও। সেখানে তিনি বলেন, ত্রাণ বণ্টনের ক্ষেত্রে রাজনীতি বরদাস্ত করা হবে না। ত্রাণ ও সরকারি যাবতীয় সুবিধা নিয়ে দুর্গতদের কাছে পৌঁছতে হবে।
বাবুল সুপ্রিয়র বুধবারের কাকদ্বীপ ও নামখানা সফরের আগেই অবশ্য ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত এই দুটি এলাকায় বিজেপির স্থানীয় দুটি প্রতিনিধি দল ঘুরে গেছে। তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, তথা আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র সফর নিয়ে আদৌ খুশি নয় তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই দলের তরফে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সভাপতি শুভাশিষ চক্রবর্তী বলেছেন, বাবুলের এই সফর এলে ত্রাণকে হাতিয়ার করে প্রচারের রাজনীতি করা।
এফসি