• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০১৯, ০৯:১২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ৯, ২০১৯, ০৯:১২ পিএম

নাগরিকত্ব বিল পেশ হওয়ার আগেই উত্তাল ভারত

নাগরিকত্ব বিল পেশ হওয়ার আগেই উত্তাল ভারত
পাহাড় থেকে সাগর যাত্রা শেষে কলকাতায় আছড়ে পড়ল তুমুল বিক্ষোভ

সংখ্যাগরিষ্ঠতার ওপর ভর করে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ভারতের লোকসভায় পেশ করা হয়েছে বহু বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিল। বিরোধী দলগুলো এবং অজস্র সংগঠনের তীব্র আপত্তি ও দেশজোড়া আন্দোলনকে কোনো রকম পাত্তা না দিয়ে এদিন সংসদে বিলটি পেশ করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। লোকসভায় যে বিলটিকে ঠেকানো যাবে না, বিরোধীরা তা ভালোমতোই জানেন। ২৯৩-৮২ ভোটে জিতে পাস হয়ে যায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল।

বিতর্কিত এই বিলটির আসল পরীক্ষা হবে রাজ্যসভার অধিবেশনে, যেখানে মোদি সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। তবে উত্তপ্ত সংসদে এদিন বিলটি পেশ হওয়ার আগেই গোটা ভারতেই নাগরিক সমাজ তুমুল বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ত্রিপুরার আগরতলা এবং অসমের গুয়াহাটিতে বিপুল সংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমে এসে মোদি সরকার এবং বিজেপির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। আগরতলায় প্রচুর মানুষ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে রাস্তায় বসে পড়েন। আর কলকাতায় জনরোষ আছড়ে পড়ে পাহাড় থেকে সাগর এনআরসি বিরোধী সমাবেশে।

কলকাতার ধর্মতলায় রানি রাসমনি রোডে এদিনই ছিল এনআরসি বিরোধী দীর্ঘ যাত্রা শেষে মহাসমাবেশ। কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন সমাপ্তি সমাবেশে সর্বভারতীয় যুব নেতৃত্বের বক্তব্য শুনতে। এনআরসি বিলের বৈশিষ্ট্য এবং তার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন সিপিআইর যুব নেতা কানহাইয়া কুমার, আলি ইমরান রামজ (ভিক্টর), ইমতিয়াজ আহমেদ মোল্লা, উপজাতি সম্প্রদায়ের নেতা মিলন মান্ডি, দেবর্ষি চক্রবর্তী, নারী আন্দোলনের নেত্রী কবিতা কৃষ্ণন, কন্নন গোপীনাথন, শরদিন্দু উদ্দীপন এবং প্রবীণ মনবাধিকার কর্মী রঞ্জিত শূর। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন প্রসেনজিৎ বসু।

প্রস্তাবিত এনপিআর বিলের তীব্র প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, এনপিআরের উদ্দেশ্য হল দেশের সমস্ত মানুষকে নাগরিকত্বের পরীক্ষার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়া। দেশের অধিকাংশ মানুষই যেখানে দরিদ্র, কোনও রকম কাগজপত্র যাদের কাছে থাকার কথা নয়, তাদের কাছে বাপ-ঠাকুরদার জন্মবৃত্তান্তের প্রমাণ চাওয়া হচ্ছে। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে দরিদ্র মেহনতি এই মানুষরা এই সব নথিপত্র সংরক্ষণ করে রাখেন না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেগুলি তারা দেখাতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে এক বিরাট অংশের মানুষের ঠাঁই হবে ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোয়। বিশেষ করে উদ্বাস্তু এবং রুটিরুজির সন্ধানে সীমান্ত পেরিয়ে চলে আসা মানুষদের। আর বাকি অংশের মানুষকে ভয়ে ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে বাঁচতে হবে। তাদের মধ্যে যারা কাজের সন্ধান করবেন, তাদের নাগরিকত্ব না থাকার সুযোগ নিয়ে ক্রীতদাসের মতো খাটানোর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের নারী আন্দোলনের সক্রিয় নেত্রী কবিতা কৃষ্ণন।

ধর্মতলার সোমবারের এই সমাবেশে জনসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। কলকাতা তো বটেই পার্শ্ববর্তী দুই জেলা উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, হাওড়া এবং হুগলি থেকেও মানুষরা এসেছিলেন। উদ্যোক্তারা জানান, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এই সমাবেশে যারা যোগ দিয়েছিলেন, তাদের একটা বড় অংশই দরিদ্র শ্রমজীবী বা কৃষক।

উত্তরপূর্ব ভারতের অসম এবং ত্রিপুরার বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, এমনিতেই প্রায় ২০ লাখ বাঙালির নাম (আসামের এনআরসি প্রক্রিয়ায়) নাগরিক পঞ্জী থেকে বাদ গিয়েছে। এই বিল পাস হলে আরও বেশি সংখ্যক নাগরিককে তাড়িয়ে দেয়া হবে। নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে সোমবার ১২ ঘণ্টার আসাম বন্‌ধের ডাক দিয়েছিল আসামের ছাত্র সংগঠন আসু (অল আসাম স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন)। উত্তর পূর্বের অন্যান্য রাজ্যেও বিক্ষোভ শুরু হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও অরুণাচল প্রদেশের নির্দিষ্ট অংশকে নতুন বিলের আওতার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার। এই রাজ্যগুলোতে বাঙালি সমাজের একটা বড় অংশই মনে করছে, বহু বছর ধরে যেসব বাঙালি নাগরিকরা বাস করছেন, তাদের উচ্ছেদ করার জন্য চক্রান্ত করা হচ্ছে।

এফসি

আরও পড়ুন