রোহিঙ্গা সঙ্কট
...........
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর একদল সেনা সদস্যের দ্বারা পরিচালিত হত্যা, ধর্ষণ ও নির্বিচারে আটকের মতো যে সকল নিপীড়ন সংঘটিত হয়েছে তা কোনওভাবেই জাতিগত নিধনযজ্ঞ বা গণহত্যা হিসেবে বিবেচ্য নয়। কিছু সেনাসদস্য কেবল যুদ্ধাপরাধের মতো অপরাধ করেছেন।
রোহিঙ্গা নিপীড়নের ওপর তদন্তের জন্য মিয়ানমার সরকার কর্তৃক গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশনের (আইসিওই) এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
সোমবার (২১ জানুয়ারি) মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের কাছে তদন্তের সার-সংক্ষেপ জমা দিয়েছে কমিশন। মিয়ানমারের এই কমিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফিলিপাইনের কূটনীতিক রোজারিও মানালে। তার সঙ্গে দু’জন আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিও রয়েছেন।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া ওই সেনা নির্যাতন থেকে বাঁচতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার বলছে, রোহিঙ্গাদের ওপর কোনও গণহত্যা হয়নি।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালত রাখাইনে গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে রুল জারি করা হবে কিনা সে ব্যাপারে ২৩ জানুয়ারি আদেশ দেবেন। তার আগেই এ প্রতিবেদন প্রকাশ করলো মিয়ানমার।
আইসিওইর তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু কর্মকর্তা নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা, তাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়াসহ অসম শক্তিপ্রয়োগ করেছে; যা মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধের শামিল। তবে সেটাকে গণহত্যা বলা যায় না।
কমিশনের মতে, একটি জাতি, গোষ্ঠী, জাতিগত বা ধর্মীয় সংগঠনকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশে সেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে— এ নিয়ে তর্ক করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণের অভাব রয়েছে। আর সিদ্ধান্তে আসার ক্ষেত্রে এর অভাব আরও বেশি।
২০১৭ সালে রাখাইনে সামরিক অভিযানে ব্যাপক দমন-পীড়নের মুখে অন্তত ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বহু রোহিঙ্গা নারী মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের ফলে গর্ভবতী অনেক রোহিঙ্গা নারী এরই মধ্যে সন্তানও জন্ম দিয়েছেন, যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে নানা সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। জাতিসংঘ শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের ওপর এই মিয়ানমার সেনাদের নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে গত মাসে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস বা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। ২৩ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ওই মামলার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেবে আদালত। এ অবস্থায় মিয়ানমারের স্বাধীন কমিশন এ ধরনের বিভ্রান্তমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করলো।
মিয়ানমার বরাবরই রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ সেনা নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে থাকে। এমনকি গত ডিসেম্বরে হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সময় দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি মিয়ানমার সেনাবাহিনী কোনও নির্যাতন করেনি বলে দাবি করেছিলেন। যদিও সেটি ছিল তার নির্লজ্জ মিথ্যাচার।
এদিকে তদন্ত কমিশনের ওই প্রতিবেদনের কড়া সমালোচনা করেছেন গ্লোবাল জাস্টিস সেন্টারের প্রেসিডেন্ট আকিলা রাধাকৃষ্ণ।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, এই কমিশন হচ্ছে দায়িত্ব বিপথগামী ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে ধাপ্পাবাজির আরেকটি দেশীয় চেষ্টা। তা নইলে গণধর্ষণ ও অন্যান্য গণহত্যার মতো অপরাধে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার কোনও ইচ্ছা নেই মিয়ানমার সরকারের।
এসকে/এসএমএম