• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২১, ০৬:১৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ১৩, ২০২১, ০৪:৩১ পিএম

৭ মার্চের ভাষণ

“নিপীড়িত মানুষের সংগ্রাম ঘোষণা”

“নিপীড়িত মানুষের সংগ্রাম ঘোষণা”

লেখক, গবেষক, ও সাংবাদিক আফসান চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যের অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, সংবিধান, ৭ মার্চের ভাষণসহ নানা বিষয় নিয়ে জাগরণ অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সেই আলোচনার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন শাহাদাত হোসেন তৌহিদ


জাগরণ: স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী চলছে। যে লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সে লক্ষ্যে কি আমরা পৌঁছাতে পেরেছি?
আফসান চৌধুরী:
বাংলাদেশের মানুষের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান শক্তি হচ্ছে গ্রামের মানুষ, সাধারণ মানুষ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মধ্যবর্তী শ্রেণি। বাংলাদেশের যে মধ্যবর্তী শ্রেণি ৭১-এর সময় মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, তারাই মোটামুটি উপর তলার আছে। সেই দিক থেকে তারা বিজয়ী। গ্রামের মানুষ যারা প্রধানত যুদ্ধ করেছে, তাদের অনেক উন্নত হয়েছে। আজকের সময়ে দেশের সবচেয়ে সবল শ্রেণি হচ্ছে গ্রামের সেই মধ্যবর্তী শ্রেণি। তাদের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এমনকি খেয়াল করে দেখবেন, শহরের মধ্যবর্তী শ্রেণিরা এই কোভিডের সময় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে গ্রামের মধ্যবর্তী শ্রেণির তুলনায়। গ্রামের মানুষ কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, আমরা যে দুঃখ-কষ্টের কথা শুনি সেটা বাস্তব। এরা প্রধানত শহুরে মধ্যবর্তী শ্রেণি, নাগরিক মধ্যবর্তী শ্রেণি। এটা কিন্তু নতুন ছবি। ৭১-এর আগে কিন্তু এ ছবি ছিল না। এ ছবিটা তৈরি হয় মধ্যবিত্তের জায়গা থেকে। আর দ্বিতীয়টা হচ্ছে বড়লোক যারা; তারা বড় লোকই। তাদের ব্যবহার ভীষণ বৈষম্যমূলক। ৫০ বছরের স্বপ্ন কার ছিল? যুদ্ধ যারা করেছে, তারা কিন্তু স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধ করেনি যে, আমরা দেশ গড়বো। যুদ্ধ করেছে শত্রুর আক্রমণ থেকে বাঁচতে। আমাদের মধ্যে এখন যারা কথা বলা শ্রেণি ৭১ দেখেনি, অংশগ্রহণ করেনি— তাদেরকে বোঝানো সম্ভব না যে, স্বপ্ন দেখে কেউ যুদ্ধ করে না। সাধারণ যারা যুদ্ধ করেছে, যারা প্রতিবাদ করেছে, হাজার হাজার মানুষকে সাহায্য করেছে; সে কি দেশ বানানোর জন্য যুদ্ধ করেছে? এটা তার সহজাত প্রবৃত্তি, তাই সে করেছে। সে কি আগামীর স্বপ্ন দেখেছে? না, সে তখন তার সুবিধা-অসুবিধা দেখেছে।

জাগরণ: ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
আফসান চৌধুরী:
ভাষণটা তো একটা ঐতিহাসিক ব্যাপার। ৭ মার্চের ভাষণ সারা দেশকে প্রস্তুত করেছে। দীর্ঘ দুইশো বছর ধরে যে আন্দোলন করেছে, সে আন্দোলনটা গিয়ে শেষ পর্যায়ে সাধারণ মানুষকে একাত্ম করেছে। এই ভাষণটা শুনেই কিন্তু মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণকে পাকিস্তানবিরোধী বক্তব্য না দেখে, এ দেশের নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের সংগ্রাম ঘোষণার বক্তব্য হিসেবে দেখা উচিত।

জাগরণ: সংবিধানে একদিকে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়, অন্যদিকে রাষ্ট্রধর্মও রাখা হয়েছে। এই বিষয়টি আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
আফসান চৌধুরী:
ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে রাষ্ট্রধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। কিন্তু স্বল্পসংখ্যক মানুষ আছে, যারা ধর্মকে ব্যবহার করে রুটি-রুজি করে। 
বাংলাদেশের মানুষের জন্য সংবিধান গুরুত্বপূর্ণ না। কেউ সংবিধান জানেও না, মানেও না। ঢাকা শহরের মানিক মিয়া এভিনিউতে বসে যারা সংবিধান বানায়, তারাও জানে না— এটা গ্রামে পৌঁছায় কি না? শহরেই এখনো ভালোভাবে সংবিধান পৌঁছায় না, সেখানে গ্রামে কীভাবে পৌঁছাবে? সংবিধান নিয়ে কেউ চিন্তা করে এটা আমার মনে হয় না।

জাগরণ: স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও মানুষের বাক স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। আপনার কাছে কি মনে হয়, দেশে বাক স্বাধীনতা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে?
আফসান চৌধুরী:
বাংলাদেশে বাক স্বাধীনতা কি পর্যায়ে আছে, আমি জানি না। সকল শ্রেণির কাছে এটি গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নয়। আমি মনে করি, আমাদের দেশে এই আলোচনাটা করার মতো মানসিক পরিস্থিতি বেশির ভাগ মানুষের নেই। শহরের মানুষ ও গ্রামের মানুষ কোনটাকে বাক স্বাধীনতা মনে করে, সেটার মধ্যে পার্থক্য আছে। এ কারণে আমি মনে করি, এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া ঠিক না। গবেষক হিসেবে আমি মনে করি, গ্রামের মানুষ এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা কম করে। বাক স্বাধীনতা স্বল্পসংখ্যক মানুষের বিষয়। স্বাধীনতাটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কোনো একজন মানুষ, সে জানেই না তার স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। কারণ, তাকে বোঝানো হচ্ছে, এটাই হচ্ছে স্বাভাবিক। আমি মনে করি, আমাদের সমাজে গালি দেওয়াটাও স্বাধীনতা হরণ করার একটা সূত্র। গ্রামে দেখবেন, জমি নিয়ে সালিশ হয় না, পরকীয়া নিয়ে সালিশ হয়।