• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০১৯, ০৪:২৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২৫, ২০১৯, ০৪:২৩ পিএম

মুন সিনেমার জমি মুক্তিযোদ্ধা ট্রাস্টকে দলিল  করে দেয়ার নির্দেশ

মুন সিনেমার জমি মুক্তিযোদ্ধা ট্রাস্টকে দলিল  করে দেয়ার নির্দেশ

আগামী ২৯ আগস্টের মধ্যে বহুল আলোচিত মুন সিনেমা হলের জমি ও স্থাপনা মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে রেজিস্ট্রি করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

রোববার (২৫ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালত আগামী ২৯ আগস্ট পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন।আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মুন সিনেমা হলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি ও সাইফুল্লাহ মামুন।

গত বছর ১০ ডিসেম্বর আপিল বেঞ্চ এক আদেশে মুন সিনেমা হলের জমি ও স্থাপনার মূল্য হিসেবে ৯৯ কোটি ২১ লাখ টাকার চেক ব্যক্তি মাকসুদুল আলমের পরিবর্তে বাংলাদেশ ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্ক লিমিটেডের নামে চেক দিতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। কিন্তু জমি রেজিস্ট্রি নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়ায় সরকার টাকা প্রদান থেকে বিরত থাকে। শেষ পর্যন্ত উভয়পক্ষের সমঝোতার পর আপিল বিভাগ আজ (রোববার) জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে নির্দেশ দেন।

গত ২৮ জুলাই পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাট এলাকার আলোচিত মুন সিনেমা হলের সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের নামে রেজিস্ট্রির পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে এ নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে মুন সিনেমা হলের মালিককে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য ১৮ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেয়া হয়।

গত বছরের ৮ অক্টোবর মুন সিনেমা হলের মালিককে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের যে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ তা পরিশোধে সম্মত হওয়ার কথা জানায় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ পরিশোধে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। ১২ জানুয়ারিতেও একই রকম আদেশ দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালত।

মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে মামলার পর সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হয়েছিল। সেই সিনেমা হলের জমি এবং তার ওপর গড়ে তোলা বর্তমান স্থাপনার নির্ধারিত মূল্য পরিশোধের নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি মুন সিনেমা হলের জমি এবং তার ওপর গড়ে তোলা বর্তমান স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে একজন ‘অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ’ প্রকৌশলীকে দিয়ে সিনেমা হলের জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তার ধারাবাহিকতায় মূল্য নির্ধারণ করে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর দেয়া প্রতিবেদন ১৮ আগস্ট আদালতে উপস্থাপন করা হলে মূল্য পরিশোধের এমন আদেশ দেন আপিল বিভাগ। ওই দিন জমি ও রেজিস্ট্রি বুঝিয়ে দেয়ার কথা আদালতকে জানান ইটালিয়ান মার্বেল কোম্পানির আইনজীবীরা। পরে ২৫ আগস্ট শুনানির জন্য দিন ঠিক করেন আদালত।

মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে এক সময়ের মুন সিনেমা হলের মূল মালিক ছিল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণা করা হয় এবং পরে শিল্প মন্ত্রণালয় ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করে। ইটালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম ওই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করলে বিষয়টি আটকে যায়।

১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান একটি সামরিক ফরমান ঘোষণা করেন। এতে বলা হয়, সরকার কোনো সম্পত্তিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে আদালতে তা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। মুন সিনেমা হলের সম্পত্তিও এর আওতায় পড়ে যায়।

কিন্তু ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস ২০০০ সালে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে, যেখানে সংবিধানের ওই পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করা হয়। ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট এক ঐতিহাসিক রায় দেন। রায়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর খন্দকার মোশতাক আহমদ, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ সংবিধান-বহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

এরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের দেয়া ওই রায় বহাল রাখেন এবং ৯০ দিনের মধ্যে মুন সিনেমা হল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডকে ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন। এরপর দীর্ঘদিনেও মালিকানা ফিরে না পেয়ে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি ইটালিয়ান মার্বেল কর্তৃপক্ষ তখনকার ভূমিসচিব, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করে। সেই অভিযোগের শুনানি করেই আপিল বিভাগ সিনেমা হলের জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ দেয়।

এমএ/বিএস 
 

আরও পড়ুন