• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০১৯, ০৯:২৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ৩০, ২০১৯, ০৯:২৬ এএম

সম্রাটের অপকর্মের দোসর জাকির ভোলায় আটক

সম্রাটের অপকর্মের দোসর জাকির ভোলায় আটক
র‌্যাবের হাতে আটক সম্রাটের সহযোগী জাকির হোসেন-ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের নির্বাহী কমিটির সদস্য জাকির হোসেন। ১৯৯১ সালে ছিলেন কাকরাইল এলাকার একটি খাবার হোটেলের গ্লাসবয়। সেই হোটেলে বয়গিরি করে জাকির প্রতিদিন পেতেন ৩০ টাকা। কিছুদিন পর জাকির ২ হাজার টাকা বেতনে চলে যান ফরিদপুর ম্যানসনে ফিল্ম অফিস টনি ফিল্মের পিয়ন হিসেবে। ভবনের নিচতলায় ছিল ম্যারাডোনা হোটেল। সে হোটেলেই আসা-যাওয়া করতে গিয়ে পরিচয় হয় ইসমাইল চৌধুরী ওরফে সম্রাটের সঙ্গে। এরপর ধীরে ধীরে আস্থাভাজন হয়ে ওঠে সম্রাটের। এক সময় সে হয়ে উঠে সম্রাটের অন্যতম সহযোগী। ক্যাসিনো অপকর্মের দোসর।

সেই জাকিরকে ভোলা জেলা শহরের চরনেয়াবাদ এলাকায় নতুন পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন তার নানা শ্বশুর বাড়ি থেকে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ১টি পিস্তল, ৪ রাউন্ড গুলি ও ৪ বোতল মদ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান ভোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনায়েত হোসেন। 

ওসি জানান, মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাতেই র‌্যাব বাদী হয়ে ভোলা থানায় জাকিরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় জাকিরকে ইসমাইল চৌধুরী ওরফে সম্রাটের ব্যবসায়িক পার্টনার উল্লেখ করা হয়েছে। বুধবার (৩০ অক্টোবর) ঢাকায় নেয়া হবে জাকিরকে।

জাকিরকে আটক সংক্রান্ত র‌্যাবের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায় নি। 

জানা গেছে, সম্রাটের ছত্রচ্ছায়ায় জীবন বদলে যায় জাকিরের। তাকে আর পিছনে তাকতে হয় নি।২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে সম্রাটের ছায়াতলে থেকে কাকরাইল, বিজয়নগর, নয়াপল্টন, পুরানা পল্টন, মতিঝিল, ফকিরেরপুল, আরামবাগ, দিলকুশা, দৈনিক বাংলা এলাকায় সরকারি-বেসরকারি অফিসে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জমি দখলের মতো অপকর্ম করতো সে। তবে তার প্রধান কাজ ছিল বিভিন্ন রকম সালিশি করে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করা।

এসব অপকর্ম করে সম্রাটের সহযোগী হিসেবে জাকির বনে গেছেন শত কোটি টাকার মালিক। পল্টন, সেগুনবাগিচা, কাকরাইল, শান্তিনগরে রয়েছে তার ৩টি বাড়ি ও ২৮টির মতো ফ্ল্যাট। সিঙ্গাপুরে রয়েছে লাভজনক একটি কোম্পানি।

নানা রকম অপকর্মের মাধ্যমে সম্রাটের চেয়ে সিংহভাগ টাকা রয়েছে এই  জাকির হোসেনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। সম্রাটের আর্শিবাদ পেয়ে প্রথমে সে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবে ক্যাসিনোর ব্যবসা শুরু করে। ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় আরামবাগ, ফকিরেরপুল থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে মতিঝিল কেন্দ্রিক ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় সম্রাট ও জাকির। ক্যাসিনো থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আসতে শুরু করলে ‘জাকির ট্রেডিং’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়। দু’জনের অবৈধ আয়ের টাকা জাকিরের অ্যাকাউন্টে জমা হতো। সে জমানো টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সম্রাটের সঙ্গে তার বিরোধ ঘটে। প্রাণভয়ে জাকির পালিয়ে গিয়ে সিঙ্গাপুরে আশ্রয় নেয়। পরে বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে দফারফা করে বাংলাদেশে এসে পুনরায় সে সম্রাটের সংস্পর্শে আসে।

জানা গেছে, ২০১২ সালে ১৯ পুরানা পল্টন লাইনের খালেক নামে এক লোকের কাছ থেকে ২৭ কোটি টাকায় ৯ কাঠা জমি কেনেন তিনি। বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কির পাশে কালভার্ট রোডে একটি ৬তলা ও একটি ৪ তলা বাড়ি কেনেন এই জাকির। শান্তিনগর টুইন টাওয়ারের ৫ তলা, ৬ তলা, ৮ তলায় ৭টি দোকান রয়েছে তার। গাজীপুরের কোনাবাড়িতেও ১০০ কাঠা জমি রয়েছে এই জাকিরের। সব মিলিয়ে জাকির হোসেনের সম্পদ প্রায় ৪শ কোটি টাকা। 

এইচএম/এসএমএম

আরও পড়ুন