• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০১৯, ০২:০৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১১, ২০১৯, ০২:০৩ পিএম

বিচারপতিপুত্রের বিরুদ্ধে সুমনের রিট শুনবে না তৃতীয় বেঞ্চও

বিচারপতিপুত্রের বিরুদ্ধে সুমনের রিট শুনবে না তৃতীয় বেঞ্চও

এক বিচারপতির ছেলেকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে গেজেট প্রকাশের বৈধতা নিয়ে রিট শুনতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ। এই নিয়ে তৃতীয় কোনো বেঞ্চ রিটটি না শুনে ফেরত দিয়েছেন। 

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট আবেদনটি শুনতে অপারগতা প্রকাশ করে। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অনিক আর হক ও সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

আজ আদালত থেকে বের হওয়ার পর সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন, ‘একজন বিচারপতির ছেলের নাম থাকায় অভিযোগ শুনলেন না বরং বিব্রত হলেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ছয়জন বিচারপতি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তার কাছে আজ বিচার দিতাম, এই বাংলাদেশ উনি কখনই চাননি! বঙ্গবন্ধু কন‌্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার দিতে চাই!’

এর আগে গত ২১ ও ২৮ নভেম্বর হাইকোর্টের দুটি পৃথক বেঞ্চ রিট আবেদনটি শুনতে বিব্রতবোধ ও অপারগতা প্রকাশ করেন।

আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরও এক বিচারপতির ছেলেকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী গেজেট প্রকাশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ২১ নভেম্বর রিট দায়ের করা হয়। আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও ইশরাত হাসান এ রিট দায়ের করেন।

রিট আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় কয়েকবার অংশ নিয়েও কৃতকার্য হতে পারেননি হাইকোর্টের বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকীর ছেলে মো. জুম্মান সিদ্দিকী। অথচ জুম্মান সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে গত ৩১ অক্টোবর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।

রিটে ওই গেজেট এবং ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অর্ডারের ২১(১) (খ) ও ৩০(৩) ধারা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। জুম্মান সিদ্দিকীসহ বার কাউন্সিলের সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।

এদিকে, জুম্মান সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী করার পরিপ্রেক্ষিতে এর পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরছেন সংশ্লিষ্টরা। আইন ও আদালত অঙ্গণে এই নিয়ে যেমন তর্কবিতর্ক চলছে, তেমনি সামাজিক মাধ্যমেও চলছে এই নিয়ে কথা কাটাকাটি।

এই ইস্যুতে সামাজিক মাধ্যমে যারা লিখেছেন তাদের একজন ইংল্যান্ড প্রবাসী ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদার। নিজের ফেসবুক একাউন্টে এই ইস্যুতে একটি লেখা তিনি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকেও ট্যাগ করেন।

ওই ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘মুহম্মাদ জুম্মান সিদ্দিকীকে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে প্র্যাক্টিসের অনুমতি দেয়া হয়েছে এবং এটি নিয়ে আইনজীবী মহলে খুব আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। আমি যেহেতু এই গেজেটের ঘোষণার মাধ্যমে সুবিধাপ্রাপ্ত পার্টি ফলে এই ব্যাপারে আসলে না লিখলেই নয় বলেই মনে করছি। আজকে ব্যারিস্টার সুমন ভাই এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে রিট করেছেন সংবাদে দেখলাম। 

বাংলাদেশের বার কাউন্সিলে এনরোলমেন্ট পরীক্ষা, এটির পদ্ধতি, পুরো সিস্টেম, বার কাউন্সিলের ভূমিকা, বাংলাদেশের নিম্ন ও উচ্চ আদালতের প্র্যাক্টিস, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড থেকে আইনজীবি হয়ে আসা ব্যাক্তিদের নিজেদের ভেতরে ভয়াবহ রেষারেষি, রেসিস্ট টাইপের নোংরা কোন্দল, এসব নিয়ে লেখা হওয়াটা জরুরি।

আজকে ব্যারিস্টার সুমন ভাইয়ের রিট করাটা আমাকে ভাবিয়েছে। সুমন ভাই কি কোনো ভ্যালিড পয়েন্ট থেকে আইনের আশ্রয় চেয়েছেন নাকি আমি ইংল্যান্ড থেকে পাশ করেছি আর জুম্মান নিউজিল্যান্ড থেকে পাশ করেছে এই ব্যাপারটি তার কাছে মুখ্য হয়েছে? নাকি তিনি আসলেই আইনি প্রতিকার চেয়েছেন?

এসব সব কিছু নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার আগে, আমি আমার ফেসবুকে ও ফেসবুকের বাইরে থাকা সকল আইনজীবী, আইনের ছাত্র-ছাত্রী কিংবা ইন্টারেস্টেড পার্টি যারা এই স্ট্যাটাস দেখছেন তাদের কাছে মতামত চাইছি এই বিষয়ে।’

ফেসবুক একাউন্টে দেয়া আরেকটি স্ট্যাটাসে নিঝুম লিখেছেন, ‘এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। একটা ব্যাপার খুব অবাক লাগে যে বার বার করে বলা হচ্ছে জুম্মান সিদ্দিকী বিচারপতির ছেলে তাই তিনি সার্টিফিকেট পেয়েছেন এবং আরেকটা কথা বলা হয় যে জুম্মান বার কাউন্সিল পরীক্ষায় কয়েকবার অকৃতকার্য হয়েছে। 

অথচ কাউকে দেখিনি এই দুইটি ব্যাপার খণ্ডন করে কিছু লেখে। সবাই স্রোতের মধ্যে গা ভাসিয়ে আইদার এই পক্ষ না হয় অন্য পক্ষ এই টাইপ দল বানিয়ে ঘোঁট পাকাতে থাকে। 

প্রথমত, এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বার কাউন্সিলের আইন মেনেই হয়েছে। এখানে কে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে আর কে বিচারপতির ছেলে এটা মোটেও মুখ্য না। 

আর দ্বিতীয়ত হচ্ছে জুম্মান বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন যদি সত্য ধরে নেই তাহলে এটাও আমরা স্বীকার করে নিব যে অকৃতকার্য হবার পর উনি কাউকে কিল ঘুষি মেরে হাইকোর্টে ঢোকেন নি। বরং অকৃতকার্য হবার পর তিনি বার কাউন্সিলের যে অন্য রুট আছে, অন্য অপশন রয়েছে সেটি সম্পূর্ণ ভাবে মেনে নিয়েই এনরোলড হয়েছেন।

জুম্মান নিউজিল্যান্ড হাই কোর্টের ব্যারিস্টার এবং সলিসিটর হিসেবে এনরোলোড হয়েছেন এবং তারপর বাংলাদেশের বার কাউন্সিলের ধারা ২১(১)(বি) এই বলেই বাংলাদেশে প্র্যাক্টিসে অনুমতি পেয়েছেন।

হিংসাত্নক মনোভাব পরিহার করেন, উনি নিউজিল্যান্ডের আমি ইংল্যান্ডের বা আমি অস্ট্রেলিয়ার এইসব কথা বার্তা বলে দল না পাকিয়ে কিভাবে বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সকলে মিলে একযোগে কাজ করা যায় এই চিন্তা নিজে করেন এবং চিন্তার বিকাশ ঘটান। এতে আখেরে সবাই উপকৃত হবে।’
  
রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে দৈনিক জাগরণকে গত ৬ ডিসেম্বর সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, ‘রিটে ওই গেজেট এবং ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অর্ডারের ২১(১)(বি) ও ৩০(৩) ধারা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। তাকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী ঘোষণা করা গেজেটে এই দুইটি ধারা উল্লেখ করা হয়েছে।’

সুমন বলেন, ‘কয়েকটি বিষয় ভেবে এই রিট করেছি। এর একটি হচ্ছে এ সংক্রান্ত ধারা তার জন্য, যিনি ১৯৭২ সালের ‘বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২’ পাস হওয়ার আগে অন্য কোন দেশের কোন বারের সদস্য হয়েছেন। তাছাড়া বিদেশি যে কোন বারের সদস্য হলেই হবে না, ওই বারকে বাংলাদেশ সরকার গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে স্বীকার করে নিয়েছে কিনা, তাও দেখতে হবে।’

গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার স্বীকার করে নিয়েছে বিদেশি তেমন কোন বার আছে কিনা? এই প্রশ্নের জবাবে সুমন বলেন, 'না, তেমন কোন বিদেশি বার নেই।’

হাইকোর্টের আইনজীবী হওয়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের আইনজীবী হওয়ার পরীক্ষা দিতে হলেও আগে প্রার্থীকে জজকোর্টের আইনজীবী হিসেবে এনরোল্ড হতে হয়। কিন্তু এই গেজেটের মাধ্যমে যাকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী ঘোষণা করা হয়েছে, তিনি তো জজকোর্টেরই এনরোল্ড আইনজীবী নন।’

তিনি বলেন, ‘এনরোলমেন্ট কমিটি যদি কাউকে ফেল করান, তাহলে বারের এক্সিকিউটিভ কমিটি এই ধারায় কাউকে সরাসরি আইনজীবী ঘোষণা করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই গেজেটে যাকে আইনজীবী ঘোষণা করা হয়েছে, তাকে এনরোলমেন্ট কমিটি ফেল করিয়েছেন বলে কোন কাগজতো এক্সিকিউটিভ কমিটির কাছে নেই।’

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘রিটে সংশ্লিষ্ট এই ধারাটিও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। কারণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য এনরোলমেন্ট কমিটি করা হয় একজন বিচারপতির নেতৃত্বে। কিন্তু এই ধারার বলে বিচারপতির নেতৃত্বাধীন এনরোলমেন্ট কমিটির সিদ্ধান্ত এড়িয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে পারে এক্সিকিউটিভ কমিটি। এটা তো হওয়া উচিত নয়।’

এমএ/টিএফ

আরও পড়ুন