• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৪, ২০১৯, ০৩:৫৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৫, ২০১৯, ০১:৩৮ এএম

গর্ভবতী মায়েদের রোজা রাখার ক্ষেত্রে করনীয়

গর্ভবতী মায়েদের রোজা রাখার ক্ষেত্রে করনীয়

 যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে

যদি একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভকালীন তেমন কোন জটিলতা না থেকে থাকে তবে তিনি সিয়াম পালন করতে পারেন।তবে ইফতারির পর থেকে সেহেরি পর্যন্ত ফ্লুয়িড ইন্টেক এবং অন্যান্য দরকারী পুষ্টির যেন ঘাটতি না হয় সেই বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে।তবে রোজা রাখা কালীন যদি প্রচন্ড দুর্বল,ডিহাইড্রেশন বা প্রচণ্ড মাথা ব্যথা অনুভূত হয় তবে রোজা রাখার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে।সেক্ষেত্রে,রোজা ছেড়ে দেয়া ভাল হবে।গর্ভাবস্থার ১ম এবং শেষের ৩ মাস রোজা না রাখাই ভাল।মাঝের ৩ মাস রোজা রাখার জন্য বেশ নিরাপদ।যদিও গর্ভকালীন পুরো সময়টা বেশ জটিল তবে তুলনামূলক ভাবে ১ম এবং শেষের ৩ মাস বেশি জটিল।

যেসব গর্ভবতী মায়েরা নিজে ওজন হীনতায় ভুগছেন পাশাপাশি গর্ভের শিশুর ও ওজন কম তাদের জন্য সিয়াম পালন না করায় ভালো।কেননা,এই ধরণের মায়েদের বিভিন্ন ধরণের জটিলটা থাকে।আর দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে,গর্ভস্থ শিশুর দেহে জরুরী পুষ্টি সরবরাহ ব্যহত হয়।যাদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস দেখা দিয়েছে তাদের রোজা না রাখায় ভালো।আর রাখতে চাইলে অবশ্যয়ই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

রোজা রাখা অবস্থায় খেয়াল রাখতে হবে গর্ভস্থ শিশুর মুভমেন্ট ঠিক আছে কিনা?যদি রোজা রাখা অবস্থায় শিশুর মুভমেন্ট কমে যায় তবে রোজা না রাখা ভালো।আর মুভমেন্ট যদি একেবারে কমে যায়,দেরী না করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।যেসব গর্ভবতী মায়েরা উচ্চ রক্তচাপের মেডিসিন নিচ্ছেন,তারা রোজা না রাখলে ভালো করবেন।যেসব মায়েরা স্তন্যদান করছেন তাদের বাচ্চার বয়স ৬ মাস হয়ে গেলে নিশ্চিন্তে রোজা রাখতে পারেন।তবে যাদের বাচ্চার বয়স ৪ মাসের কম তারা একটু খেয়াল করবেন রোজা থাকা অবস্থায় বাচ্চা তার চাহিদা মত বুকের দুধ পাচ্ছে কিনা?যদি ঠিক মত বুকের দুধ পায় তবে নিশ্চিন্তে রোজা রাখা যাবে।

গর্ভবতী মায়েদের ইফতার

ইফতারে গর্ভবতী মায়েদের এমন সব খাবার গ্রহন করা উচিত যেন তা দ্রত শক্তি যোগানোর পাশাপাশি পানির চাহিদা পূরণ করতে পারে।
গর্ভবতী মায়েরা ইফতারিতে খেজুর,চিড়া,দই,কলা,ডাবের পানি,ফলের রস,লাচ্ছি খেতে পারেন।চিকেন ভেজিটেবল স্যুপ বা যেকোন ধরণের ঘরে তৈরি স্যুপ গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভীষণ উপকারী।ইফতারিতে ছোলা সিদ্ধ,বিভিন্ন প্রকার হাফ মুঠো বাদামের সাথে ১ কাপ দুধ বা পুডিং স্বাস্থ্যের জন্য ভাল বলে বিবেচিত।পাশাপাশি,এক কাপ মিক্স ফ্রুট রাখবেন ইফতারিতে।

গর্ভবতী মায়েদের রাতের খাবার

অনেকেই ইফতারির পর আর কোন কিছু খেতে চাননা।বিষয়টি ঠিক নয়,বরং ইফতারিতে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু খাবেন বাকিটা খাবেন তারাবির নামাজ আদায়ের পর।রাতের খাবারে লাল চালের ১/২ -১ কাপ ভাতের সাথে আপনার হাতের তালুর সাইজ যতটুকু তেমন পরিমানে কাটা বাহাড় ছাড়া মাছ বা মাংস,সাথে থাকবে সব্জি এবং ডাল।আর হ্যাঁ,পানি পান করতে ভুলবেন না।

গর্ভবতী মায়েদের সেহেরি

রোজা রাখতে চাইলে অবশ্যয় সেহেরি করতে হবে।সেহেরিতে রাতের খাবারের মত ভাত বা রূটি খাওয়া যাবে,সাথে সব্জি,ডাল মাছ বা মাংস থাকবে।সেহেরিতে দুধ বা দই খাওয়া ভালো। সেহেরি যত দেরীতে করা যায় ততই ভালো।সেহেরির জন্য ওঠার পর অল্প অল্প করে পানি পান করবেন আর একদম শেষের দিকে দুটো খেজুর খাবেন। এই ধরণের সুষম খাবার গুলো সারাদিন ব্যাপি শরীরে এনার্জি প্রদান করে পাশাপাশি ক্ষুধার ভাব ও কমায়।

সতর্কতা

যেসব গর্ভবতী মায়েরা রোজা পালন করতে চান তারা যথাসম্ভব ঠাণ্ডা পরিবেশে থাকার চেষ্টা করবেন।প্রয়োজন না থাকলে রোদে বের না হওয়া ভাল।ইফতারি,সেহেরি এবং রাতে সুষম খাবার গ্রহনের পাশাপাশি যথেষ্ট পরিমানে পানি পান করতে হবে।গর্ভস্থ শিশুর মুভমেন্টের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।যেকোন ধরণের জটিলতা বা খারাপ লাগা শুরু হলে রোজা ছেড়ে দিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
যেহেতু,গর্ভকালীন সময়টা জীবনের যেকোন সময় থেকে ভিন্ন এবং সাধারণ সময়ের থেকে খাদ্য বা পানীয়র চাহিদা এই সময় বেড়ে যায়।তাই,এই গরমে রোজা রাখার ক্ষেত্রে মায়েদের বাড়তি সতর্কতা গ্রহন করা উচিত এবং যেকোন ঝুঁকির ব্যাপারে ও সচেতন থাকা উচিত।
 
লেখক : পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড