ডায়াবেটিস আক্রান্তদের কি ধরনের ব্যায়াম করতে পারবেন এটা মূলত নির্ভর করবে রোগীর স্বাস্থ্যের অবস্থার ওপর। সবচেয়ে ভাল হয় একজন ডাক্তারকে সম্প্রতি করা বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল টেস্টের রিপোর্ট দেখিয়ে নিশ্চিত হওয়া কোন ধরনের ব্যায়ামগুলো বিশেষভাবে উপযোগী। ডায়াবেটিস রোগীর স্বাস্থ্যের অবস্থা খুব বেশি জটিল না থাকলে এই ৪ ধরনের ব্যায়াম করতে পারেন। পরামর্শ দিয়েছেন বেক্সিমকো ফার্মার পুষ্টিবিদ
আছিয়া পারভীন আলী শম্পা
এরোবিক
সাধারণভাবে ব্যায়াম বলতে যেগুলোকে বোঝায় তাহলো এরোবিক ব্যায়াম। যেমন- হাঁটা, দৌড়ানো, জগিং, বাইসাইকেল চালান, সাঁতার কাটা ইত্যাদি।
এই ব্যায়ামে শরীরের মাংসপেশি অনেকক্ষণ ধরে কাজ করে ফলে শক্তিক্ষয় হয়। এ ধরনের ব্যায়াম করার ফলে নাড়ির গতি এবং শ্বাস-প্রশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
স্ট্রেংথেনিং
স্ট্রেংথ মানে শক্তি। মাংসপেশির শক্তি বাড়ানোর জন্য এ ধরনের ব্যায়াম। এ ব্যায়ামে কাজ করতে হয় বেশি যেমন- ওজন তোলা, বাস্প্রিংটানা ইত্যাদি। তবে এর আগে এমন ধরনের ব্যায়াম করার অভ্যাস না থাকলে হুট করে এই ধরনের ব্যায়াম করা যাবে না।
স্ট্রেচিং
মাংসপেশি এবং গিটের জড়তা কাটিয়ে সচল করাই হলো এ ব্যায়ামের উদ্দেশ্য। এরোবিক ব্যায়াম শুরু করার আগে স্ট্রেচিং করা উচিত।
ব্যালান্সিং
ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য এ ব্যায়াম। যেমন- একপায়ের ওপর দাঁড়ানো। এ ব্যায়াম চলাচল করতে সাহায্য করে এবং পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়া থেকে রক্ষা করে।
সব ধরনের ব্যায়াম সব ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপযোগী নয়। সুতরাং কোন ধরনের ডায়াবেটিস রোগীর জন্য কোন ধরনের ব্যায়াম উপযোগী সে বিষয়ে কিছু গাইড লাইন দেয়া হলো।
যেসব টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস ছাড়া অন্য কোনও ধরনের জটিলতা নেই তারা নিচের যে কোনও ধরনের ব্যায়াম করতে পারেন—
অপশন |
ব্যায়াম |
কতক্ষণ |
সপ্তাহে কত দিন |
১ |
দ্রুত হাঁটা |
৩০-৪৫ মিনিট |
প্রতিদিন বা ৫ দিন |
২ |
সাঁতার |
১০ মিনিট |
সপ্তাহে ৩ দিন |
৩ |
দৌড়ানো |
৩০ মিনিট |
প্রতিদিন |
৪ |
ভারত্তোলন |
১৫-৪৫ মিনিট |
সপ্তাহে ৩ দিন |
৫ |
সাইকেলিং |
৩০ মিনিট |
প্রতিদিন |
যেসব ডায়াবেটিস রোগীদের পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি আছে অর্থাৎ ডায়াবেটিসের সাথে নার্ভের বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এক্সারসাইজের গাইডলাইন—
যেসব ব্যায়াম করা উচিত না |
যেসব ব্যায়াম করতে পারবেন |
ট্রেডমিল |
সাঁতার |
দীর্ঘক্ষণ হাঁটা |
বাইসাইকেল চালানো |
জগিং |
দাঁড়টানা |
স্টেপ এক্সারসাইজ |
চেয়ার এবং আর্ম এক্সারসাইজ |
যেসব ডায়াবেটিস রোগীদের পেরিফেরাল নেফরোপ্যাথি অর্থাৎ ডায়াবেটিস এবং কিডনির সমস্যা উভয় ধরনের জটিলতা আছে তাদের জন্য এক্সারসাইজ গাইডলাইন—
যেসব ব্যায়াম করা উচিত না |
যেসব ব্যায়াম করতে পারবেন |
তীব্র গতি সম্পন্ন ব্যায়াম (হাই ইন্টেনসিটি ফর্মস অব এক্সারসাইজ) যেমন- |
নিন্ম থেকে মাঝারি গতি সম্পন্ন ব্যায়াম (লো টু মডারেট ইন্টেনসিটি ফর্মস অব এক্সারসাইজ) যেমন- |
রেস ওয়াকিং/জগিং/ দৌড়ানো |
প্রতি ঘণ্টায় ৩ মাইলের বেশি গতিতে হাঁটা |
টেনিস (সিঙ্গেল) |
টেনিস (ডাবল) |
প্রতি ঘণ্টায় ১০ মাইল বা তার বেশি গতিতে বাইসাইকেল চালানো |
প্রতি ঘণ্টায় ১০ মাইল বা তার কম গতিতে বাইসাইকেল চালানো |
হেভি গার্ডেনিং(অনেকক্ষণ ধরে খনন করা) |
জেনারেল গার্ডেনিং |
যেসব ডায়াবেটিস রোগীদের পেরিফেরাল রেটিনোপ্যাথি অর্থাৎ যেসব ডায়াবেটিস রোগীদের চোখের জটিলতা আছে তাদের জন্য এক্সারসাইজ গাইডলাইন—
যেসব ব্যায়াম করা উচিত না |
যেসব ব্যায়াম করতে পারবেন |
কঠোর কার্যক্রম (স্ট্রেনিউআস এক্টিভিটি) |
লো ইমপ্যাক্ট কারডিওভাস্কুলার কন্ডিশনিং যেমন |
ভারত্তোলন |
সাঁতার |
জগিং |
হাঁটা |
হাই ইমপ্যাক্ট এরবিক এক্সারসাইজ যেমন- |
লো ইমপ্যাক্ট এরবিক এক্সারসাইজ যেমন- |
দঁড়ি লাফানো |
দাঁড় টানা |
লং জাম্প |
সাইকেলিং/সাইকেল চালানো |
তবে কেবল ওপরের ব্যায়ামগুলো করলেই অ্যাক্টিভ বা কর্মক্ষম থাকা যাবে এমন নয়। সারাদিনে নিচের ছোট ছোট অনেক কাজের মাধ্যমেও একজন ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে কর্মক্ষম রাখতে পারেন।
লেখক ● পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা
এসএমএম