• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০১৯, ০১:৩১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১১, ২০১৯, ০১:৩১ পিএম

রোহিঙ্গা ফেরত নিয়ে মিয়ানমারের ঠগবাজি

রোহিঙ্গা ফেরত নিয়ে মিয়ানমারের ঠগবাজি
রোহিঙ্গা শরণার্থী-ফাইল ছবি

মিয়ানমারের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশের আশ্রয় ক্যাম্পগুলো থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত চার শতাধিক রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় রাখাইন ফিরে গেছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের দাবি দু’দেশের মধ্যকার চুক্তি অনুসরণ করে এক জন রোহিঙ্গাও মিয়ানমার ফিরে যায় নি। কিন্তু রোহিঙ্গা ফেরা না ফেরা নিয়ে বাস্তবে কী ঘটছে তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) ঢাকার মিয়ানমার দূতাবাসের ফেসবুক পেজে জানান হয়, ১ নভেম্বরও বাংলাদশের আশ্রয় ক্যাম্পগুলো থেকে ১৭ জন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় রাখাইনে ফিরে আসে। স্থল সীমান্তের তুমব্রু লেটওয়া অভ্যর্থনা কেন্দ্রে মুসলিম প্রত্যাবর্তনকারীদের অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে। গত ২২ অক্টোবর ঘুমধুম সীমান্তের মৈত্রী সেতু দিয়ে ২৯ রোহিঙ্গা ফিরে যাওয়ার কথা প্রচার করে।

কিন্তু বিজিবি জানান, ওই সেতুর দুই পাশে দু’দেশের লোহার গেট রয়েছে। গেট খুলতে দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের সম্মতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু ওইদিন বাংলাদেশ অংশের সীমান্ত গেট তালাবদ্ধ ছিল। যে রোহিঙ্গাদের ওই সেতু দিয়ে যাওয়ার দৃশ্য প্রচার করা হয় তা হয়ত রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের ট্রায়াল দিয়ে ফটোসেশন করা বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

মিয়ানমারে যারা মোটামুটি কিছু জমির মালিক, সচ্ছল, ব্যবসা রয়েছে, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে মোটামুটি সচেতন তারাই মূলত রাখাইন ফিরে যেতে বেশি তৎপর। কিছু রোহিঙ্গার মতে, যাদের সঙ্গে মিয়ানমার সেনা, সীমান্তরক্ষী ও পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে তারাই ফিরে যেতে চাচ্ছে। আবার তাদের অনেকেই ইয়াবাসহ নানা চোরাচালারি ব্যবসা করতো। মূলত তারাই রাখাইনে ফিরে যেতে আগ্রহী।

এক শ্রেণির রোহিঙ্গা যারা বাংলাদেশের আশ্রয় ক্যাম্পে থেকে মিয়ানমারের সঙ্গে ইয়াবাসহ নানা অবৈধ ব্যবসা করে প্রচুর অর্থের মালিক হয়েছে- তারাও ফিরে যেতে চায়। কিন্তু অধিকাংশ রোহিঙ্গা অতীতের মত গতানুগতিক পন্থায় ফিরে যেতে নারাজ। তাদের মতে, ১৯৭৮, ১৯৯৩ সালেও মিয়ানমারের আশ্বাসে উদ্বাস্তু জীবনের ইতি টেনে রোহিঙ্গারা দেশ ফিরে গিয়েছিল।

রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার নুরুল আলমসহ অনেকে জানান, পারলে এখনই ফিরে যেতাম। কিন্তু ফিরে যাওয়ার কয়েক বছর পর আবার নতুন কোনও ইস্যুতে নির্যাতন করে দেশ ছাড়া করবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়। আমরা তো আর বারবার বাংলাদেশের মানুষের বোঝা হয়ে থাকতে পারি না। পক্ষান্তরে বাংলাদেশও বারবার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে নিজেদের সমস্যা বাড়াতে পারে না। রোহিঙ্গারা সবকিছু জানার পরও কি করবে তা বুঝতে পারছে না।

তারা জানান, গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের আশ্রয় ক্যাম্প থেকে শত শত রোহিঙ্গা ফেরত যাওয়ার মিয়ানমারের দাবি বানোয়াট ও জালিয়াতিপূর্ণ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকে ৬০-৭০ জনের মত রোহিঙ্গা গোপনে ফিরে গেছে। যারা গেছে তারা মিয়ানমারের আর্মিদের সাথে পার্টনারে ইয়াবা ব্যবসা করে থাকে।

তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তালিকাভুক্ত হয়ে পালিয়ে থেকে মিয়ানমার আর্মিকে দালালের মাধ্যমে টাকা দিয়ে চলে যায় বলে রোহিঙ্গারা জানান। মিয়ানমারের ৪ শতাধিক রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ফিরে যাওয়ার দাবি ঠগবাজি ছাড়া কিছু না। বাংলাদেশ থেকে কিছু রোহিঙ্গা সমুদ্র পথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্য যায়। তাদের কিছু মিয়ানমার উপকূলে ধরা পড়ে। অনেক রোহিঙ্গা মিয়ানমারের জেলে রয়েছে।

সেখান থেকে অনেকের সাজা শেষ হলে তাদের থেকে কিছু রোহিঙ্গােকে টাকার লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে ফেরত যায় বলে দেখায়। রাখাইনে ১ লাখ ২০ হাজারের মত রোহিঙ্গা ইন্টারন্যাল ডিসপ্লেস ক্যাম্পে রয়েছে। সেখানে বেশ কিছু  রোহিঙ্গাকে বিভিন্ন মামলার ভয় দেখিয়ে এনভিসি কার্ড দিচ্ছে সরকার। কার্যত- এসব রোহিঙ্গাদের ধরে তুমব্রু স্থল ও নাগা খুইয়া বা নাগপুরা নদী পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে থেকে স্বেচ্ছায়, সউদ্যোগে মিয়ানমার ফিরে যাওয়ার  মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে রোহিঙ্গারা জানান।

এসএমএম

আরও পড়ুন