• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০১৯, ০৮:৫২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২৭, ২০১৯, ০৮:৫৩ পিএম

দণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গির মাথায় আইএসের টুপি

আসামিদের কাছে ঘেঁষার সুযোগই ছিল না জনসাধারণের

আসামিদের কাছে ঘেঁষার সুযোগই ছিল না জনসাধারণের
আদালতে নিরাপত্তা ঘেরাটোপের মধ্যে এক আসামির মাথায় আইএস লোগোসদৃশ টুপি-ছবি : কাশেম হারুন

ইসলামিক স্টেট এর লোগো-ইন্টারনেট

গুলশান হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙনেই দণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গির মাথায় ইসলামিক স্টেট-আইএসের লোগো সম্বলিত টুপি দেখা গেছে। অথচ যখন তাদের আদালতে নেয়া হয় তখন এই টুপি ছিল না। রায় ঘোষণা পর যখন তাদের প্রিজনভ্যানে উঠানো হয়, তখন টুপির বিষয়টি নজরে আসে। তারপর থেকে এই নিয়ে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। খোদ আইন-শৃঙ্খলারক্ষকারী বাহিনীর কারও কাছ থেকে তাদের কাছে এই টুপি গেল কি- না, এমন প্রশ্নও উঠেছে। তার কারণ কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে তাদের ধারে-কাছে ঘেঁষার কোনও সুযোগ ছিল না সাধারণ মানুষের। তাই প্রশ্ন উঠেছে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে কে বা কাহারা জঙ্গিদের কাছে গিয়ে ওই টুপি সরবরাহ করেছে।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) বহুল আলোচিত এ মামলার রায় দেয়া হয়। এতে জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, আবদুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেয়া হয়।

হলি আর্টিজান হামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মাথায় আইএস লোগোসদৃশ কালো টুপি

রায় শেষে যখন আসামিদের মহানগর দায়রা জজ আদালতের পঞ্চম তলায় সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের এজলাস থেকে নামিয়ে আনা হচ্ছিল, তখন আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যানের মাথায় দেখা যায় একটি কালো টুপি। এ টুপিতে আইএসের পতাকার ঢঙে আরবি লেখা ছিল। পাশেই পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু কেউ সেদিকে মনোযোগী ছিলেন না। আসামিদের কারাগারে নেয়ার সময় প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধীর মাথাতেও একই টুপি দেখা যায়। তবে আদালতে আনার সময় ওই দুজনের মাথায় কোনও টুপি দেখা যায়নি। 

প্রশ্ন উঠেছে— কারাগার থেকে আদালতে আনার সময় তল্লাশি ছাড়াই তাদের আদালতে আনা হয়েছিল, নাকি দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি থাকাবস্থায়ই এই টুপি পেয়েছেন তারা। যদি কারাগারেও এ টুপি পেয়ে থাকেন তারা, তাহলে পেলেন কীভাবে?

ইন্টারনেট থেকে পাওয়া বাচ্চাদের টি-শার্ট ও ক্যাপ। যেখানে দেখা েযাচ্ছে আইএসের লোগো

কারাগার থেকে যখন পরিবহন করে তাদের আদালতে আনা হয়, তখন তাদের আশপাশে কোনও জনসাধারণ ছিলেন না। এমনকি ঘেঁষার কোনও রকম সুযোগও ছিলো না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই ছিলেন। তাহলে কী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ এই টুপি তাদের সরবরাহ করেছেন? এমন প্রশ্নও উঠেছে বেশ জোরে-শোরে। 

যদি অন্যকেউ তাদের এই টুপি দিয়েও যান, তাহলে এতো নিরাপত্তার মধ্যে কীভাবে এ ঘটনা ঘটল? আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তখন মনযোগ কোথায় ছিল? এমন প্রশ্নও আসছে ঘুরে ফিরে।

তবে আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় কীভাবে ওই টুপি তারা পেলেন- তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য এসেছে।

পুলিশের উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) জাফর আহমেদ বলেন, ভেবেছিলাম ধর্মীয় টুপি। পরে বিষয়টি নজরে আসে। আদালত থেকে এ ধরনের টুপি আসামিদের হাতে যাওয়ার সুযোগ নেই।

জাফর আহমেদ বলেন, ওই টুপি আসামিরা সঙ্গে করে এনেছে, নাকি আদালত চত্বরে কেউ তাদের দিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এজন্য আদালত এলাকার সিসি টিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখা হচ্ছে।

কারাগার থেকে এ ধরনের কোনও টুপি পরে কেউ যায়নি উল্লেখ করে জেলার মাহবুব আলম বলেন, আসামিদের মধ্যে শুধু একজন আমাদের এখান থেকে সাদা টুপি পরে গেছে। বাকি সবার মাথা খালি ছিল। রায় ঘোষণার পর আসামিরা যখন কারাগারে এসেছে, তখনও তাদের কাছে কোনও কালো টুপি পাওয়া যায়নি।

ইন্টারনেট থেকে পাওয়া এক সমর্থকের মাথায় আইএস লোগোসদৃশ মাংকি ক্যাপ 

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু বলেন, যেখান থেকে এদেরকে আদালতে আনা হয়েছে, এই টুপি কীভাবে পরল, এই জবাবটা তারাই দেবে।

কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দণ্ডিত আসামির মাথায় আইএসের লোগো সদৃশ্য  টুপি কীভাবে গেলো- তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। আইজি প্রিজনস ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে জানান, একজন অতিরিক্ত আইজিকে প্রধান করে তিন সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি কারাগারের বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। কমিটিকে পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ব্যাপারটার জোর তদন্ত হওয়া উচিৎ।

প্রিজনভ্যানে এক আসামির মাথায় আলোচিত সেই টুপি-ছবি : কাশেম হারুন

এই টুপি আইএসের টুপি নয় : মনিরুল

রাকিবুল হাসান রিগ্যানের মাথার আইসের মতো টুপি বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই টুপি আইএসের টুপি নয়।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।

মনিরুল ইসলাম বলেন, টুপিতে আরবিতে লেখা আছে ‘লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মদ’। তিনি দাবি করে বলেন, এটা আইএসের কোনও টুপি নেই। আমার জানা মতে, আইএসের সৃষ্টি থেকে এ যাবৎ পর্যন্ত কোনও টুপি তারা তৈরি করেনি। তারপরও তাদের কোনও টুপি আছে কি না, তা বিশ্লেষণ করে দেখব। পাশাপাশি কারো গাফিলতির কারণে এরকম টুপি এজলাসে এসেছে কি না- তা খতিয়ে দেখা হবে।

আরএম/এসএমএম

আরও পড়ুন