• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২১, ০৫:১৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২১, ০৬:২৭ পিএম

মোটরসাইকেল নিবন্ধন ফি অর্ধেক

আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে বিশৃঙ্খলা বাড়ার শঙ্কা

আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে বিশৃঙ্খলা বাড়ার শঙ্কা
ফাইল ছবি

সড়ক-মহাসড়কে এখন প্রচুর মোটরসাইকেল দেখা যায়। হুটহাট লেন পরিবর্তন, সিগন্যাল না মানা, ফুটপাতের ওপর দিয়ে চালানোসহ বেপরোয়া গতি নিয়ে মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার খবরও শোনা যায় প্রায় প্রতিদিনই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কে ৩০ ভাগ দুর্ঘটনাই মোটরসাইকেলে হয়ে থাকে।

মোটরসাইকেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনা

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালে ঢাকা মেট্রোতে মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে ৭৮ হাজার ৫৫১টি। করোনা পরিস্থিতিতে দিনে গড়ে ২১৮টি মোটরসাইকেল রাস্তায় নেমেছে। বর্তমানে রাজধানীতে ৭ লাখ ৯৫ হাজার ১৯৬টি দুই চাকার বাহন চলাচল করছে। 

অপর দিকে দেশে গত বছর মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে ৩ লাখ ১১ হাজার ১৬টি। আর ২০২০ সাল নাগাদ দেশে নিবন্ধিত হয়েছে ৩১ লাখ ২৫ হাজার ৬৫৩টি। 

মোটরসাইকেল নিবন্ধনের পাশাপাশি সমানতালে বাড়ছে দুর্ঘটনার হার। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলছে, ২০২০ সালে দেশে ১ হাজার ৩৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ১ হাজার ৪৬৩ জন নিহত হয়েছে। অদক্ষ চালক, বেপরোয়া গতি, ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করা এবং অসাবধানতাই এসব দুর্ঘটনার কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

আতঙ্কের মাঝেই কমেছে মোটরসাইকেল নিবন্ধন ফি

দেশে মোটরসাইকেল নিবন্ধন ফি কমেছে অর্ধেক। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সম্প্রতি নিবন্ধন মাশুল কমানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সম্প্রতি তা মেনে নিয়েছে। মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। 

মোটরসাইকেল কেনার সঙ্গে নিবন্ধন মাশুল, কর ও মূল্য সংযোজন করসহ (ভ্যাট) যত ধরনের খরচ রয়েছে, প্রতিবেশী সব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে তা চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি বলে অনেকদিন ধরেই ফি কমানোর বিষয়টি আলোচনায় ছিল। বাংলাদেশ মোটরসাইকেল সংযোজনকারী ও উৎপাদক সমিতি (বিএমএএমএ) বছরের পর বছর ধরে সরকারকে এ কথা জানিয়ে আসছিল। সরকার এবার সমিতির কিছু কথা আমলে নিয়ে মোটরসাইকেলের নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) ফি প্রায় অর্ধেক কমাচ্ছে, কিন্তু তাতে সড়কে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়বে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

নিবন্ধন ফি কমায় বাড়বে মোটরসাইকেলের সংখ্যা

নিবন্ধন ফি কমায় উল্লেখযোগ্য হারে সড়কে মোটরসাইকেল বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেজ্ঞরা। তাদের মতে, দুর্ঘটনার সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে। তাই নিবন্ধন ফি কমানোর সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলছেন তারা। 

দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, “নিবন্ধন ফি কমানোর বিষয়টি উদ্বেগের। আমরা চাই সড়কে মোটরসাইকেলের সংখ্যা কমে যাক। এতে করে দুর্ঘটনা কমে যাবে। নিবন্ধন ফি কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সরকার কেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে—আমার বোধগম্য নয়।”

মোটরসাইকেল কমানোর জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেল বিক্রি করা যাবে না। সেই সঙ্গে লাইসেন্স পেতে যে পরীক্ষা নিয়ে থাকে বিআরটিএ, সেটা যেন মানসম্মন হয়। ঘুষ ছাড়া যোগ্যতার ভিত্তিতে লাইসেন্স দেওয়া হয়, তাহলে মোটরসাইকেলের সংখ্যা কমে যাবে। এদেশে কেউ চাইলেই লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে। এটা যেন না হয়।”

উন্নত মানের বাস সার্ভিস চালু হলে ঢাকাসহ সারা দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।

এদিকে ঢাকা শহরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে যানজট ও রাইড শেয়ারিং অ্যাপের জনপ্রিয়তাকে দুষছেন বুয়েটের অধ্যাপক শামসুল হক। তিনি মনে করেন, নিবন্ধন ফি কমে যাওয়ায় অনেক অদক্ষ চালক মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়বেন। 

শামসুল হক বলেন, “রাইড শেয়ার জনপ্রিয় হওয়ার ফলে দেখা যাচ্ছে যে যার কোনো ধরনের দক্ষতা নেই, সেও রাতারাতি মোটরসাইকেলের ড্রাইভার হয়ে যাচ্ছে। আনাড়ি, বয়সে তরুণরা অপরিচিত রাস্তায় যখন চালাতে আসে তখন ঝুঁকি তৈরি হয়। এখন আবার নিবন্ধন ফি কমিয়ে দিয়েছে। এতে করে ঢাকার রাস্তায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এত সংখ্যক মোটরসাইকেল নিয়ম না মেনে যখন চলাচল করবে তখনই দুর্ঘটনা ঘটবে।”

তবে বিআরটিএর রোড সেফটি শাখার পরিচালক গোলাম রব্বানি বলছেন ভিন্ন কথা। তার মতে, নিবন্ধন ফি কমানোর মাধ্যমে অনেক অবৈধ মোটরসাইকেল বৈধ হবে। 

রব্বানি বলেন, “নিবন্ধন ফি কমানোর সিদ্ধান্ত সরকারিভাবে নেওয়া হয়েছে। এর মানে এই নয় যে, মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়ে যাবে। যে রকম ছিল সে রকমই থাকবে। আমাদের উদ্দেশ্য, যেসব অবৈধ মোটরসাইকেল রাস্তায় চলছে সেগুলো নিবন্ধিত হবে। ঢাকাসহ সারা দেশে অসংখ্য অবৈধ মোটরসাইকেল চলে। তাদের সুযোগ দেওয়ার জন্যই এটা করা হয়েছে।” 

বিআরটিএর এ কর্মকর্তা মনে করেন, চালকরা যদি নিয়ম মেনে মাথায় হেলমেট পরে বাইক চালান এবং পথচারীরা যদি সচেতন হন, তাহলে দ্রুত সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হবে।