• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২১, ১২:১৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১৫, ২০২২, ০৬:১৭ এএম

নাগিনীরা ফেলেছিল বিষাক্ত নিঃশ্বাস

নাগিনীরা ফেলেছিল বিষাক্ত নিঃশ্বাস

বাঙালি জাতির শৃঙ্খল মোচনের মহাসংগ্রামের স্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞের শিকার হতে হয় ৭৫-এর ১৫ আগস্ট— যা ছিল  তাঁর বিরুদ্ধে চলা দীর্ঘ ষড়যন্ত্রের একটি চূড়ান্ত পর্যায়। মূলত বঙ্গবন্ধুকে রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা ও ধ্বংস করে দেয়া, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়া, ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে নির্মূল করার অপচেষ্টা এবং সামরিক আদালতের ভেতরে ও বাইরে তাঁকে বারংবার হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল আরও বহু আগে থেকেই। এমনকি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ঢাকা ক্যাণ্টনমেন্টে তাঁকে রাখার সেই সময় তাঁকে হত্যার প্রস্তুতি ছিল ঘাতকদের। পাকিস্তানের কারাগারেও তাঁর কবর খোঁড়া হয়েছিল। স্বাধীনতার পরে তিনি যখন দেশে প্রত্যাবর্তন করবেন, তখনও তাঁর পেছনে ঘাতকরা আততায়ী লেলিয়ে দিয়েছিল তাঁকে হত্যা করবার জন্যে, ৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ভাষণের সময়ও পাকিস্তানি গুপ্তঘাতক দলের হত্যা ষড়যন্ত্র ধরা পড়ে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে এবং গ্রেফতার হয় সেই আততায়ীরা। দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের এই সব ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতা সর্বদাই প্রকট ছিল তাঁকে ঘিরে। কিন্ত ঘাতকরা বারবার ব্যর্থ হয়েছে; তবে থেমে থাকে নি তাদের ষড়যন্ত্র। বঙ্গবন্ধু প্রত্যেকবার তাদের সব ষড়যন্ত্রের নাগপাশ ছিন্ন করে বেরিয়েও এসেছেন। কারণ, তাঁর পেছনে সর্বদাই ছিল কোটি কোটি সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশের আপামর জনতার মধ্যমণি ও সকলের আশা-ভরসার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। সাধারণ মানুষের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আর বাঙালির ভালোবাসাই তাঁকে বারবার ফিরে আসতে সাহায্য করেছে তাদের কাছে। মানুষই যে ছিল তাঁর সব প্রেরণার জায়গা, সব কর্মের লক্ষ্যবস্তু। মানুষের মুক্তিই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র সাধনা ও আদর্শ—একমাত্র রাজনীতি।    

..............‘’..............

বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ষড়যন্ত্রের এমন নিচ্ছিদ্র জালের বিস্তার ঘটাতে থাকে যা সাধারণ দৃষ্টির অগোচরেই থেকে যায়। আর এই সব ষড়যন্ত্রের নেপথ্যের অন্যতম কারিগর হিসেবে সর্বদা কাজ করে গেছে ধূর্ত জেনারেল জিয়াউর রহমান। সে ছিল ঠাণ্ডা মাথার খুনি। সিরিয়াল কিলার। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে গঠিত প্ল্যানিং সেলের অন্যতম সদস্য ছিল এই জিয়া

..............‘’..............

বঙ্গবন্ধুও অনুমান করতেন তাঁর বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্রের ব্যাপার। একবার তিনি বিদেশি এক গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, কোনও এক অদৃশ্য আততায়ীর বুলেট সারাক্ষণ আমাকে তাড়া করে চলেছে। আমরা তাঁর এই বক্তব্যের প্রমাণ পাই ১৫ আগস্টে। ১৫ আগস্টের পরের দিনই যেই খবরে বাঙালি জাতি এবং সারা বিশ্ব এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞের খবরে নির্বাক ও হতবাক হয়ে যায়। কিন্ত তার আগে তাঁকে সব দিক দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দেবার নীলনকশা আমরা দেখতে পাই সর্বস্তরে। পাক-মার্কিন-সৌদি চক্রান্ত এবং চীনের নীরব সমর্থনে এ দেশের বিপথগামী শক্তিগুলো শুরু করে বিভিন্ন রকমের চক্রান্তের ফাঁদ তৈরির কাজ। বঙ্গবন্ধুকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে ক্রমাগত বন্ধু-পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের  থেকে নিঃসঙ্গ করে দেবার চক্রান্ত তৈরি করা হয়। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দলের মধ্যে অন্তর্কলহের বীজ বপন করা হয়, জাসদের মতো দলের উদ্ভব ঘটে, সন্ত্রাসী সংগঠন নকশাল এবং সর্বহারা পার্টি গজিয়ে ওঠে। চেষ্টা হয় রক্ষীবাহিনীকে নেতৃত্বশূন্য করার। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাবো, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট তৈরি করতে মার্কিনদের সহযোগিতায় এ দেশের সামরিক-বেসামরিক আমলাদের একাংশ কৃত্রিম সঙ্কটের সৃষ্টি করছিল; এ ছাড়াও সিআইএ এবং তাদের এদেশীয় দোসররা বঙ্গবন্ধুর সরকার এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে কত যে মিথ্যা গালগল্প ও গুজব ছড়িয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টিতে কীভাবে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে— আজ কারও অজানা নয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে যেন বড় ধরনের কোনো গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি না হয়, এ বিষয়টিকেও তারা নীলনকশায় অন্তর্ভুক্ত করে। বস্তুত, বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ষড়যন্ত্রের এমন নিচ্ছিদ্র জালের বিস্তার ঘটাতে থাকে যা সাধারণ দৃষ্টির অগোচরেই থেকে যায়। আর এই সব ষড়যন্ত্রের নেপথ্যের অন্যতম কারিগর হিসেবে সর্বদা কাজ করে গেছে ধূর্ত জেনারেল জিয়াউর রহমান। সে ছিল ঠাণ্ডা মাথার খুনি। সিরিয়াল কিলার। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে গঠিত প্ল্যানিং সেলের অন্যতম সদস্য ছিল এই জিয়া। ক্ষমতা দখলের পর ১৯৭৭ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত তার গঠিত সামরিক আদালতের নামে প্রহসনের বিচারে ১ হাজার ১৪৩ জন সৈনিক ও অফিসারকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে হত্যা করে এই পাষণ্ড। প্রায় বিনা বিচারেই তাদেরকে ফাঁসিকাষ্ঠে তুলে দেয়া হয়। একেক জনের বিচারের শুনানির জন্য এক মিনিটের বেশি ব্যয় করা হয়নি। এগুলো আমার মন গড়া কথা নয়। সেই বিচারের শুনানির যে দলিল আছে—তা থেকেই জানা যাবে এই ক্যামেরা ট্রায়ালের বিস্তারিত বিবরণ।  

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (জন্ম : ১৭ মার্চ ১৯২০ ।। মৃত্যু : ১৫ আগস্ট ১৯৭৫)

মার্কিন সিআইএ’র কার্যক্রম শুধু সাম্রাজ্যবাদী সামরিক হামলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; আরও নানারকম অভিনব উপায়ে বিশ্বের দেশে দেশে, বিশেষভাবে তৃতীয় বিশ্বের প্রান্তিক ও অনুন্নত রাষ্ট্রগুলোর ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম রেখেছে, অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতার মাধ্যমে হত্যা অথবা ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছে, সেটি শুধু কয়েক বছরের ঘটনা নয়। গত প্রায় সাত দশক ধরে এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, এমনকি ইউরোপের অনেক দেশেও তাদের বহুবিধ অপকর্ম চলেছে। এদের অপকর্মের তালিকা শেষ হওয়ার নয়। হত্যা, গুপ্তহত্যা, যুদ্ধ ও ষড়যন্ত্র এসবই তাদের অপকর্মের ফিরিস্তি। তাদের স্বার্থের জন্যে যেখানে যেটা দরকার, তারা সেখানে সেটাই করে চলেছে।

এই সিআইএ’র উদ্যোগেই তৈরি হয়েছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার ব্লুপ্রিন্ট এবং গঠিত হয়েছিল প্ল্যানিং সেল। আর এসব ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল মার্কিন দূতাবাস। মার্কিন দূতাবাসের উচ্চপদস্থ কূটনৈতিক সূত্রে প্রকাশ—বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িতদের মার্কিন দূতাবাসের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল— আর্চার কেন্ট ব্লাডের লিখিত দলিল থকে এই তথ্য পাওয়া যায়। ১৯৭৪ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭৫-এর জানুয়ারি মাসে দূতাবাসের মধ্যে দফায় দফায় মিটিং হয়। মার্কিন গোয়েন্দা চক্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার সঙ্গে আমেরিকা কীভাবে, কতখানি যুক্ত— তা প্রকাশ করেছেন মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফসুল্টজ তাঁর ‘বাংলাদেশ : দ্যা আনফিনিসড রেভ্যুলেশন’ গ্রন্থে। লিফসুল্টজ বলেছেন, দূতাবাসের এই প্রকাশ্য মিটিং বন্ধ হয়ে গেলেও ঢাকাস্থ সিআইএর স্টেশন চিফ ফিলিপ চেরী তার চ্যানেল ওপেন রাখেন। লিফসুল্টজ নিউইয়র্কের ‘দি নেশন’ পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক কাই বার্ডের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন সমীক্ষা চালিয়ে তাঁরা এই সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছান যে, বঙ্গবন্ধু হত্যায় আমেরিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এই ফিলিপ চেরিই ভিয়েতনামের গণহত্যার অন্যতম নায়ক ছিল। তাঁকে কিসিঞ্জার বাংলাদেশে নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু হত্যার নীল নকশা বাস্তবায়ন করার জন্য।  

ঢাকার সিআইএ’র স্টেশন চিফ (১৯৭৪-১৯৭৬) ফিলিফ চেরি ভারতীয় সাংবাদিক পরেশ সাহাকে (ঢাকায়) বলেছেন, ঘাতক চক্রের সঙ্গে সিআইএর যোগাযোগটা এত ভালো ছিল যে, অভ্যুত্থানের খবর পেয়ে তারা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে পেরেছিলেন। ফিলিপ স্বীকার করেন যে, তিনি যখন যুক্তরাষ্ট্রে খবর পাঠান, তখনও (ঢাকায়) অভ্যুত্থান চলছিল। অন্যদিকে মার্কিন বিদেশ দফতরের জনৈক উচ্চপদস্থ অফিসার জানান, বঙ্গবন্ধুবিরোধী অভ্যুত্থানের সঙ্গে ফিলিপ চেরি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। বিদেশ দফতরের ওই অফিসার ও অন্যান্য সূত্র থেকে জানা যায়, ‘মোশতাক চক্রের সঙ্গে এই যোগাযোগ ছিল ১৯৭১ সালে, সেই কলকাতা থেকেই। তৎকালীন মার্কিন বিদেশ মন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশ-পাকিস্তানের একটি পৃথক শান্তি চুক্তি সম্পাদনের জন্য মোশতাক চক্রের সঙ্গে আলোচনা করেছিলো। ১৯৭১ সালে যাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার ব্লুপ্রিন্ট তৈরির পর প্ল্যানিং সেল গঠনের জন্য সিআইএ আবার তাদের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ করে।

..............‘’..............

একটি দিনের ষড়ষন্ত্র নয়, তিল তিল করে যে ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হয়েছিল, তারই উলঙ্গ প্রকাশ ছিল ১৫ আগস্ট। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের যেন মুখোশ উন্মোচিত না হয়; উপরন্ত তাদের বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শক্তিশালী ও ক্ষমতায়ন করা— এমন অসংখ্য নজীর আমরা দেখেছি ৭৫ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা অপশক্তিগুলোর হাতে। এভাবেই অন্ধকার গ্রাস করে ফেলে বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্নের দেশ-মাতৃকাকে

..............‘’..............

ঢাকায় নিযুক্ত সিআইএ’র স্টেশন চিফ ফিলিপ চেরি অপর এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ব্যাপারটা তিনি খুব ভালোভাবেই জানতেন। কিন্তু... চেরি তাঁর কথা শেষ করেননি। তা শেষ না করলেও বোঝা যায়, তিনি কি বলতে চেয়েও বলতে পারেননি। সম্ভবত তিনি বলতে চেয়েছিলেন, যা ঘটেছে সে সম্পর্কে সব কিছুই তাঁর আগে থেকেই জানা ছিল। কিন্ত সরকারি গোপনীয়তা রক্ষার জন্য সেসব কথা বলা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।

যাহোক—বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে যে আন্তর্জাতিক দুষ্টচক্র কাজ করে, তাদের প্রধান লক্ষ্যই ছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করবার জন্যে একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা। অর্থাৎ সব ক্ষেত্রে তাঁর জন্যে এক বিরুদ্ধ পরিবেশ তৈরি করা। আর সে কারণেই তাঁকে নিয়ে নানা রকমের প্রপাগান্ডা ও মিথ্যাচারের আশ্রয়ে তাঁকে জনবিচ্ছিন্ন করবার পাঁয়তারা পরিলক্ষিত হয় সর্বত্র। এই আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীর দলই বাংলাদেশে তাদের ক্রীতদাসদের দিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক, সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটিয়েছে। বাংলার মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রধান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এর উদ্দেশ্য ছিল একটাই। বাংলাদেশের পালের হাওয়াকে অন্য পথে ঘুরিয়ে দেয়া। বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী শিবিরের তল্পিবাহক করা। দেশকে আবার পাকিস্তানি আদলে ফিরিয়ে নেয়া। কিন্ত চক্রান্তকারীদের সেই উদ্দেশ্য যে পুরোপুরি সফল হয়নি, সময়ের পরিক্রমায় বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলার গৌরব ও সমৃদ্ধির পথে চলতে থাকা বাংলাদেশের আজকের চিত্রই তার প্রমাণ।   

বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে বিধ্বস্ত করা, বাঙালি চেতনাকে বিনষ্ট করা, অসাম্প্রদায়িক চেতনার বোধকে মূলোৎপাটন করার এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের সূচনা করা হয়েছিল এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়েই। এটি শুধু একটি দিনের ষড়ষন্ত্র নয়, তিল তিল করে যে ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হয়েছিল, তারই উলঙ্গ প্রকাশ ছিল ১৫ আগস্ট। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের যেন মুখোশ উন্মোচিত না হয়; উপরন্ত তাদের বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শক্তিশালী ও ক্ষমতায়ন করা— এমন অসংখ্য নজীর আমরা দেখেছি ৭৫ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা অপশক্তিগুলোর হাতে। এভাবেই অন্ধকার গ্রাস করে ফেলে বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্নের দেশ-মাতৃকাকে। কিন্ত আমরা তো জানি রাত যত ঘন হয়, ধীরে ধীরে ভোরের আগমনী বার্তাও তত নিকটে এসে আবির্ভূত হয় দিনের আলোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে। সেভাবেই এই বাংলায়ও দীর্ঘ অমানিশার ঘোর অন্ধকার কেটে গিয়ে মুক্তির সূর্য ঠিকই উঁকি দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের কর্মযজ্ঞ ছুটে চলেছে দুরন্ত গতিতে। তবে কি ষড়যন্ত্র থেমে গেছে? না, রূপ বদল করেছে মাত্র। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে সামনে রেখে এই বর্ণচোরাদের সঙ্গে নিরন্তর যুদ্ধ করেই সামনের দিকে এগোতে হবে।

 

লেখক ● সম্পাদক, দৈনিক জাগরণ ও দৈনিক কালবেলা।     

আরও পড়ুন