• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০১৯, ০৮:৩০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৪, ২০১৯, ০৮:৩৩ পিএম

ছেলেধরা গুজব বন্ধে পুলিশের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

ছেলেধরা গুজব বন্ধে পুলিশের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

● ছেলেধরা আতঙ্কে কমে গেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি 

● ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে গুজব রটানো হচ্ছে

● আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া ফৌজদারি অপরাধ

..................................................................

ছেলেধরা ‘গুজব’ ছড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গণপিটুনি দিয়ে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে নিরিহ মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে। ছেলেধরা গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন স্থানে মতবিনিময় সভা করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

দৈনিক জাগরণ-এর সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর-

মৌলভীবাজার সংবাদদাতা জানান, ছেলেধরা গুজবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অপরিচিত কাউকে সন্দেহ হলে গণপিটুনির স্বীকার হতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এই গুজবে এক বৃদ্ধকে প্রাণ দিতে হয়েছে। গণপিটুনিতে আহত হয়েছেন ৫জন। ছেলেধরা সন্দেহে হেনস্তার শিকার হয়েছেন অন্তত ১০ জন। ছেলেধরা গুজব যারা ছড়াচ্ছে তাদের ব্যাপারে কঠোর হচ্ছে পুলিশ।

গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেলেধরা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। ব্যক্তিগত আইডি ও ফেসবুক পেজ থেকে এসব গুজব রটানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।

ছেলেধরা গুজবে আতঙ্কিত হয়ে অনেক অভিভাবক ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছেন। প্রাইমারি স্কুলগুলোতে ক্লাসে শিক্ষার্থী উপস্থিতির সংখ্যা কমে গেছে। 

মৌলভীবাজার শহরতলীর জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা জহুরা জানান, ছেলেধরা সন্দেহে স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার এখন ৪০-৫০ ভাগ। আগে যেখানে ৯০-৯৫ ভাগ শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত থাকত। সন্তানকে নিরাপদে বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে অভিভাবকরা স্কুলের কক্ষে এসে বসে থাকেন। যার কারণে পাঠদান ব্যহৃত হচ্ছে। সামনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা রয়েছে।

রোববার (২১ জুলাই) মৌলভীবাজার শহরের চাঁদনীঘাট ব্রিজের পাশে রিকশাচালক এক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে গুরুতর আহত করে পথচারীরা। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। ওইদিন সকালে জেলার জুড়ি উপজেলার মাধবটিলা গ্রামে এক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দেয় এলাকাবাসী। পরে এলাকার মুরব্বিদের সহযোগিতায় ওই যুবককে উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন আছে।

শনিবার (২০ জুলাই) রাত ১০টার দিকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের দেওড়াছড়া চা বাগানে ছেলেধরা সন্দেহে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক বৃদ্ধকে (৫০) পিটিয়ে হত্যা করে স্থানীয়রা। এই ব্যক্তির পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরদিন ৩০০-৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা করে কমলগঞ্জ থানা পুলিশ। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩জনকে আটক করেছে পুলিশ।

ছেলেধরা আতঙ্কে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভায় ৮নং ওয়ার্ডে  শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েছেন এলাকাবাসী।

ফুফাতো ভাইকে খুঁজতে আসেন ভদ্রলোক। সেখানে ছেলেধরা সন্দেহে এলাকার ছেলেরা তাকে মারতে গেলে স্থানীয় যুবক আবদুল কাইয়ুম মুন্না উদ্ধার করে তাকে নিজের হেজাফতে নেন। মুন্না জানান, যখন জিজ্ঞেস করি তখন তিনি জানান তার ফুফাতো ভাইকে খুঁজতে এসেছেন। নাম বলেছেন কিন্তু ছবি কিংবা মোবাইল নম্বর নাই। খবর নিয়ে জানতে পাই, এ নামে এলাকায় একজন আছেন যিনি কিছুদিন আগে জমি কিনে নতুন এসেছেন। যদি ওনাকে না সরাতাম তাহলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।

মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ জালাল বলেন, ছেলেধরা সন্দেহে যাদের গণপিটুনি দেয়া হয়েছে এ রকম খবরা-খবর পেয়ে সেখান থেকে তাদের সাথে সাথে উদ্ধার করছি। আমরা বিষয়টি মনিটরিংয়ে রেখেছি।

এদিকে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের আয়োজনে ও হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ছেলেধরা গুজব রোধে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।  প্রধান শিক্ষক রাশেদা বেগমের সভাপতিত্বে ও সহকারী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শওকত আলীর পরিচালনায় সচেতনতামূলক সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রাশেদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি খালেদ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন শিক্ষক মাধুরি মজুদার, শ্যামলী চন্দ, খায়রুন নেছা ইয়াসমিন, কৃষ্ণা দাশ, তৈয়ব আলী, নির্মল চন্দ্র কপালী, সরোয়ার হোসেন, মিনহাজ উদ্দিন, অল্লিকা দাশ, সাংবাদিক বেলাল তালুকদার, নজরুল ইসলাম মুহিব, শিক্ষার্থী ফাহমিদা আক্তার, তৃষা আক্তার সহ আরও অনেকে। 

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা জানান, সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন স্কুল কলেজে গিয়ে শিক্ষক, গভনিং বডির সদস্য ও ছাত্রছাত্রীদের সাথে নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ। এ সময়  ঠাকুরগাঁও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেলের আবু তাহের মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, সদর থানার ওসি অপারেশন গোলাম মুর্তুজা, এস আই ফিরোজা সহ সদর থানার কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

সভায় বলা হয়, গুজবের সাথে তাল মিলিয়ে কোন মানুষকে হত্যা করার অধিকার কারো নেই। গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে ছেলেধরা সন্দেহে কাউকে গণপিটুনি দিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া ফৌজদারি অপরাধ। যদি কাউকে ছেলেধরা বলে সন্দেহ হয় তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে খবর দেবেন।

মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, ছেলেধরা সন্দেহে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামিম।

বুধবার (২৪ জুলাই) দুপুরে মানিকগঞ্জ সরকারি হাইস্কুল মাঠে শিক্ষার্থীদের উদেশে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, গুজবে কান দেবেন না। ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দেয়া একটি ফৌজদারি অপরাধ। আইন নিজের হতে তুলে নিবেন না। গণপিটুনির ঘটনায় যারা জড়িত তদন্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা রাষ্ট্রবিরোধী কাজের শামিল। সুতরাং কেউ অপরাধ করে পার পাবে না।

এর আগে পুলিশ সুপার তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার  হেডকোয়ার্টার) হোসেন মোহাম্মদ রায়হান, ডিএসবির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হামিদুর রহমান সিদ্দিকী, প্রেস ক্লাব সভাপতি গোলাম ছারোয়ার ছানু, সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব চক্রবর্তীহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

গুজবে কান না দিয়ে শান্ত থাকার জন্য মাইকিং করা হয় জেলার ৭টি  থানা পুুলিশের উদ্যোগে। 

এসএমএম

আরও পড়ুন