• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৬, ২০১৯, ০৮:৫৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৬, ২০১৯, ০৮:৫৬ এএম

আজ ১০ রমজানুল করিম

‘তাক্বওয়া’ সৃষ্টিতে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে রোজা

‘তাক্বওয়া’ সৃষ্টিতে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে রোজা

আল্লাহপাক ঘোষণা করেন, ‘‘যদি লোকালয়ের লোকেরা ঈমান গ্রহণ করে আর তাক্বওয়া অবলম্বন করে তাহলে আমি তাদের জন্য আসমান ও জমিনের সব বরকতের দরজাসমূহ খুলে দিবো।’’ (সুরায়ে আল আরাফ)

আর সিয়াম সাধনার মাধ্যমে তাক্বওয়া এ জন্য অর্জিত হয়, মানুষের যদি (আত্মজ্ঞান) যখন তার দেহ ও অন্যান্য শক্তিকে পরিপূর্ণরূপে আয়ত্ত্বাধীন করে নিতে পারে এবং মনের যাবতীয় কামনা, বাসনা ও আবেগ উচ্ছ্বাসকে নিজের সিদ্ধান্তের অনুসারী করে তুলতে পারে। ঠিক তখনই হয় আত্মসংযম। 

ইসলামের দৃষ্টিতে সফল জীবনের জন্য অনুগত খুদি একান্ত অপরিহার্য। যে খুদি অবাধ্য তার উদাহরণ হলো- ফেরআউন, নমরুদ, হামান ও কারুনের উদাহরণ। যারা পৃথিবীতে শুধু অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। 

রোজা মানুষের মধ্যে অনুগত খুদি তৈরি করে। নফস ও দেহের যাবতীয় চাওয়া-পাওয়া যাচাই করে দেখলে জীবন ও দেহের দাবি খুবই জরুরি বলে মনে হয়। জীবন ও দেহের তিনটা দাবি হচ্ছে- (এক) ক্ষুন্নিবৃত্তি-জীবন রক্ষার জন্য অত্যাবশ্যক। (দুই) যৌন আবেগ-বংশ তথা মানবজাতি স্থিতির জন্য যাহা প্রয়োজন।(তিন)বিশ্রাম গ্রহণের দাবি। 

মানুষের এ তিনটি দাবি যদি নিজ নিজ পরিসীমার মধ্যে থাকে তবে তা বিশ্বপ্রকৃতির অন্তর্নিহিত ভাবধারার অনুরূপ হবে, সন্দেহ নেই। অন্যদিকে নফস ও দেহের কাছে এ জিনিসই হচ্ছে বড় ফাঁদ। একটু ঢিলা, একটু সুযোগ পেলেই এ তিনটি ফাঁদ মানুষের খুদিতে বন্দি করে নিজের গোলাম, নিজের দাসানুদাস বানিয়ে দেয়। ফলে এর প্রত্যেকটি দাবি সম্প্রসারিত হয়ে অসংখ্য দাবির একটি দীর্ঘ ফিরিস্তি হয়ে যায়। 

একটি দুর্বল খুদি এখন এ সব দাবির নিকট পরাজিত হয়, তখন খাদ্যের দাবি তাকে পেটের দাস বানিয়ে দেয়। যৌনক্ষুধা তাকে অনেক নিম্নস্তরে নামিয়ে ফেলে। বিশ্রাম প্রিয়তা তার ইচ্ছা শক্তি বিলোপ করে দেয়। অতঃপর সে তার নফস ও দেহের শাসক বা পরিচালক থাকে। সে তার দাসে পরিণত হয়। আর রোজা নফসের এই তিনটি লালসা-বাসনাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। নিয়মানুগ করে ৭২০ ঘন্টার এই বাধ্যতামূলক সুমহান প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্যমে। যে যদি আল্লাহের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে, এ রোজা তাকে সম্বোধন করে বলে আল্লাহপাক আজ সারাদিন পানাহার করাকে নিষেধ করেছেন অনুগত খুদি তা মেনে নেয় অকাতরে। 

রোজা আহবান জানায়, আজ তোমার মালিক আল্লাহ তোমার যৌনক্ষুধা চরিতার্থ করার ওপরে দিনের বেলা বিধি নিষেধ করেছেন, আনুগত্য যদি তা মেনে নেয়। সারাদিনের দুঃসহ ক্ষুধা-পিপাসার পর যখন তুমি ইফতার করবে, তখন তুমি পরিশ্রান্ত হয়ে আরাম করার পরিবর্তে ক্বিয়াম অর্থাৎ নামাজ পড়ার জন্য তৈরি হও এবং অন্যান্য দিনের চেয়েও বেশি বেশি ইবাদত করো। 

বস্তুত এতেই তোমার রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি নিহিত আছে। এর ফলে খুদির মধ্যে একটি বিরাট শক্তি স্ফুরিত হয়। তা আল্লাহের মর্জি অনুসারে নিজের নফস ও দেহের ওপরে শাসন ক্ষমতা চালাতে সামর্থ হয়। মুমিনের আত্মজ্ঞান তার ক্ষুধা, পিপাসা, যৌনবৃত্তি এবং বিশ্রাম অভিলাস শুধু রোজার মাসেই নয় বরং পরবর্তী ১১ মাস ধরেও মানুষের তিনটি সর্বপ্রধান এবং সবচেয়ে বেশি জোরদার ও শাণিত হাতিয়ারের মোকাবেলা করে আল্লাহের বিধানের অধীনে তার সব কার্যসূচিকে অনুগত করে দেয়। আর এ জন্য তাক্বওয়া সৃষ্টিতে রোজা নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে। 

এসএমএম