• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০১৯, ০৪:০৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৯, ২০১৯, ০৪:০৮ পিএম

এইচএসসিতে পাবনা মানব কল্যাণ ট্রাস্টের ১১ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর চমক

এইচএসসিতে পাবনা মানব কল্যাণ ট্রাস্টের ১১ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর চমক
১১ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সঙ্গে পাবনা মানব কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন  -  ছবি : জাগরণ

চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় চমক দেখিয়েছেন পাবনার মানব কল্যাণ ট্রাস্টের ১১ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্র। তারা প্রমাণ করেছেন সমাজের বোঝা নয় তারা। অসাধ্যকে সাধন করে শ্রুতিলেখকের সহায়তা নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন অন্ধ হারুনার রশীদ। এ ছাড়া অন্য ১০ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী জিপিএ-৪ এর ওপরে পেয়েছেন। এই অভাবনীয় সাফল্যে সবাই খুব খুশি।

পাবনার মানব কল্যাণ ট্রাস্টের সহায়তায় চলতি বছর ১১ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শ্রুতিলেখকের সহায়তায় পাবনার সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ কেন্দ্র এবং শহীদ এম মনসুর আলী কলেজ কেন্দ্র থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেন।

তারা হলেন পাবনার ফরিদপুর উপজেলার মোক্তার সরকারের ছেলে হারুনার রশিদ (জিপিএ-৫), চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার তরিকুল ইসলামের ছেলে আব্দুল মতিন তুষার (৪.৫০), একই জেলার তৈয়মুর রহমানের ছেলে আব্দুর সবুর (৪.৫০), গোলাম মোস্তফার ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম (৪.২৫), গাজীপুর জেলার গোলজার হোসেনের ছেলে মাহমুদুল হাসান শাওন (৪.২৫), নওগাঁ জেলার টিপু সুলতানের ছেলে মাহবুব জামান (৪.২৫), সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার হাবিবুর রহমানের ছেলে আরিফুল ইসলাম (৪.৫০), কিশোরগঞ্জ জেলার বাচ্চু মিয়ার ছেলে নাদিম হোসেন (৪.২৫), টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী গ্রামের শ্যামল চন্দ্র সুতারের ছেলে ভোলানাথ সুতার (৪.১৭), ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজলার সুশীল চন্দ্র ধরের ছেলে চন্দন কুমার ধর (৪.১৫) এবং পাবনা সদর উপজেলার মহেন্দ্রপুর গ্রামের সিদ্দিক হোসেনের ছেলে কাওসার হোসেন (৪.৫৮)।

জিপিএ-৫ প্রাপ্ত হারুনার রশিদ বলেন, পরিবারের কাছে তিনি অবহেলিত ছিলেন। তার একমাত্র ইচ্ছা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শেষে বড় চাকরি করে বাবা-মায়ের সেবা করা। সেই সঙ্গে পরিবার ও প্রতিবেশী অন্যদের সহায়তা করা। হারুন বলেন, শুধু অন্ধ হওয়ার কারণে তিনি পরিবারে বোঝা ছিলেন। পরিবার তাকে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু তিনি পরিবারকে ফেলবেন না। অন্ধরা যাতে পরিবারের বোঝা না হয়ে সহায়ক হতে পারে, সে জন্য তার উচ্চশিক্ষা গ্রহণ জরুরি। এটাই তার জীবনের একমাত্র যুদ্ধ।

এই ১১ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী (অন্ধ) চলতি বছর পাবনার সেবামূলক প্রতিষ্ঠান মানব কল্যাণ ট্রাস্টের সহায়তায় এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন এই ১১ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর রয়েছে জীবনের নানা গল্প। তবে তারা সবাই সাহসী এবং উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার ব্যাপারে পরিশ্রমী ও আশাবাদী।

মানব কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল হোসেন বলেন, এসব অন্ধ দরিদ্র ঘরের সন্তান। অন্ধদের লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজন ব্রেইল পদ্ধতি। অথচ দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ সুযোগ নেই। অন্ধদের পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন শ্রুতিলেখকের, কিন্তু একেকজন শ্রুতিলেখককে সম্মানী দিতে হয় আট থেকে দশ হাজার টাকা। দরিদ্র অন্ধদের শ্রুতিলেখক সম্মানী তো দূরের কথা, লেখাপড়া করার ন্যূনতম আর্থিক ব্যয় নির্বাহ করারও সক্ষমতা নেই। শিক্ষা বোর্ড থেকে শ্রুতিলেখকদের অনুমোদন, রেজিস্ট্রেশন জটিলতা এবং বিভিন্ন বোর্ডের ভিন্ন ভিন্ন নীতিমালার কারণে পদে পদে তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়। তার পরও থেমে থাকছে না এসব সংগ্রামী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর শিক্ষাজীবন। 

তিনি জানান, এই ১১ পরীক্ষার্থীর মতো আরো ৮০ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পাবনার মানব কল্যান ট্রাস্টের আশ্রয়ে থেকে ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া করছে। এছাড়া এ প্রতিষ্ঠান থেকে ১৪ জন পথশিশু প্রাথমিক শিক্ষা ও ২ জন এমএ পড়াসহ মোট ১৮৫ জন বিভিন্ন শ্রেণিতে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

পাবনার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, প্রফেসর আবুল হোসেন একজন সাদা মনের মানুষ। তিনি শিক্ষক ছিলেন, তাই সমাজে পিছিয়ে পড়াদের শিক্ষিত করতে তিনি যে প্রয়াস চালাচ্ছেন, তা প্রশংসাযোগ্য। সরকার এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। পাশাপশি বিভিন্ন বেসরকারি পর্যায়ের বিত্তশালী ব্যক্তিদের এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সহায়তা করার আহ্বান জানান তিনি।

এনআই

আরও পড়ুন