• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০১৯, ০৩:৩৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৩১, ২০১৯, ০৩:৩৬ পিএম

যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে গৃহহারা ৫ শতাধিক পরিবার

যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে গৃহহারা ৫ শতাধিক পরিবার

যমুনা ব্রহ্মপুত্র ভাঙছে ঘরবাড়ি, গাছপালা, ফসলি জমি। ভাঙছে নদী পাড়ের মানুষের জীবন সংসার। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে তাদের সহায় সম্পদ। গৃহহারা হয়ে পড়েছে ৫ শতাধিক পরিবার। মাথা গুজার ঠাঁই খুঁজতে হন্য হয়ে ঘুরছে নদীভাঙা পরিবারগুলো। তারা খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। কেউ কেউ আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে পড়ের বাড়িতে। দুর্ভোগ আর ভোগান্তিতে মানবেতর জীবনের মুখে পড়েছে নদী ভাঙা মানুষেরা।

জামালপুরে বন্যার পানির বাড়া-কমার খেলায় যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ১৫ দিনের নদী ভাঙনে দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর ও মেলান্দহ উপজেলার ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গৃহহারা হয়ে পড়েছে ৫ শতাধিক পরিবার। হুমকির মুখে পড়েছে নৌ-থানা, খোলাবাড়ি বাজার, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এসব নদী ভাঙন প্রতিরোধে তেমন কোন উদ্যোগ নেই স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের। তবে নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী বলেন, নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধের জন্য পরিকল্পনা পানি উন্নয়ন বোর্ডে পাঠানো হবে। 

যমুনার ভাঙনে দেওয়ানগঞ্জের খোলাবাড়ি, উচ্চবিদ্যালয়, খোলাবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলাবাড়ি মাদ্রাসা ও খোলাবাড়ি বাজারের ৫০/৬০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ খোলাবাড়ি, বরখাল ও চরমাগুরিয়া গ্রামের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। 

এদিকে, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে মেলান্দহের চর বীর হাতিজা গ্রামের ৭০টি ও ইসলামপুর উপজেলার চরবরুল গ্রামের ৫০টি ঘর-বাড়ি ও কয়েকশ বিঘা ফসলী জমি নদী বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে নদী-পাড় মানুষরা বাড়ি-ঘর সরিয়ে নিচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে, নৌ-থানা, খোলাবাড়ি বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভিটে-মাটি হারা এসব পরিবার বিভিন্ন সড়ক, বাজার নৌ-থানার মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে কোন মতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিলেও খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এলাকার স্কুল ও মাদ্রাসা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। 

বীর হাতিজা গ্রামের সবুরা বেগম (৫৫) বলেন, দুইবার ভাঙছে আমার বাড়িঘর। এইবারও বাড়িঘর জমিজমা সব নদী চইল্যা গেছে। আমগো আর যাওয়ার কোন জায়গা নাই।

একই গ্রামের আইজল মন্ডল (৬৫) বলেন, জমিজমা সব নদীতে যাইতাছে গা। এইবার বাড়িটাও থাকবো না। সরকার যদি বেড়িবাঁধ না দিয়ে দেয়। তাইলে আমগোরে এই দ্যাশ ছাইড়া চইলা যাইতে অইবো। আমরা সাহায্য চাইনে বাঁধ কইরা দেন।

ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ নদী ভাঙন প্রতিরোধে সরকার কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। ফলে নদী ভাঙনে বসতভিটা ও জমি-জমা হারিয়ে গবাদি পশু নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করলে এখন পর্যন্ত কোন সহায়তা পায়নি তারা।

দেওয়ানগঞ্জের চিকাজানি ইউনিয়নের খোলাবাড়ি গ্রামের বৃদ্ধ আমেজ আলী (৬৫) আমগো ঘরবাড়ি নদিত ভাইঙে চুইরা গেছে। এহন পর্যন্ত কেউ আহেও নাই, সরকারি অনুদান দেয়ও নাই, পাইও নাই। জড়াজড়ি কইর‌্যা পইরা আছি। 

ভাঙনের হাত থেকে বাঁচতে নদী ভাঙা মানুষেরা টেকশই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছে।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রাকৌশলী নবকুমার চৌধুরী জানিয়েছে, নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ বা স্থায়ী প্রতিরক্ষার জন্য আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হবে।

কেএসটি

আরও পড়ুন