• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০১৯, ১০:১৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২৫, ২০১৯, ১০:১৮ এএম

চিকিৎসক সংকট

শেবাচিমে ৪৯ বছরে রোগী ভর্তির নতুন রেকর্ড 

শেবাচিমে ৪৯ বছরে রোগী ভর্তির নতুন রেকর্ড 

রোগী ভর্তিতে রেকর্ড গড়েছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল। শনিবার ২৪ ঘণ্টায় ৫শ শয্যার এই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৯৭৯ জন। যা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর গত ৪৯ বছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড।

এদিকে, ভর্তি রোগীর সংখ্যায় রেকর্ড সৃষ্টি হলেও পাঁচ তলা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে কমেনি জায়গার স্বল্পতা। রয়েছে সকল পর্যায়ের জনবল সংকট। চিকিৎসক ও কর্মকর্তাসহ মোট ২২৪টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৯৯ জন চিকিৎসক। ফলে চিকিৎসা সেবার সুষ্ঠু পরিবেশের পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবাও।

হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, ১৯৬৮ সালে বর্তমান বরিশাল নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ আলেকান্দা এলাকায় স্থাপিত হয় দক্ষিণ বঙ্গের সর্ববৃহৎ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল। ১৩টি বিভাগ ও ৩০০ শয্যা নিয়ে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭০ সালে।

পর্যায়ক্রমে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী ১৯৭৩ সালে ৪০০ এবং পরবর্তী ১৯৮০ সালে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয় দক্ষিণাঞ্চলের রোগীদের সর্বশেষ নির্ভরযোগ্য এই হাসপাতালটি। সেই থেকে পাঁচশ শয্যার অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী চলে আসছিল এই হাসপাতালটির কার্যক্রম। এরপর ২০১৩ সালে এক হাজার শয্যায় উন্নীত করা হয় হাসপাতালটি।

এদিকে, শয্যা উন্নতির পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থারও উন্নতি ঘটে এই হাসপাতালে। চালু করা হয় বেশি কিছু নতুন বিভাগ। আইটডোর-ইনডোরে সব মিলিয়ে বর্তমানে বিভাগের সংখ্যা ২৮টি এবং ইউনিট সংখ্যা ৪৪টি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আইসিইউ, স্ক্যানু (এনআইসিইউ), বার্ন ও প্লাসিক সার্জারি, কার্ডিওলজি, মেডিসিন, নিউরো মেডিসিন, গ্যাসট্রো এ্যানটোলজি, নেফ্রোলজি, জেনারেল সার্জারি, নিউরো সার্জারি, পেডিয়াটিক সার্জারি, ইউরোলজি, চক্ষু, নাক-কান-গলা, অর্থোপেডিক, গাইনি, আবস্টোট্রিকস, শিশু রোগ, নিউনেটোলজি, আইসোলেশন ও মানসিক রোগ বিভাগ।

হাসপাতালের এক পরিসংখ্যানে দেখাগেছে, দিন যতই বাড়ছে রোগীর চাপও ততই বাড়ছে। যে কারণে সিসিইউ এবং শিশু ওয়ার্ড থেকে শুরু করে প্রতিটি বিভাগেই শয্যা না পেয়ে রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে ওয়ার্ডের মেঝে কিংবা কোরিডোরে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর গড়ে ৬ লাখের উপর রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে এই হাসপাতাল থেকে। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকে রোগীর গড় বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে ডেঙ্গু জ্বরকে কেন্দ্র করে গত দু’মাসে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় চারগুন হয়ে গেছে। সে কারণে এ বছর চিকিৎসা গ্রহণকারী রোগীর সংখ্যা সাত লাখ ছাড়াবে বলে ধারণা করছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গত শনিবার (২৪ ঘণ্টায়) হাসপাতালের অন্তঃবিভাগে এক হাজার ৯৭৯ জন রোগীকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। যা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৪৯ বছরে প্রথম রেকর্ড। ওইদিন ভর্তি থাকা রোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৯১ জন শিশু, মেডিসিন ৪টি ইউনিটে ৪৫৬ জন ও সার্জারি’র ৪টি ইউনিটে ভর্তি ছিল ২৭২ জন। এছাড়া ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৮৩ জন। এর পূর্বে গত ২০ আগস্ট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১৮৫১ জন, ২১ আগস্ট ১৮৯৩ জন, ২২ আগস্ট ১৮৫৭ জন ও ২৩ আগস্ট চিকিৎসাধীন ছিলেন ১৮২৫ জন।

এদিকে, শেবাচিম হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. ইউনুস আলী বলেন, ‘হাসপাতালটি এক হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও বিগত ৭ বছর ধরে ৫শ শয্যার জনবলসহ অর্গানোগ্রামেই চলছে এর কার্যক্রম। যে কারণে চিকিৎসক থেকে শুরু করে ২য়, ৩য় এবং ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী তীব্র সংকট। বিশেষ করে চিকিৎসক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।

তিনি বলেন, এ হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মকর্তাসহ মোট ২২৪টি পদ রয়েছে। যার বিপরীতে কর্মরত চিকিৎসক এর সংখ্যা মাত্র ৯৯ জন। এরা তিন শিফটে রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। বহিঃবিভাগে চিকিৎসক সংকট কিছুটা কম হলেও অন্তঃবিভাগে এ সংকট খুবই প্রকট। সেখানে ৩৩টি রেজিস্টার পদের ১৮টিই শূন্য। এছাড়া ৬৬টি সহকারী রেজিস্টার পদের ৪৮টি, ১০টি এ্যানেসথেসিওলজিস্ট পদে ৪টি, ১০টি ইএমও পদের ২টি, ২০টি মেডিকেল অফিসার পদের ১৮টি ও ২০টি ইনডোর মেডিকেল অফিসর পদের ১১টি পদ দীর্ঘ দিন ধরে শূন্য।

একই অবস্থা বিরাজমান আউটডোরেও। বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজারের অধিক রোগীর চিকিৎসা গ্রহণ করছে। এদের চিকিৎসা দিচ্ছেন মাত্র ২৪ জন চিকিৎসক। বহির্বিভাগে এম.ও, সহকারী সার্জন, ডেন্টাল সার্জনের মোট ৪৬টি পদের মধ্যে ২২টি পদই শূন্য। এমনকি প্যাথলজি বিভাগের ৮টি ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট পদের ৩টি পদ শূন্য। অথচ এই বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৫শত রোগীর রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। তাই জনবল সংকটের কারণে আইএইচটি শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা নিতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। ফলে বিভাগটিতে অনিয়ম দুর্নীতি পিছু ছাড়ছে না।

এদিকে, হাসপাতালের ২য় শ্রেণীর নার্স ও কর্মকর্তাদের সংকট কম। এ শ্রেণির মোট ৮০৬টি পদের মধ্যে মাত্র ৩৭টি পদ শূন্য। তবে ৩য় শ্রেণীর ১০২টি পদের মধ্যে ৩১টি ও ৪র্থ শ্রেণীর ৪২৬টি পদের মধ্যে ১১৮টি পদ শূন্য রয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন জানান, দিনে দিনে রোগী সংখ্যা বাড়ছে এবং বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু চিকিৎসক ও জনবল সংকট বড়বে তা অস্বাভাবিক। তিন শিফটে চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালন করে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছেন। তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের দায়িত্ব পালন করার মতো কেউ থাকবে না।

তিনি বলেন, চিকিৎসক সংকট দূর করার জন্য একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু চিঠি চালাচালি করেও কোন কাজ হচ্ছে না। মূলত চিকিৎসকরা বরিশালে আসতে চাচ্ছে না। আবার কাউকে জোর করে পাঠালেও তিনি বেশিদিন থাকছেন না। বদলি হয়ে সুবিধাজনক স্থানে চলে যাচ্ছেন।

পরিচালক বলেন, বর্তমানে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদের জায়গা দিতে পারছি না। এটাও এখন বড় একটি সমস্যা। তবে এ সমস্যা থাকতো যদি হাসপাতালের পূর্ব পাশে নির্মাণাধীন ৫শ শয্যার ৫তলা বিশিষ্ট ভবনটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হতো। মাত্রা সাড়ে ৩ কোটি টাকার জন্য ভবনটির নির্মাণ কাজ আটকে আগে। তবে এজন্য গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের অনাগ্রহ এবং অনিয়মকেই দায়ী করেন পরিচালক।

কেএসটি

আরও পড়ুন