• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০১৯, ০১:৩৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২৬, ২০১৯, ০১:৩৬ পিএম

টার্গেটের ১১ ভাগ চাষাবাদ সম্পন্ন 

কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হওয়ায় আমন চাষ নিয়ে কৃষকের শঙ্কা

কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হওয়ায় আমন চাষ নিয়ে কৃষকের শঙ্কা

পানিবিহীন জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে গিয়ে নখে কাদা প্রবেশ করছে। আঙ্গুল টিপে টিপে ধানের চারা রোপণ করতে হচ্ছে। চারা রোপণের পর জমিতে পানি না থাকায় দুই-একদিনের মধ্যে রোপণ করা চারা হলুদ বর্ন ধারণ করছে। জানি না এবার আমন ধান রোপণ শেষ করতে পারব কি না। জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার জিলেরডাঙ্গা গ্রামের মোহন কুমার বিশ্বাস আমন ধান রোপণকালে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ১০ বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করার ইচ্ছে থাকলেও পানির অভাবে মাত্র দেড় বিঘা জমিতে ধান  রোপণ করেছেন। আর অবশিষ্ট জমি বৃষ্টির অপেক্ষায় রেখেছেন। তিনি আরো জানান, বর্ষাকালে বৃষ্টি হয়নি এখন ভাদ্র মাসের ১০ দিন কেটে গেছে। মাঝে মধ্যে ছিটেফোটা বৃষ্টি হলেও তা ধান রোপণের জন্য উপযুক্ত নয়। ফলে দেরিতে রোপণ করলে ফলন ভাল হবে না।

চলতি বছর ভরা বর্ষা মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বৃষ্টির পানি নির্ভরশীল রোপা আমন ধানচাষ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে চাষিদের মাঝে। আমন চাষিরা জানান অন্য বছরের তুলনায় এবার বর্ষাকাল শেষ হলেও কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি হয়নি। আমন মৌসুমে শেষের দিকে গেলেও বৃষ্টির দেখা না মেলায় বাধ্য হয়ে কেউ কেউ গভীর নলকূপ (সেচযন্ত্র) হতে বেশি দরে পানি কিনে নিয়ে আমন চাষ শুরু করেছে। 

কৃষিবিদদের মতে, আমন মৌসুম মূলত বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করে চাষ প্রক্রিয়া চলে। জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে শুরু চাষাবাদ চলে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। তবে শুরুতে চাষাবাদ না হলে কাঙ্ক্ষিত ফলন হয় না। তাছাড়া প্রাচীনকালের ঊফশী ধান চাষ করতে শ্রাবণ মাসের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হয়। তাছাড়া ফলন ভাল হয় না। কিন্তু বর্তমানে মাটি পানিতে নোনায় আক্রান্ত থাকে বেশি। এজন্য চাষিরা সেই প্রাচীনকালের ধান আমন ধান চাষাবাদ প্রায় ছেড়ে দিয়েছে। বিকল্প হিসেবে ব্রী (বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের) উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রকার আমন জাতের ধান চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়ছেন। এক্ষেত্রে ব্রী ধান-৭৬, ২২, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৯, ৪১ ও ৪২-এর চাষাবাদ বেশি হচ্ছে। এতে সনাতন জাতের ধানের চেয়ে বেশি ফলন হয়। এজন্য কৃষকেরও সাশ্রয় হয়। কৃষকদের উচ্চমূল্যের মজুরি খাটিয়ে ধান চাষ করতে হয়। 

আবহাওয়াবিদদের মতে, বেশ কয়েক বছর যাবত আবহাওযার বিরূপ প্রভাবে সময়মত বৃষ্টি হচ্ছে না। প্রতি বছরই বর্ষাকাল তার ধরন পাল্টাচ্ছে। এতে কৃষিতে ক্ষতি হচ্ছে বলে তারা মনে করেন। গত বছরের তুলনায় এবছর শেষ মুহূর্তে দেড়শ মিলিমিটার বৃষ্টি বেশি হয়েছে। কিন্তু সেটি বর্ষাকাল শেষ হয়ে যাওয়ার পর। গত বছর জুন, জুলাই ও আগস্ট তিন মাসে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল ৬৩৭ মিলিমিটার। এবার জুন, জুলাই ও  আগস্টের ২৫ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৭৮৭ মিলিমিটার। সে হিসেবে বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছে এবার। 

খুলনা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমিরুল আযাদ বলেন, এ বছর একটু দেরিতে বৃষ্টি হয়েছে। গত বছর আগস্টে বৃষ্টি হয়েছিল ১০৭ মিলিমিটার। এবার আগস্টের ২৫ দিনে বৃষ্টি হয়েছে ৩৪৩ মিলিমিটার। গত বছর জন মাসে বৃষ্টি হয়েছিল ২৬৬ মিলিমিটার এবার জুন মাসে বৃষ্টি হয়েছে ১১৫ মিলিমিটার। 

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমন চাষ নিয়ে কৃষকের হতাশ হবার কোনো কারণ নেই এখানো সময় রয়েছে। দেরিতে হলেও বৃষ্টি হচ্ছে। আশা করছি সঠিক সময়ের মধ্যে কৃষকের প্রয়োজন জমির চাষাবাদ শেষ করতে পারবেন।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ পঙ্কজ কান্তি মজুমদার জানান, চলতি আমন মৌসুমে খুলনা জেলায় এবার রোপা আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২ হাজার হেক্টর (১ হেক্টর= ২.৪৮ একর), কিন্ত এখন পর্যন্ত  তেমনভাবে  রোপণ শুরু হয়নি। সবেমাত্র কৃষকরা জমি তৈরি করে চাষাবাদ শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১১ ভাগ অর্জন সম্ভব হয়েছ। শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় এবার চাষও দেরিতে শুরু হয়েছে। তবে এখনও সময় আছে আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।

কেএসটি

আরও পড়ুন