• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯, ১১:৩৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯, ১১:৩৫ এএম

বারইপাড়া সেতু 

নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ হয়েছে মাত্র দুটি পিলার!

নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ হয়েছে মাত্র দুটি পিলার!

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলার কারণে জুন মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ হয়েছে মাত্র ২২ ভাগ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি মাত্র দুইটি পিলার নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন নির্ধারিত সময়ে। এমন অবস্থা নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নবগঙ্গা নদীর বারইপাড়া নামকস্থানে সেতু নির্মাণ কাজের। নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ এপথ দিয়ে চলাচলকারী মানুষের। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যও।

সূত্র জানায়, নড়াইলে কালিয়া উপজেলার বারইপাড়া ঘাটে একটি সেতু না থাকায় উপজেলাটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে রয়েছে। নদীর একপাশে রয়েছে ৮টি অপর প্রান্তে ৬টি ইউনিয়ন। মোট ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে কালিয়া উপজেলা গঠিত। এ উপজেলায় প্রায় ২শ ৩১টি গ্রামবাসীর দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। নবগঙ্গা নদীর জেলা সদরের পাশে রয়েছে ৬টি ইউনিয়ন এগুলো হল পেড়লী, পাঁচগ্রাম, বাবরা-হাচলা, চাচুড়ি, পুরুরলিয়া ও মাওলী ইউনিয়ন। নদীর ওপারে রয়েছে ৮টি ইউনিয়ন এগুলো হল ইলিয়াসাবাদ, জয়নগর, পওরডাঙ্গা, কলাবাড়িয়া, বাঐসোনা, সালামাবাদ, হামিদপুর ও খাসিয়াল ইউনিয়ন এবং কালিয়া পৌরসভা।

জানাগেছে, জেলা সদরের সঙ্গে কালিয়া উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ কোন ব্যবস্থা নেই। কালিয়া উপজেলাকে নড়াইল জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে এই নদী। জেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে পোহাতে হত এ উপজেলার মানুষদের। সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের জন্য কালিয়ার বারইপাড়া ঘাটে একটি সেতু নির্মাণ এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি দীর্ঘ দিনের। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বারইপাড়া ঘাট দিয়ে নদী পার হয়ে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালে বিভিন্ন প্রয়োজনে যাতায়াত করে থাকেন। যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল না হওয়ায় এখানে গড়ে ওঠেনি কোন শিল্প-কলকারখানা। এলাকায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য শহরে আনতে পড়েন চরম দুর্ভোগে। মারামারি ঘটনা ঘটলে থানা থেকে পুলিশ যথাসময়ে আসতে পারে না। কালিয়ার আগুন লাগলে দ্রুত পৌঁছাতে পারে না ফায়ার সাভির্সের গাড়ি ও জরুরি রোগী পরিবহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্স। ঘাটে যেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় নদীর পার হওয়ার জন্য। অবশেষে নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তির প্রচেষ্টায় কালিয়াবাসীর চলাচলের জন্য সেই কাঙ্ক্ষিত সেতুটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের নকশা জটিলতার কারণে কাজ চলছে মন্থর গতিতে। নির্ধাতির সময় শেষ হলেও মাত্র ২২ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

কালিয়া সরকারি শহীদ আব্দুস সালাম ডিগ্রী কলেজের ছাত্র শুক্তগ্রামের রাইসুল ইসলাম বলেন, আমি কায়িলা উপজেলা সদরে অবস্থিত কলেজে লেখাপড়ার জন্য প্রতিদিনই যাতায়াত করতে হয়। বারইপড়া ঘাটে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় অনেক খুশি হয়েছিলাম এখন দেখলাম কাজের কাজ কিছুই হয়নি এটি দুঃজনক।

নোয়াগ্রামের অরিফা বেগম বলেন, প্রায় আমাদের নদী পার হয়ে উপজেলা সদরে যেতে হয় নৌকায় নদী পার হতে সময় ও অর্থ বেশি ব্যয় হয়। বিশেষ করে রোগীদের নিয়ে যেতে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। মনে করেছিলাম সেতুর কাজ শুরু হয়েছে আমাদের আর কষ্ট করতে হবে না। তা আর হলো কই?

কালিয়া বাজারের ব্যবসায়ী অমিত দাস বলেন, এখানে একটি ফেরি থাকলেও প্রতি ঘণ্টায় মাত্র একবার চলাচল করে। মালামাল নিয়ে ঘাটে এসে ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হয় যা আমাদের জন্য দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয়। সেতুর কাজ শুরু হলেও সামান্য কাজ হয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ ইমতিয়াজ হোসেন রতন সেতুর নকশা জটিলতার কারণে সেতুটির নির্মাণ কাজের বিলম্ব হয়েছে জানিয়ে বলেন, ইতিমধ্যে ২২ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এক বছর সময় বাড়ানো হয়েছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলেও জানান তিনি।

নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, নড়াইল-কালিয়া সড়কের ২১তম কি. মি. নবগঙ্গা নদীর উপর বারইপাড়া সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মো. মইনুদ্দীন বাসী ও মো. জামিল ইকবাল যৌথভাবে সেতুটি নির্মাণ করছে। প্রায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দৈর্ঘ্য ৬৫১.৮৩ মিটার এবং ১০.২৫ মিটার প্রস্থ সেতুটি কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিল ১৮ মার্চ ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। জুন মাস পর্যন্ত প্রায় ২৩ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। 
নকশা জটিলতার কারণে কাজ শুরু হতে বিলম্ব হয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বারইপাড়া সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য ২০২০ সালের জুন পর্যন্তু এক বছর সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে।

নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের মহাসড়কের অংশ হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছায় বারইপাড়া সেতুটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের বিষয় হলেও সত্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের ধীরগতির এবং গাফিলতির কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি। আমি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট অফিসসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করার জন্য।

কেএসটি

আরও পড়ুন