• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯, ০৮:৫৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯, ০৮:৫৩ এএম

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ

ঘুরে দাঁড়িয়েছে ৯টি গ্রামের মানুষ

ঘুরে দাঁড়িয়েছে ৯টি গ্রামের মানুষ

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি মেরামত হওয়ায় নিজামপুর, বাঁধ সংলগ্ন নিজামপুর, সুধিরপুর, ইউসুফপুর, কোমরপুর, পুরাণ মহিপুর, মনোহরপুর, লতিফপুর, মোয়াজ্জেমপুরসহ ৯টি গ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দুরাবস্থা কেটে গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নিজামপুর গ্রামের প্রায় দেড় কি. মি. বাঁধ নতুন করে মেরামত করা হয়েছে। নদীর দিকের বাঁধের ঢালে ২৫০ কেজি ওজনের বালু ভর্তি জিও ব্যাগ স্থাপন করা হয়েছে। আর ভিতরের দিকের ঢালে মাটি ফেলা হয়েছে। এটি উচ্চতায় প্রায় ৯ ফুট এবং প্রশস্ততায় ৮ ফুট করা হয়েছে। ভিতরের দিকের বাঁধের ঢাল ১৮ ফুট। আর নদীর দিকের ঢাল দেয়া হয়েছে ২৭ ফুট। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়া কার্যালয়ের শাখা কর্মকর্তা সৈয়দ তারিকুর রহমান জানায়, ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে এ বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ২৫ মে এর কাজ শুরু হয় আর গত ২৭ জুন কাজ শেষ হয়।

স্থানীয়রা জানান, প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় সিডরের রাতে ওই গ্রামের বাঁধটি প্রথম ভেঙে যায়। ঘূর্ণিঝড় আইলা, মহাসেনসহ দুর্যোগের কারণে এ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর কয়েক দফা বাঁধের মেরামত হয়। কিন্তু কোনোবারই বাঁধ টেকসই হয়নি। 

নিজামপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. সিদ্দিক মুন্সী বলেন, ‘আমরা বড় কষ্টের মধ্যে এত বছর পার করছি। এমন কোনো মানুষ নাই, এ বাঁন্দের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাই। তয় এইফির বানডা দেওয়ার পর আর ভাঙে নাই। হেইতে চাষাবাদ করতে পারছি।’

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী, আবদুল মোতালেব খান বলেন, ‘বাঁধ ভাইংগ্যা ঘের, পুকুরের মাছ ভাইস্যা গ্যাছে। মোগো ক্ষতির পর ক্ষতি হইছে। নতুন কইর‌্যা বান দেছে। হেইয়া দেইখ্যা গ্রামের কিছু কিছু মানুষ মাছের চাষ করছে। আশা করছি, লাভ করতে পারমু। 
এ জনপদটি এক সময় যেখানে ছিল বিধস্ত, এখন সেখানে নতুন করে বেঁচে থাকার সংগ্রাম শুরু হয়েছে। কেউ নতুন করে ঘর তৈরি করছে, আবার কেউ সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য ক্ষতি হওয়া জাল-নৌকা মেরামত করছে।

নিজামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল হক ভদ্র বলেন, ‘বাঁধের সাথেই আমার বিদ্যালয়টি। জোয়ারে পানি উঠতো, আর ভাটায় নেমে যেত। গত ৩-৪ বছর এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আমাদের চলতে হয়েছে। গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো স্কুলে আসতে পারতো না। বাঁধ হওয়ায় এ বছর শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়মুখি হয়েছে।’ 

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. বনি আমীন জানায়, ‘লবণ পানি প্রবেশ করায় ওই এলাকায় গত বছর প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে কেউ চাষ করতে পারেনি। এ বছর সে জমিটুকু চাষের আওতায় এসেছে। ফলে এ বছর এ জমি থেকে ২ হাজার ২০০ টন উফষী ও স্থানীয় জাতের আমন ফসল উৎপাদন হওয়ার লক্ষ্যমাত্র চিন্তা করা হয়েছে।’

কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলন, ‘সাগর মোহনায় বাঁধটি হওয়ায় এখানে জোয়ারের পানির চাপ বেশি পড়ে। যার কারণে বার বার বাঁধটি ভেঙে যায়। জিও ব্যাগ, জিও টেক্সটাইল ব্যবহার করে এবার বাঁধ মেরামত করে দেয়া হয়েছে। এবারই দেখা যায় বাঁধটি টেকশই হয়েছে। যার কারণে মানুষজন চাষাবাদসহ সবকিছু করতে পারছে।’

কেএসটি

আরও পড়ুন