• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২০, ০৮:১৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৭, ২০২০, ০৮:১৮ এএম

শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ৪ বছর আজ

সাক্ষ্য গ্রহণে আটকে আছে বিচার কার্যক্রম

সাক্ষ্য গ্রহণে আটকে আছে বিচার কার্যক্রম
ফাইল ছবি

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া জঙ্গি হামলার চার বছর পূর্তি আজ। ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে জঙ্গি হামলায় চালায় জঙ্গিরা। হামলায় দুই পুলিশ সদস্য, এক গৃহবধূ, দুই জঙ্গিসহ নিহত হয় ৫ জন। এখনও আতঙ্ক কাটেনি এলাকাবাসীর।

শোক কাটেনি নিহত ও আহতদের পরিবারে। ভয়াবহ এ জঙ্গি হামলা মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে ধীর গতিতে। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা থাকায় তাদের সময় মতো আদালতে হাজির করা সম্ভব হচ্ছে না।

২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহে নামাজ শুরুর কিছু আগে জঙ্গিদের গুলি আর বোমায় কেঁপে উঠে চারপাশ। পুলিশের সাথে শুরু হয় জঙ্গিদের বন্দুকযুদ্ধ। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।

ওই দিন সকালে ঈদগাহের অদূরে মুফতি মুহাম্মদ আলী মসজিদের কাছে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে অতর্কিত হামলা চালায় জঙ্গিরা। বোমা আর গুলির শব্দে কেঁপে উঠে শোলাকিয়া ময়দানের আশপাশ। হামলায় নিহত হয় পুলিশের দুই কনস্টেবল ও এক গৃহবধূ। পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ঘটনাস্থলে নিহত হয় আবির রহমান নামে এক জঙ্গি। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। আজও সেই দু:সহ স্মৃতি তাড়িত করে এলাকাবাসীকে।

ঘটনার সময় নিজের ঘরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন গৃহবধূ ঝর্ণা ভৌমিক। এখনও শোকে কাতর তার স্বজনরা। ঝর্ণা রানীর ছোট ছেলে শুভ দেব বর্মণ তখন ৬ষ্ট শ্রেণির ছাত্র। এখন সে দশম শ্রেণিতে পড়ে। এখনও ঘুমের মধ্যে মা বলে চিৎকার করে উঠে সে।

শ্রভ দেব জানায়, এখনও মাকে একটি দিনের জন্য ভুলতে পারি না। ঈদের দিন মা আমার জন্য সেমাই রান্না করেছিলেন। কিন্তু কে জানতো মায়ের হাতের শেষ রান্নাটাও খাওয়া হবে না। আমার মতো যেনো কারও মাকে এভাবে মরতে না হয়। ঝর্ণা রানীর স্বামী গৌরাঙ্গ ভৌমিক জানান, চোখের সামনে স্ত্রী মারা গেছে। এ কষ্ট কিভাবে ভুলি! দু’টি ছেলেকে নিয়ে কষ্টে জীবন-যাপন করছি। বড় ছেলে বাসুদেবকে প্রধানমন্ত্রী দেয়া একটি ব্যাংকে চাকরি করছে। তার আয়েই সংসার চলে।

শোলাকিয়া হামলার ঘটনায় ২০১৬ সালের ১০ জুলাই কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্ত চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় শীর্ষ ৫ জঙ্গি। বর্তমানে কারাগারে আছে জেএমবি সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, অনোয়ার হোসেন, সোহেল মাহমুদ, রাজীব গান্ধী ,মো. আনোয়ার হোসেন ও জাহিদুল হক তানিম নামে ৫ জঙ্গি।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৫ শীর্ষ জঙ্গিকে আসামি করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়। তবে জঙ্গিদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে হলি আর্টিসানসহ অন্যান্য মামলা থাকায় তাদের নিয়মিত আদালতে হাজির করা যাচ্ছে না। এতে বিলম্বিত হচ্ছে, মামলার বিচার কার্যক্রম। চার বছরেও শুরু করা যায়নি সাক্ষ্য নেয়া।

জেলা জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক জানান, এ মামলার বেশ কয়েকজন আসামি ঢাকার হলি আর্টিসান মামলার আসামি। ৫ আসামির মধ্যে তিন জনকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। সব আসামিকে এক সাথে আদালতে হাজির করাতে না পারায় এখনও সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করা যাচ্ছে না। তবে আদালত স্বাভাবিক হলে গুরুত্ব সহকারে এ মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকর রহমান খালেদ, বিপিএম (বার) জানান, জঙ্গি হামলায় নিহত ও আহতদের পরিবারকে পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিবছর এ দিনে আহত ও নিহতদের পরিবারকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। এ মামলায় জঙ্গিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা জেলা পুলিশের এ শীর্ষ কর্মকর্তার।

কেএপি

আরও পড়ুন