• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০১৯, ০৯:৫১ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১২, ২০১৯, ০৯:৫১ এএম

ক্যাসিনো-টেন্ডারবাজি 

দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টায় সাবেক ও বর্তমান ২০ কাউন্সিলর 

দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টায় সাবেক ও বর্তমান ২০ কাউন্সিলর 
ক্যাসিনো সামগ্রী

কাউন্সিলর মিজান ধরা পড়ার পর ক্যাসিনোকাণ্ড ও টেন্ডারবাজির সঙ্গে জড়িত সাবেক ও বর্তমান প্রায় ২০ জন কাউন্সিলর দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের এমন তথ্যের ভিত্তিতে অপকর্মের হোতা কাউন্সিলররা যাতে সীমান্ত পাড়ি দিতে না পারে এ জন্য  দেশের সকল সীমান্তে সতর্কসহ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া সীমান্তের চেকপোষ্টগুলোতে তাদের ছবি সম্মিলিত প্রোফাইল পাঠানো হয়েছে। 

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মিজান গ্রেফতারের পর ঢাকার দুই সিটির সাবেক ও বর্তমান ২০ কাউন্সিলরের টনক নড়েছে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ক্যাসিনো ও জুয়ার আসর পরিচালনা, মাদক ব্যবসা, ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ ও পরিবহনে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, এলাকার বিভিন্ন ক্লাব, সামাজিক সংগঠন, বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাত নিয়ন্ত্রণে নেন তারা।খেলাধুলার নামে এসব ক্লাবে শুরু করেন ক্যাসিনো ও জুয়ার আসরসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড। শুধু দেশে নয়,বিদেশেও তাদের কারও কারও ক্যাসিনো ব্যবসা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

তারা এখন গ্রেফতার  এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

এ ব্যাপারে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন জানান, বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমার কানে এসেছে।এক ডজনেরও বেশি কাউন্সিলর বোর্ড সভায় নিয়মিত উপস্থিত হন না। আমরা এরই মধ্যে তাদের বহুবার সতর্ক করেছি। একজনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়েও লিখিতভাবেও অভিযোগ জানিয়েছি। তিনি যাতে অনুমতি ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ করতে না পারেন, সেজন্য আমরা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকেও চিঠি দিয়ে জানিয়েছি।

অন্যদিকে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে কাউন্সিলররা বোর্ড সভায় অনিয়মিত থাকেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
 
ডিএসসিসির যেসব কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারা হলেন- ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান, ৫ নম্বর আশ্রাফুজ্জামান, ৯ নম্বর কাউন্সিলর হাজী একেএম মমিনুল হক সাঈদ, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তফা জামান (পপি), ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ রতন, ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তরিকুল ইসলাম সজীব, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হাসান, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু অন্যতম।

এদিকে ডিএনসিসির কাউন্সিলররা হলেন- সাত নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবাশ্বের হোসেন চৌধুরী, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ওরফে ইরান ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিবসহ আরো অনেকে। 

সূত্র জানায়, নির্বাচিত হওয়ার পর দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এলাকার বিভিন্ন ক্লাব, সামাজিক সংগঠন, বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাত নিয়ন্ত্রণে নেন তারা। খেলাধুলার নামে এসব ক্লাবে শুরু করেন ক্যাসিনো ও জুয়ার আসরসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও তাদের কারও কারও ক্যাসিনো ব্যবসা রয়েছে বলে অভিযোগও শোনা যায়।

ডিএসসিসির ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা পুরোটাই অসত্য। খালিদ মাহমুদ ভুইয়ার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ডিএসসিসির ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আশ্রাফুজ্জামানের সঙ্গে মমিনুল হক সাঈদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। 

এসব অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ক্যাসিনো, মদ, জুয়া, নারী, দখলবাজিসহ কোনও অপরাধের সঙ্গে আমি জড়িত নই।

২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমদ রতনের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। তবে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি এসব অসৎ কাজের সঙ্গে জড়িত নই বরং আমিই সর্বপ্রথম এসব অবৈধ কাজ বন্ধ করার জন্য সিটি করপোরেশনের একটি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলাম। আমি সিটি করপোরেশনের কোনো ঠিকাদারি কাজ করি না।

৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হাসান স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ভাগিনা। তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পুরান ঢাকার সোয়ারিঘাটসহ আশপাশের এলাকা। তিনি মালবাহী পরিবহন সমিতির নেতা। তিনি বলেন, হাজী সেলিম আমার মামা। আমাদের একটা পারিবারিক ঐতিহ্য আছে। এলাকা মাদকমুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়ে কাজ করছি। আমার কোনো ক্যাসিনো ব্যবসা নেই।

ডিএসসিসির ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তফা জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দলীয় পদের প্রভাব খাটিয়ে গুলিস্তান, পল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগর, রাজারবাগ, মৌচাক ও মালিবাগ এলাকার সব ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। অভিযোগগুলোর বিষয়ে মোস্তফা জামান জানান, তিনি একজন সাধারণ কাউন্সিলর। তিনি এসব কাজের সঙ্গে জড়িত নন। 

ডিএসসিসির ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তরিকুল ইসলাম সজীব ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে এলাকায় মাদক, চাঁদাবাজি, ছাড়াও ক্যাসিনো ক্লাবেও নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জুর বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের আওতাধীন টিকাটুলীর রাজধানী সুপার মার্কেট ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেটে অবৈধ দোকান বসিয়ে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করেন। এ ব্যাপারে তিনি কোন কথা বলেননি।

ডিএনসিসির ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তেজগাঁও কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকা, এলাকায় চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে সেটি সত্য নয়।

এইচ এম/বিএস 
 

আরও পড়ুন