• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০১৯, ০৩:২২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১০, ২০১৯, ০৩:২২ পিএম

পদে পদে ঠোকাঠুকি

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে সংঘাত ক্রমশ তীব্র হচ্ছে রাজ্যপালের

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে সংঘাত ক্রমশ তীব্র হচ্ছে রাজ্যপালের

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রশাসনের ঠোকাঠুকি চলছিলই। এবার তা প্রকাশ্য সংঘাতের পর্যায়ে চলে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন রাজ্যপাল। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই প্রতিক্রিয়াগুলো হচ্ছে রীতিমতো তীর্যক এবং আক্রমণাত্মক। 

রাজ্যপাল সর্বশেষ তোপ দেগেছেন শনিবার (৯ নভেম্বর) সকালে, কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবকে কেন্দ্র করে। শুক্রবার কলকাতা নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে উদ্বোধন হয়েছে ২৫তম কলকাতা আর্ন্তজাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের। রাজ্যপালের অভিযোগ, তাকে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। রাজ্য প্রশাসনের বক্তব্য, চলচ্চিত্রে কোনোবারই রাজ্যপালকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। এমন কোনো রীতিই নেই। দ্বিতীয় কথা হল, চলচ্চিত্র উৎসব পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুষ্ঠানও নয়। সরকার বিভিন্ন হল দিয়ে চলচ্চিত্র উৎসব কমিটিকে সাহায্য করে মাত্র।

কিন্তু তাতে আদৌ দমে যাওয়ার পাত্র নন রাজ্যপাল ধনখড়। তিনি আগেই একাধিকবার বলেছিলেন, আমাকে খাঁচায় বন্দি করে রাখা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে আমার যখনই মনে হবে, তখনই পদক্ষেপ করব। তিনি আরও বলেছিলেন রাজ্য প্রশাসনের যেকোনো কাজে এবং অনুষ্ঠানে তিনি শরিক হতে চান। কিন্তু কোনো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পাওয়ার বিষয়কে তিনি যে এত স্পর্শকাতর জায়গায় নিয়ে যাবেন, তা যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার বুঝতে পারেনি, তেমনই আন্দাজ করতে পারেনি রাজনৈতিক মহলও। 

গতকাল চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে আমন্ত্রণ না পেয়ে ধনখড় বলেছেন, উৎসবে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হল না। ভাবুন, আমাদের রাজ্যে এত বড় একটা আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে, সেখানে রাজ্যপালই আমন্ত্রিত নন। আমি আমন্ত্রণ না পেয়ে ব্যথিত নই, শুধু সরকারের মানসিকতা দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি। এটা শুধু আমাকে অপমান করাই নয়, গোটা সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে অপমান করা।

রাজ্যপালের যাবতীয় অভিযোগের জবাব দেয়ার দায়িত্ব নেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এবারও তিনিই জবাব দিয়ে বলেছেন, রাজ্যপাল সবসময় গুরুত্ব পেয়ে খবরে থাকতে চান। সেই দায় রাজ্য সরকারের নয়।

এর আগে অবশ্য বিসর্জন কার্নিভালে (সরকারি উদ্যোগে দুর্গাপূজার বিসর্জনের উৎসব, যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েক বছর হল শুরু করেছেন) আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সস্ত্রীক রাজ্যপালকে। কার্নিভালের ঠিক পরের দিন মমতা সরকারের প্রতি তোপ দেগে ধনখড় বলেছিলেন, এত অপমানিত আমি জীবনে হইনি। আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েও মূল মঞ্চে বসতে দেয়া হল না। আমাকে বসানো হল অতিথিদের সঙ্গে। সেখানে বসে মূল অনুষ্ঠানের কিছুই আমি দেখতে পেলাম না। মমতা সরকারের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন সেদিন রাজ্যপাল। তবে এর কিছুদিন পরেই ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন রাজ্যপাল।

সেই সুযোগ লুফে নিয়ে মমতা তাকে বলেছিলেন, ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানে আপনি স্বাগত। তবে এর আগে আমার বড়িতে কালীপুজোর অনুষ্ঠানে আসুন। সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে রাজ্যপাল যান মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কালীপুজোয়। তারপর থেকে সব একরকম গতানুগতিকভাবেই চলছিল। গোল বেঁধেছে শুক্রবার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রণ না পাওয়া নিয়ে রাজ্যপালের ফের বিক্ষোভে।

বস্তুত, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে রাজ্য সরকারের ঝামেলার সূত্রপাত যাদবপুর কাণ্ড নিয়ে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন একটি অনুষ্ঠানে। অতি বাম এবং বাম ছাত্র সংসদ নিয়ন্ত্রিত যাদবপুরে দক্ষিণপন্থী (বিজেপি) কোনো দলের সাংসদকে যে সাদর অভ্যর্থনা জানানো হবে না সেটা জানাই ছিল। সেদিন যাদবপুরে ছা্ত্রছাত্রীদের একাংশের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন বাবুল। তাকে ঘেরাও করা হয়।

এরপরেই তৎপর হয়ে ওঠেন রাজ্যপাল ধনখড়। আটকে থাকা বাবুলকে উদ্ধারের জন্য রাজ্য প্রশাসন ও পুলিশের ওপর ভরসা না করে নিজেই সরাসরি চলে যান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাবুলকে উদ্ধার করে আনতে। বস্তুত সেটাই ছিল রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজভবনের সংঘাতের সূত্রপাত। রাজ্যপাল ধনখড় স্থির করেন, পশ্চিমবঙ্গের দুই প্রান্ত উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গে প্রশাসনিক সভা করবেন সেখানকার বিধায়ক, সাংসদ, জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে। আগে থেকে রাজভবন থেকে বার্তা পাঠানো হলেও শিলিগুঁড়িতে উত্তরবঙ্গের সেই সভায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। রাজ্যপাল সেখানে স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে ফিরে আসেন কলকাতায়। বলেন, আশা করছি পরেরবার থেকে আর এমন হবে না। কিন্তু কোথায় কী! দক্ষিণবঙ্গের প্রশাসনিক সভাতেও ছিল এক ছবি। সেখানেও উপস্থিত ছিলেন না জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে সরকারি কোনো প্রতিনিধিই। সেবারও কলকাতায় রাজভবনে ফিরে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ওপর তোপ দেগেছিলেন রাজ্যপাল।

এফসি

আরও পড়ুন