রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ পরিচালনার দায়ে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে দায়েরকৃত মামলার শুনানি শুরু হচ্ছে ডিসেম্বর মাসেই। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই জানিয়েছে ফরাসী বার্তা সংস্থা এএফপি
এর আগে সোমবার (১৮ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে এ গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু হবে। রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের ঘটনায় এটিই প্রথম কোনও আন্তর্জাতিক আইনি উদ্যোগ বলেও জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি।
রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের ঘটনায় আইসিজেতে দায়ের করা গাম্বিয়ার এই মামলাটিকে এরইমধ্যে স্বাগত জানিয়ে সর্বাত্বক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে কানাডা। এছাড়া সম্প্রতি আর্জেন্টিনাতেও এই ইস্যুতে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
গত ১৩ নভেম্বর এ বর্বরোচিত নৃশংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী ও দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি-র বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করে আর্জেন্টিনার কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার আইনজ্ঞরা। এতে আসামি করা হয়েছে সুচি এবং মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ দেশটির কয়েকজন শীর্ষ সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাকে। এতে বলা হয়, অভিযুক্তদের কারণে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খুন, ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের বাস্তবতায় জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। নৃশংস এ বর্বরতাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে গত ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-এর কাছে বিচার চায় গাম্বিয়া। ৫৭টি মুসলিম দেশের সংগঠন ওআইসি-এর পক্ষ থেকে এই মামলা দায়ের করে গাম্বিয়া। মামলায় বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা চালিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এটি ১৯৪৮ সালের ইউএন জেনোসাইড কনভেনশনের লঙ্ঘন।
ইতোমধ্যে দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে মিয়ানমারে সংগঠিত গণহত্যা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক আদালত। এদিকে আইসিজে'র সদস্য না হওয়ায় তাদের এই তদন্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার। তবে ‘সর্বজনীন এখতিয়ার’ নীতিমালা অনুসারে বিশ্বের যে কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গণহত্যা, জাতিগত নিধনযজ্ঞ এবং যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগেরভিত্তিতে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার অধিকার রাখে আন্তর্জাতিক আদালত।
এরই প্রেক্ষিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনত অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচারিক কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েছে আইসিজে।
এসকে