• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯, ০৫:৪২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯, ০৫:৪২ পিএম

চট্টগ্রামের ৭৭ বধ্যভূমিতে শতাধিক প্রতিষ্ঠান

চট্টগ্রামের ৭৭ বধ্যভূমিতে শতাধিক প্রতিষ্ঠান
বধ্যভূমির জায়গা দখল করে নির্মিত হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা  -  ছবি : জাগরণ

চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ৭৭টি বধ্যভূমিতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে শতাধিক প্রতিষ্ঠান। যদিও এক দশক ধরে এসব বধ্যভূমি সংরক্ষণে নানামুখী উদ্যোগের কথা বলেছে প্রশাসন।

১৯৭১ সালের নভেম্বর মাস। চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় ট্রেন থেকে নামিয়ে আর আশপাশের এলাকা থেকে ধরে এনে একদিনে জবাই করে পাঁচ হাজারের বেশি নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করা হয় ফয়’স লেকে। পুরো নয় মাস ধরে এ স্থানটিকে বধ্যভূমি হিসেবে ব্যবহার করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী ও বিহারিরা।

এরপর কেটে গেছে চার যুগ কিন্তু এ বধ্যভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়নি কেউ। উল্টো সেই বধ্যভূমিতে একটি বিশাল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে একটি বিশেষ মহল। বধ্যভূমি থেকে কিছু দূরে নির্মাণ করা হয়েছে লোক দেখানো একটি স্মৃতিস্তম্ভ।

একই অবস্থা হালিশহরের মধ্যম নাথপাড়া ও আবদুরপাড়া বধ্যভূমির। এখানে বিহারিরা হত্যা করেছিল ৩৬ নিরীহ বাঙালিকে। কয়েক বছর আগে বেসরকারি উদ্যোগে দায়সারা গোছের একটি স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলা হয় এই বধ্যভূমিতে। তবে তদারকির অভাবে সেখান থেকে মুছে গেছে শহীদদের নামও।

শুধু পাহাড়তলী ফয়’স লেক, নাথপাড়া বা আবদুরপাড়া নয়; চট্টগ্রাম নগরীতে একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত এমন ৭৭টি স্থান রয়েছে, যেগুলো মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলার অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ মানুষদের ওপর চালানো নির্যাতন-হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী হয়ে আছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের মতে, মুক্তিযুদ্ধের পর এসব বধ্যভূমিতে মিলেছে পাকিস্তানি হানাদারদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার সেইসব মানুষদের কঙ্কাল ও নিপীড়নের দাগ। যাদের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য বছরের পর বছর দাবি উঠলেও একটি বধ্যভূমিও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

তবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেনের দাবি, চট্টগ্রামের বধ্যভূমিসহ মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতিচিহ্ন সংস্কার ও সংরক্ষণের প্রক্রিয়া চলছে। পাহাড়তলী বধ্যভূমির জমি অধিগ্রহণ নিয়ে দুটি মামলা হয়েছে। একটিতে আপিল বিভাগ জমি অধিগ্রহণ করে বধ্যভূমি সংরক্ষণের আদেশ দিয়েছেন। হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত আরো একটি মামলা রয়েছে। ওই মামলার আদেশ হাতে পেলেই জমি অধিগ্রহণ করা হবে। অন্য বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বধ্যভূমি সংরক্ষণের বিষয়ে সরকারের একটা আলাদা প্রকল্প আছে। তবে সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছুই বলতে পারেননি।

প্রজন্ম ৭১-এর সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক মুক্তিযোদ্ধা ড. গাজী সালেহ উদ্দিন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ৭৭টি বধ্যভূমি আছে চট্টগ্রাম নগরীর ভেতরেই। এর মধ্যে মহামায়া ডালিম হোটেল বধ্যভূমি, গুডসহিল বধ্যভূমি, পূর্ব পাহাড়তলী বধ্যভূমি, পশ্চিম পাহাড়তলী বধ্যভূমি, দক্ষিণ বাকলিয়া মোজাহের উলুম মাদ্রাসা বধ্যভূমি, বাটালী পাহাড়ের রেলওয়ে বাংলো বধ্যভূমি, পাঁচলাইশ সড়কের আলবদর বাহিনী ক্যাম্প বধ্যভূমি, চট্টগ্রাম জেনারেল পোস্ট অফিস বধ্যভূমি, সিআরবি নির্যাতন কেন্দ্র বধ্যভূমি, চন্দনপুরা রাজাকার ক্যাম্প বধ্যভূমি, চাক্তাই খালপাড় বধ্যভূমি, চামড়ার গুদাম চাক্তাই খাল পাড় বধ্যভূমি, তুলশী ধাম সেবায়েত মন্দির বধ্যভূমি, হাইওয়ে প্লাজা ভবন বধ্যভূমি, প্রবর্তক সংঘের পাহাড় বধ্যভূমি, চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামের পাশের সেনাক্যাম্প বধ্যভূমি, সার্কিট হাউস বধ্যভূমি, বন্দর আর্মি ক্যাম্প বধ্যভূমি, রেলওয়ে ওয়ার্কশপ বধ্যভূমি, সদরঘাট রাজাকার ক্যাম্প বধ্যভূমি, ঝাউতলা বিহারি কলোনি বধ্যভূমি ও সিভিল গোডাউন বধ্যভূমি উল্লেখযোগ্য। এসব স্থানে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসররা মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করেছে। অথচ দীর্ঘ এই সময়ে চট্টগ্রামে একটি বধ্যভূমিও সংরক্ষণ করা হয়নি। বরং বধ্যভূমি দখল করে শতাধিক নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে একটি বিশেষ মহল।

এনআই

আরও পড়ুন