• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২০, ২০১৯, ০৯:১৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২০, ২০১৯, ০৯:২০ পিএম

মাহমুদা রিনি‍‍‍‍`র কবিতা 

মাহমুদা রিনি‍‍‍‍`র কবিতা 

বাবার কাছে লেখা চিঠি---

পৃথিবীর কোলাহল মুখর এই জনারণ্যে তুমি আমায় একলা ফেলে হারিয়ে গেলে বাবা!
বাবা, তুমি কি জানতে না, আমি জনসমাগম দেখলে
ভয় পাই। আমি রাস্তা ঘাট মনে রাখতে পারি না, পথ
হারিয়ে ফেলি, আমার দিকভ্রম হয়!
তুমি জানতে না, বিদ্যুৎ চমকালে আমিও চমকে উঠি,
কানে হাত চাপা দিয়ে লুকিয়ে পড়ি। কিন্তু কোথায়
লুকাবো, কার কাছে---?


আমি কাঁচাবাজার করতে পারি না, দাম দর বুঝি না,
মাছ বাজারের সব আমার আত্মীয় স্বজন। নানান
সম্বোধনে ডেকে তারা আমায় তাদের পছন্দমত পচা
মাছটাই দেয়। জানো বাবা, বাসায় এসে দেখে আমার
কান্না পেয়ে য়ায়। ব্যাংকের লাইন, মাসের বিল পরিশোধ,
আরো কত্ত কি কাজ, এতসব কি আমি পারি বাবা--?
তুমি তো জানতে বাবা, রোদ্রে আমি চোখ মেলতে পারি
না, কতদিন তুমি ছাতা ধরে রেখেছো আমার মাথায়----
তবুও তুমি আমাকে প্রখর রোদ্রে একা ছেড়ে দিলে--?

সংসারের অধিকার অনধিকারের নিশ্চুপ যাতাকল,
বিবেকহীন দায়িত্ববোধ, সমাজ সংস্কারের অন্ধকার
অলি গলি, মানুষের প্রতি মানুষের অমানবিক আচরণ,
হিংসা, হিংস্রতা এসবের কিছুই তুমি আমাকে শেখাওনি
বাবা। তোমার কাছেই তো আমি শিখেছি----- মানবিক
মূল্যবোধ, অবিচল আদর্শ, সর্বোপরি মানুষের প্রতি
ভালোবাসা। জেনেছি--- মানুষের উপর থেকে বিশ্বাস
হারানো পাপ। জানো বাবা,সেই বিশ্বাসও আমি
একটু একটু করে হারিয়ে ফেলছি।
আজ একলা পথে চলতে গিয়ে, প্রতি পদে হোঁচট খেতে
হয়, রক্তাক্ত হতে হয়, এই মানুষের জন্যই----।প্রতিদিন
খবরের কাগজ, টিভি নিউজ কি খবর দেয় তুমি জানো;
শুনলে তোমার অন্তরআত্মা কেঁপে উঠবে। খুনোখুনি
মারামারি, অস্থির উচ্চাভিলাষী রাজনীতি, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। ফুলের মত নিষ্পাপ মেয়েগুলি লাঞ্চিত, ধর্ষিত,
মরে পড়ে থাকে রাস্তায়। এমন সব রক্তাক্ত খবর।

ভালো খবরও আছে--- উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে দেশ,
জি ডি পি মাত্রা সাত ছাড়িয়েছে। কিন্ত মনুষত্বের মাত্রা
যে শূণ্যের কোটায় নেমে যাচ্ছে বাবা---
কেন বলতে পারো?

আজ আমি অনেক বড় হয়েছি বাবা, একা চলতে শিখেছি। তবুও চলতে চলতে ভাবি, সেই সমাজ ব্যবস্থা কোথায়-
যা তুমি আমাকে শিখিয়েছিলে!
কি জানি-- সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যায়।
চারিদিকে যেন শুধু উভয় সংকট!
ক্ষমা করে দিও বাবা, যদি তোমার শেখানো আদর্শ
থেকে বিচ্যুত হয়ে যাই, ভুল করে ফেলি--
তবুও ছেড়ো না, অদৃশ্য হাতে শক্ত করে ধরে রেখো----
তুমিও ভালো থেকো------
আমি---
তোমার অতি আদরের-----

বি দ্রঃ তুমি শুনলে খুশি হবে বাবা---
আমি এখন আর ভয় পাই না,
রাস্তা হারাই না,
বিদ্যুৎ বজ্রপাতে না,
প্রখর রোদ্রেও না------

আমি এখন আর ভয় পাই না।

ইনস্ট্যান্ট আষাঢ়ে গল্প

মেঘ মল্লারে আগমনী সুর বাজে দূরে কোথায়----
বুঝি আষাঢ় এলো ঐ
কদম্ব কলি অবনত লাজে বৃষ্টির অপেক্ষায়---
বুঝি আষাঢ় এলো ঐ
আকাশের রঙ কোন অভিমানে এমন বদলে যায়---
বুঝি আষাঢ় এলো ঐ
বাতাসে যেন কার কোমল পরশ উচাটন করে প্রায়---
বুঝি আষাঢ় এলো ঐ
এমন বিরহ বিধুর দিন কাটেনা যেন সময়----
বুঝি আষাঢ় এলো ঐ
জল টুপটাপ, শুনি চুপচাপ আকাশের পানে চাই--
বুঝি আষাঢ় এলো ঐ


গঙ্গা অশ্রু---

গঙ্গা যখন স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নেমে আসে
তার দুর্বার দূরন্ত গতি সামাল দিতে--
শিবের জটায় তাকে ধারণ করতে হয়।

কান্না যখন প্রবল বেগে প্রকাশ পায়,
তাকে ধারণ করার মত জটা'র
বড় অভাব চিরকালই থেকে যায়।

গঙ্গা প্রকান্ড প্রচন্ডা, গতিতে দুর্বার---
তাকে আগলে নিতে ধরিত্রী
দুহাত বাড়িয়ে দেয়।

অশ্রুধারা অন্তঃসলিলা বহমান---
যত প্রবলই হোক না কেন
তাকে নিঃসঙ্গ বয়ে যেতে হয়।