• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২০, ০৬:৫৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ১৫, ২০২০, ০৭:২১ পিএম

শীতে রচিত পঙক্তিমাল

লিপি নাসরিনের কবিতা

লিপি নাসরিনের কবিতা

তোর কি এমন হয়

তোর কি এমন দুঃখ হয়!
আমার যেমন সুখেও লাগে ভয়
ভেবেই মরি হয়তো কোথাও  
দুঃখ বুঝি তাকিয়ে রয়।

তোর কি এমন কষ্ট হয়?
আমার যেমন পূর্ণতায় ও ক্ষয়
এই আনন্দেতে বিষাদ বুঝি 
ডেকে আনে মস্ত প্রলয়

তোর কি এমন হিংসে হয়?
আমার যেমন ভালোবাসাও ভালো নয়
 স্বপ্ন যখন আঁখির রেখায়
রাতের ঘুমে পালিয়ে যায়

তোর কি এমন ইচ্ছা হয়!
আমার যেমন আকাশ অনেক স্বপ্নময় 
কোন সে এক অচিন মেঘে 
আকাশ বুঝি মলিন রয়।

তোর কি এমন ভাব হয়?
আমার যেমন বন্ধু বন্ধু শত্রু খেলায়
সর্বনাশের এই খেলাতে
মেলা  বুঝি ভেঙে যায়।

তোর কি এমন নদী হয়!
আমার যেমন নদী অনেক প্রেমময়
তাই মোহনার সঙ্গমেতে
নদীর বুঝি  জলান্বয়

তোর কি এমন প্রেম হয়?
আমার যেমন অচিন প্রেম হৃদময়
ভেবেই মরি প্রেম সুধায় 
যদি না হই কাব্যময়।

দলিল

দলিলটাতে সব রেজিস্ট্রি হয়েছিল ঠিকঠাক;
আমরা কতবার চোখ মিলিয়ে দেখেছিলাম 
স্বামী-স্ত্রী,ভরণ-পোষণ
সুখ-দুঃখ, ভাগাভাগি, 
বিশ্বাস-আস্থা, ভুল হলে: 
ভুল  করে ভুল না বোঝা
কাউকে ছেড়ে দূরে না থাকা,
ইত্যাদি ইত্যাদি...
কিন্তু একবার ও নজরে পড়েনি
আসল শব্দটাই  লেখা হয়নি,
তাইতো ভালবাসা হয়নি আর
আমরাও ফিরিনি, একটি শব্দবিহীন 
সে পুরানো দলিল বদ্ধ আলমারিতে 
আজ যেন অস্থিচর্মসার।

তোমাতেই ফেরা বার বার

একদিন কোলাহল থেমে যায় 
ফুরিয়ে যায় রশ্মি, 
তবুও প্রতিফলন জ্বলে অবিরত:
তোমার -আমার সে প্রেম; বসন্ত চিতায়
রেখে যায় ভাঙনের ছাপ।
হয়তো সেই ভালো
আমরা বিনীত নির্মোহে বহু থেকে
হয়ে যায় এক ও একান্ত...
তারপর যুগলের মোহে ডেকে আনি রাত
ঘনবদ্ধ সঙ্গীত যেন দূরের কোন সাগর থেকে
উঠে এসে রেখে যায় তার অনন্ত অভিসার...
তারপর পেরিয়ে গেছে বহু বছর,
আমরা পরস্পরকে ভুলে গেছি
তোমার পরেও জীবনে প্রেম এসেছে বহুবার
কিন্তু সেই তুমিই আদি আর অনন্ত রয়ে গেলে
আজও কথা হলে; সেই শেষ তুমি কী করে আবার শুরুতে ফেরো ভেবে পাই না আর।


সব মানুষই দুখি
সব মানুষই দুখি;
অলক্ষ্যে তা কারো কাছে
সোনার খাঁচার ময়না পাখি,
কারো আবার নিত্য কেবল
বাইরে এসে ভরায় আঁখি...
সব মানুষই দুঃখি
দুঃখটাকে বুকের ভিতর পেলে পুষে রাখি,
বাইরে কেবল খোলস তার
হাসিমুখে দায় দেনা ভার,
মিটিয়ে দিতে কালের খাতায় 
জমা রাখে ব্যস্ত সময়:

হিসেব তবু মিলছে না যে
যতই চেষ্টা সবই মিছে,
দিন শেষে ঐ একটি তারা
আকাশ বুকে সঙ্গি হারা,
যোজন যোজন বর্ষ দূরে
যে যার মত কক্ষে ঘোরে।


তুমি ভালোবাসলেই


যদি তুমি ভালবাসো-
আমি স্বেচ্ছায় মরে গিয়ে
ঈশ্বরের কাছে নতুন জীবন চাইবো
বলবো- ঈশ্বর, একটিবার নতুন জীবন দাও
নতুন করে ভালবাসিবার দাও অধিকার ...

তবুও প্রেম আসুক হৃদয়ের শুষ্ক বালুচরে
আসুক অবধারিত রাত্রির মত দিনের পরে,
প্রচণ্ড তাপে-দাহে ক্ষত জমিনের বুকে
ঝড়ো বৃষ্টি নামুক বৈশাখের তাণ্ডবে...
তবুও প্রেম আসুক বৈরী কুঞ্জে
অধীর চাপা সংকুচিত গহ্বরে না চাইতে
এ যেন আসতেই হয়
কোন ব্যত্যয়, কোন দ্বিধা নয়
প্রেম যেন এক অবধারিত নিশ্চয়।


আয় পদ্মবিলে যাই

আয় পদ্মবিলে যাই
তুই আমার এলো চুলে পদ্মফুল গুঁজে দিবি, 

পদ্মরেণু মেখে আমি দু'হাতে আকাশ ছুঁয়ে দেখবো।
দেখবো তোর আকাশটা কতো বড়!
আমি আঁচলে বাতাস ধরে তোর গায়ে মেখে দেবো
আমি ঐ নীলিমার কোলে মেঘ হয়ে ভেসে যাবো
বৃষ্টিরেণু হয়ে তোকে ভিজিয়ে দেবো সহস্রবার 
তুই বারবার প্রেমিক হয়ে জন্ম নিবি


আর অমি হবো ছাইরঙা মেঘ
তোকে ভিজিয়ে দিয়ে পালিয়ে যাবো পদ্মের পাপড়িতে
কালো জলে চোখ পেতে আমরা আকাশ দেখবো
দেখবো কোন এক প্রাচীন নগরী ঘুমিয়ে আছে অতলের আহ্বানে
তুই আমি আর কতো সহস্রাব্দের নর-নারীর প্রেম
মিশে আছে এইখানে আকাশ আর জলের সঙ্গমে।