• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২০, ০৩:২৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৭, ২০২০, ০৩:২৩ পিএম

হাওরাঞ্চলে ধামাইল গান রক্ষায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

হাওরাঞ্চলে ধামাইল গান রক্ষায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

হাওরাঞ্চলে বিলুপ্ত প্রায় এক সময়ের জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী ধামাইল গান রক্ষায় নেত্রকোনার হাওরদ্বীপ খালিয়াজুরীর একদল তরুণী নিয়েছেন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।

খালিয়াজুরী উপজেলার নগর ইউনিয়নের তাতিয়া গ্রামের শিক্ষিত ওই তরুণীরা সম্প্রতি নিজেদের উদ্যোগ আর স্বেচ্ছাশ্রমে বিভিন্ন গ্রামে আয়োজন করছেন ধামাইল গানের আসর। ‘মহুয়া ধামাইল দল’ নামে দলবদ্ধ হয়ে ১৮ জনের ওই তরুণী দল তাদের আশপাশের গ্রামে বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গানের আসর বসান বলে জানিয়েছেন, দলটির নেত্রী শেফালি সরকার।

 

তিনি জানান, হাওরাঞ্চলে ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক ভাবে রয়েছে যেমন ভিন্নতা তেমনি রয়েছে আলাদা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। বিশেষ করে এ ঐতিহ্যের অন্যতম হলো ধামাইল গান। এ ধামাইল ইন্টারনেটের অপব্যবহার আর অপসংস্কৃতির ভিরে হারিয়ে যাচ্ছে প্রায়। তাই ঐতিহ্যের এ ধামাইল গানকে বাঁচিয়ে রাখতে আমরা আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আর্থিক সহায়তা পেলে আমাদের পক্ষ থেকে দূর-দুরান্তের গ্রামসমূহেও এ গানের আসর বসানোর আয়োজন করতে পারতাম, যোগ করেন শেফালি।


সংস্কৃতির উৎকর্ষতার জন্য ধামাইল গানের বিকল্প নেই- এমন মন্তব্য করে ও মহুয়া ধামাইল দলকে সাধুবাদ জানিয়ে খালিয়াজুরী উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষক জহরলাল দেব রায় বলেন, শত বছর পূর্বে ধামাইল গানের আবির্ভাব ঘটে। এ গানের প্রবর্তক লোকসংগীতের পুরোধা সাধক কবি রাধারমন দত্ত। পরবর্তীতে এ গান সৃষ্টিতে আরো অনেকেই অবদান রেখেছেন। এ গানের প্রবর্তক আর অন্যান্য রচয়িতারা সবাই হাওরাঞ্চলের বাসিন্দা। তারা নিজেদের লোক-কৃষ্টিকে সমৃদ্ধ ভাবে তোলে ধরায় এ গান হাওরাঞ্চলে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে তা ঐতিহ্যে রূপান্তিরিত হয়েছিল। এখন প্রায় এক যুগ ধরে ধামাইল গান বিলুপ্ত হতে চলছে। হাওরাঞ্চলের বিয়ে, পূজা-পার্বনসহ প্রায় সব ধরনের অনুষ্ঠানের নান্দনিকতা বাড়িয়ে দেয়া। এ গানের ছন্দ আর সুর বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি নানান পৃষ্ঠপোষকতা। 

খালিয়াজুরী সদরের সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব তারা প্রসন্ন দেব রায় ও তাতিয়া গ্রামের নিশিকান্ত সরকারসহ স্থানীয় অনেকেই জানান, ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীদের সাংস্কৃতিক চর্চা ও প্রসারে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সরকারি উদ্যোগে যেমন ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে কালচারাল একাডেমি তেমনি ভাবে হাওরাঞ্চলের বিলুপ্ত প্রায় ধামাইল ও অন্যান্য লোকসংস্কৃতি রক্ষাসহ মানুষের চিত্ত বিনোদনের জন্য খালিয়াজুরীতেও গড়ে তোলা হোক যুগোপযোগী ‘কালচারাল একাডেমি’।

এ প্রসঙ্গে খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, হাওরাঞ্চলীয় মানুষের চিত্ত বিনোদনের মৌলিক গান ধামাইলকে প্রসার ও বাঁচিয়ে রাখতে ওই তরুণীদের চালিয়ে যাওয়া স্বেচ্ছাশ্রমের কাজটি প্রসংসনীয়। তাদের এ কার্যক্রমকে উজ্জিবিত রাখতে প্রশাসনিক ভাবে চেষ্টা করা হবে সর্বোচ্চ সহায়তা দেবার। 

তিনি আরো বলেন, এ অঞ্চলের ধামাইল, জারি, সারি, বাউল, পালা গানসহ সব ধরনের লোক সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট উপর মহলে তোলে ধরা হবে। সেই সাথে এখানে কালচারাল একাডেমি গড়ে তোলার বিষয়টিও। 

জাগরণ/এম‌মি/এমআর