• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩১, ২০২০, ০৯:২৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ৩১, ২০২০, ১১:৩০ পিএম

এক্সপেরিমেন্ট ২০২০-২০২১!

এক্সপেরিমেন্ট ২০২০-২০২১!

২০২০ সালের মাঝামাঝি দিকে, যখন করোনা কোভিড নাইনটিন হয়ে প্রতাপের সঙ্গে পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল। তখন শান্তিনগরের আসগর সাহেবের সন্দেহ হল তার বোধহয় করোনা হয়েছে। তিনি ঝুকি নিলেন না, দু জায়গায় টেস্ট করালেন। একটা টেস্টে এলো ‘কভিড ১৯ টেস্ট নেগেটিভ’ আর একটায় এলো ‘কভিড ১৯ টেস্ট পজিটিভ’। আসগর সাহেব ছাত্র জীবনে ফিজিক্সে পড়াশুনা করেছেন। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উপর তার একটা কোর্স ছিল। সে কারণেই কিনা কে জানে তার নিজেকে হঠাৎ করে শ্রডিঞ্জারের বিড়াল মনে হল। যেন তিনি একই সঙ্গে জীবিত আবার মৃত...।

বরং আমরা কিছুক্ষণের জন্য  শ্রডিঞ্জারের বিড়ালের সেই বিখ্যাত এক্সপেরিমেন্টে একটু ঢুকি। ধরে নেই কেউ একজন এই এক্সপেরিমেন্টটা করছে। একটা বাক্সের ভিতর একটা বিড়াল। তার সঙ্গে আছে গাইগার আর তেজস্ক্রিয় পদার্থ। বিড়ালটা নড়াচড়া করলে গাইগার কাউন্টার কার্যকরী হয়ে তেজস্ক্রিয় পদার্থ বের হয়ে আসবে বিড়ালটা মারা পরবে। অর্থাৎ বাক্স না খুললে আমরা জানব না ভিতরে কী ঘটেছে। বাক্সের বাইরে কিন্তু চিন্তা একটাই বাক্সের ভিতরে এই মূহুর্তে বিড়াল দুটির একটি জীবিত আর একটি মৃত।

এখন কথা হচ্ছে জীবিত বিড়ালটি ক্ষুধার্ত হতেই পারে। এবং সে যেহেতু ক্ষুধার্ত তাই সে মৃত বিড়ালটি খেয়ে ফেলল। এখন বিড়াল কিন্তু একটি। দ্বিতীয় একটি চিন্তা আসতে পারে সেটা হচ্ছে বাক্স খুললে দেখা যাবে মৃত বিড়ালটি আছে। তার মানে জীবিত বিড়ালটি কই? (আমরা কিন্তু ধরেই নিচ্ছি বাক্সের ভিতরে দুটি বিড়াল ছিল জীবিত ও মৃত) হতে পারে  জীবিত বিড়ালটিকে দ্বিমাত্রিক বা পঞ্চম মাত্রিক জগৎ থেকে কেউ টেনে সরিয়ে ফেলেছে, তারাও এই এক্সপেরিমেন্টে আগ্রহী বলে এই কাজটা করেছে; (ধরে নিলাম)। বরং বিড়াল বিষয়ক এই প্যারাডক্সটা কিছুক্ষণের জন্য স্থগিত থাক। আমরা আবার ফিরে যাই আমাদের বর্তমান করোনা জগতে।

২১ দিনের মাথায় আসগর সাহেব কিছুটা সুস্থ্য হয়ে উঠলেন বলে বোধ হচ্ছে। করোনা আছে আবার নাই এরকম দোলাচলে আছেন, তখনই তার মাথায় ভাবনাটা এলো, তিনি ভাবলেন ছাত্র জীবনের সেই পরীক্ষাটি আবার করবেন। ঘরে তো বসেই আছেন। বাক্স, গাইগার কাউন্টার সব জোগাড় করার আগে বিড়াল সংগ্রহ করা হোক। পিপিই আর ডাবল মাস্ক পরে বিড়ালের জন্য গেলেন কাটাবনের সেই সব পেইট শপগুলোতে। গিয়ে দেখেন সেখানে করোনার কারণে ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থা খুবই খারাপ। শুধু বিড়ালের দোকানদারের ব্যবসা যথেষ্ট রমরমা।

- এটা কি ভাবে সম্ভব? সবার ব্যবসা খারাপ আপনার অবস্থা তো বেশ ভালই দেখছি। বিড়ালের দোকানদার মুচকি হাসল।

-  তা ভাল বলতে পারেন, বিড়াল বিক্রি করে বেশ ভালোই আছি

- আলীবাবার কর্নধার জ্যাকমা’র মত বড় ব্যবসায়ি যেখানে বলেছেন এখন বেঁচে থাকাটাই সবচে বড় ইনভেস্টমেন্ট সেখানে আপনি বিড়ালে ইনভেস্ট করে কিভাবে ব্যবসা ফুলিয়ে ফাাপিয়ে উঠলেন বলবেন কি?

-  তার আগে বলুন আপনি বিড়াল কিনতেই এসেছেন তো?

- হ্যাঁ অবশ্যই

- তাহলে আপনাকে বলা যায়। সবার মত আমার ব্যবসাও বেশ খারাপ ছিল। সবাই জান বাঁচাতে ব্যস্ত, এখন বিড়াল কিনতে আসবে কোন দুঃখে? কিন্তু আমি একটা বুদ্ধি করলাম।

-  কী বুদ্ধি?

-  এখন সবাই ঘরে বসে শুধু ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করে করে কিন্তু সব বিষয়ে বেশ জ্ঞানী হয়ে উঠেছে। কাজেই আমি ভাবলাম শ্রডিঞ্জারের বিড়ালের বিষয়টাও নিশ্চয়ই তারা জানে। এই ভেবে আমি একটা বিজ্ঞাপন দিলাম ‘এখানে বাক্স, গাইগার কাউন্টারসহ বিড়াল পাওয়া যায়। জীবিতটা কিনলে, মৃতটা ফ্রি’! আর জানেন তো ফ্রি কিছু পেতে আজকাল মানুষ কত ব্যস্ত!  

-  বাহ ভাল বুদ্ধিতো! আসগর সাহেব চমৎকৃত হন।

-   তারপর আর কি... বিশ্বাস করেন প্রতিদিন আমার বাক্সসহ শ্রডিঞ্জারের বিড়াল সেট বিক্রি হচ্ছে। আজ যেমন আপনি এলেন। বাক্সসহই কিনবেন তো নাকি?

আবার সেই বাক্স-বিড়াল প্যারাডক্সে ফিরে আসি। আসলে বাক্সের ভিতর বিড়াল ক্ষুদার্ত হতে পারে এটা ভেবে গাইগারের পাশে আগে থেকেই একটা ছোট্ট মরা ইঁদুর রাখা ছিল। তার মানে কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুসারে বাক্সের ভিতর ছিল একটি জীবিত বিড়াল একটি মৃত বিড়াল ও একটি মৃত ইঁদুর...!

২০২১ সালের প্রথম সকালে এসে, আসগর সাহেবের হঠাৎ মনে হচ্ছে... তিনি আসলে ঠিক কী? মৃত বিড়াল না মৃত ইঁদুর? মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার যোগ্যতা কি তিনি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র গোলাকার আরএনএ, যার চারদিকে প্রোটিনের আস্তরণে হারিয়ে গেছে? কে জানে!