গুলশান হামলা মামলার রায়ের দিন আদালত পাড়ায় ‘অচেনা’ এক ব্যক্তির কাছ থেকে আইএসের প্রতীক সম্বলিত টুপিটি পেয়েছিলেন জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) একটি মামলার শুনানিতে এসে বিচারকের প্রশ্নে তিনি একথা বলেন।
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত রিগ্যানকে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে আজ হাজির করা হয় কল্যাণপুরের জাহাজ বাড়ির জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের মামলায়। এই ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানই গত ২৭ নভেম্বর গুলশান হামলা মামলার রায় দিয়েছিলেন। সেদিন এজলাসে জঙ্গি রিগ্যানের মাথায় আইএসের প্রতীক সম্বলিত টুপি দেখার পর শুরু হয় সমালোচনা, টুপির উৎস সন্ধানে তদন্তও চলছে।
৬ দিন পর আদালতে আসামি রিগ্যানকে পেয়ে বিচারক মজিবুর রহমান জানতে চান, ওই টুপিটি কোথায় পেয়েছিলেন।
কাঠগড়ায় থাকা রিগ্যান তখন বলেন, ‘ভিড়ের মধ্যে একজন দিয়েছে।’
কে দিয়েছে- বিচারক প্রশ্ন করলে রিগ্যান বলেন, ‘আমি চিনি না।’
আর কাউকে কি টুপি দিয়েছিল- প্রশ্নে রিগ্যান বলেন, আর কাউকে দেয়নি। প্রিজন ভ্যানে ওঠার পর আরেক আসামি জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী ওই টুপিটিই নিয়ে পরেছিলেন।
টুপিটি নিলেন কেন- জানতে চাইলে রিগ্যান বলেন, ‘কালেমা শাহাদাত লেখা ছিল, ভালো লাগায় টুপিটি নিয়েছি।’
আইএসের প্রতীক সম্বলিত ওই টুপি কীভাবে গুলশান হামলার বন্দি আসামিরা পেলেন, তা খুঁজতে কারা কর্তৃপক্ষ ও ডিবি পুলিশ দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কারা কর্তৃপক্ষের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারাগার থেকে ওই টুপি নিয়ে যাননি আসামিরা। ডিবি পুলিশের তদন্ত কমিটি এখনও প্রতিবেদন না দিলেও বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, আসামিরা কারাগার থেকেই ওই টুপি নিয়ে এসেছিলেন।
দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যে রিগ্যান বললেন টুপির উৎসের কথা, যা সেদিন তার পাহারায় থাকা পুলিশের ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত করে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, হলি আর্টিজান মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কীভাবে আইএসের লোগো আঁকা টুপি পেল, সেটি আমি নিজেও জানতে চাই। কোনোভাবেই জেলখানায় বন্দি আসামির বাইরে থেকে টুপি পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু ওর হাতে টুপি গেল! এ বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে, তদন্ত করেই আসল ঘটনা বলা যাবে। আজ মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে নিজের দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
২০১৬ সালের ১ জুলাই নজিরবিহীন গুলশান হামলার পর জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছিল, তাতে ২৫ জুলাই কল্যাণপুরের ‘জাহাজ বিল্ডিং’ বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলে। সেখানে অভিযানে ৯ জন নিহত হন, আহত অবস্থায় ধরা পড়েন বগুড়ার রিগ্যান। অপর একজন পালিয়ে যায়। তারা সবাই জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য বলে জানিয়েছিল পুলিশ। ওই অভিযানের পর ২৭ জুলাই রাতে মিরপুর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. শাহজাহান আলম বাদী সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। সেই মামলার বিচার চলছে মজিবুর রহমানের আদালতে।
গুলশান হামলার রায়ের দিন টুপি বিতর্কের পর জাহাজ বাড়ির মামলাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতকে ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আদালতে আইনজীবী ও মামলা সংশ্লিষ্ট ছাড়া কাউকেই ঢুকতে দেয়া হয়নি। এমনকী গণমাধ্যমকর্মীদের ঢোকায়ও ছিল কড়াকড়ি। আইনজীবীদের তল্লাশি করে আদালত ভবনে ঢুকতে দেয়া হলেও অন্যান্য মামলায় বিচারপ্রার্থী অনেকে আটকে যান, যা নিয়ে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী উভয়ের মধ্যে ক্ষোভ দেখা যায়।
এই মামলার ১০ আসামির মধ্যে গ্রেফতার ৭ জনকে কারাগার থেকে হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে আনা হয় আদালতে। রিগ্যান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- সালাহ উদ্দিন কামরান (৩০), আব্দুর রউফ প্রধান (৬৩), আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ (২০), শরীফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ওরফে সোলায়মান (২৫), মামুনুর রশিদ রিপন ওরফে মামুন (৩০), আজাদুল কবিরাজ ওরফে হার্টবিট (২৮), মুফতি মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর (৬০), আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে নাসরুল্লা হক ওরফে মুসাফির ওরফে জয় ওরফে কুলমেন (৩৩), হাদিসুর রহমান সাগর (৪০)।
এর মধ্যে আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর এবং আব্দুর রউফ প্রধান জামিনে আছেন। তারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এমএ/ এফসি