• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০১৯, ১২:২০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৭, ২০১৯, ১২:২০ পিএম

কেউ মহাকাশেই অপহরণ করবে, মজা করতেন কল্পনা

কেউ মহাকাশেই অপহরণ করবে, মজা করতেন কল্পনা
কল্পনা চাওলা

মেয়ের চিতাভস্ম যখন আমেরিকার ‘জিওন ন্যাশনাল পার্কে’ ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন, তখন পাশে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন মার্কিন মহিলা। অবাক হয়ে তাকিয়েছিলেন বানারসি লাল চাওলা। তার মেয়ে কল্পনা চাওলার মৃত্যুর খবরে যিনি এমন কাঁদছেন, তিনি চাওলা পরিবারের একেবারেই অপরিচিত। ‘কার্নাল থেকে ক্যালিফোর্নিয়া, এ ভাবেই মানুষ আমার মেয়েকে ভালোবেসেছে। ওর মৃত্যুর পর বুঝতে পেরেছি, কত অসংখ্য মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করেছে মেয়ে, কতজনকে অনুপ্রাণিত করেছে। ও শুধু আমার মেয়ে নয়, ভারতের মেয়ে, আমেরিকার মেয়ে- কথাগুলো যখন বলছিলেন, আনন্দে ও গর্বে চকচক করছিল ৮৬ বছরের বানারসী লাল চাওলার চোখ দু’টো।

ইন্দো-মার্কিন মহাকাশচারী কল্পনা চাওলাকে নিয়ে সম্প্রতি একটি তথ্যচিত্র বানিয়েছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক। তাদের ‘মেগা আইকনস টিভি সিরিজে’র অংশ হিসেবে ৪৫ মিনিটের এই তথ্যচিত্রের জন্য কল্পনার বাবা-মা, ঘনিষ্ঠদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) মুম্বাইয়ের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রথম সে তথ্যচিত্র দেখেন কল্পনার বাবা।

বড় পর্দায় মেয়ের জীবনী বাবাকে আরও গর্বিত করেছে। তার কথায়, আমি চাই কল্পনার কাজের মাধ্যমে সারা বিশ্ব উপকৃত হোক। জীবদ্দশায় কল্পনা মানুষকে বহুভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। কার্নালের টেগোর বাল নিকেতনের পড়াশোনা থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা। নিজের বক্তৃতার মাধ্যমে বহু মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে সে। তথ্যচিত্রটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আরও বড় স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করবে।

১৯৬২-তে কার্নালে জন্ম কল্পনার। পাঞ্জাব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চলে আসেন আমেরিকায়। ২০০৩ সালে দ্বিতীয়বার মহাকাশ অভিযানে গিয়ে আর ফেরেননি। মহাকাশযানের সঙ্গেই মাঝপথে ভস্মীভূত হয়ে যান কল্পনা। ইন্দো-মার্কিন এই সাহসিনীর শেষ ইচ্ছে ছিল, মৃত্যুর পর তার দেহভস্ম যেন হিমালয়ের বুকে বা জিওন ন্যাশনাল পার্কে ছড়িয়ে দেয়া হয়। মেয়ের ইচ্ছে পূর্ণ করেছিলেন বাবা।

বানারসীর কথায়, ‘হিউস্টনে মেয়ের বাড়িতে অপেক্ষা করছিলাম। কখন আমার মেয়েটা মহাকাশ থেকে বাড়ি ফিরবে। সে ফিরল না, এল মৃত্যু সংবাদ। ছোটবেলা থেকেই বিমানের ব্যাপার খুব আগ্রহ ছিল মেয়েটার। ও তারাদের স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকত। এখন মনে হয়- ও যেন তারাদের দেশেই বিলীন হয়ে গিয়েছে।

ছোটবেলায় বিমান দেখার বায়না করতেন কল্পনা। তাদের বাড়ির কাছেই ছিল কার্নাল ফ্লাইং ক্লাব। বিশেষ অনুমতি নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন বানারসী। বললেন, বাড়ি থেকে সাইকেল চালিয়ে গিয়েছিলাম। সামনে কল্পনা, পিছনে বসে ছেলে। ক্লাবে পৌঁছে সাইকেল রাখার আগেই বিমানের দিকে দৌড়ে গেল কল্পনা। তার পর সেখানের অফিসারকে কত প্রশ্ন- বিমান কীভাবে ওড়ে? কীভাবে কাজ করে?’ সেদিন বিমানে ঘোরার সময় কল্পনার মুখে আনন্দের প্রতিচ্ছবি এখনও মনে করতে পারেন বাবা। বলেন, ‘সেদিনই বুঝেছিলাম, ও ওড়ার জন্যই জন্মেছে। নক্ষত্রদের মাঝেই ওর স্থান। নাসায় যখন নির্বাচিত হল, মজা করেই বলেছিল, মহাকাশে কেউ ওকে অপহরণ করবে। এখন মনে হয়, সে কথাটাই বোধহয় সত্যি।’

সম্প্রতি একটি দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ড ও হাতে চোট পেয়েছেন বানারসি, কিন্তু মেয়ের কথা বলার সময় সে সব ব্যথা-বেদনা মাথাতেই থাকে না। এখনও কোথাও গেলে বাচ্চা মেয়েরা এসে তাকে ‘বাবা’ বলে ডাকে। তাদের মধ্যেই হারানো মেয়েকে খুঁজে পান বানারসি।এই সময়

এসএমএম