• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২১, ০৪:৫২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ৮, ২০২১, ০৪:৫২ পিএম

ইনস্টাগ্রাম সবচেয়ে বিপজ্জনক

ইনস্টাগ্রাম সবচেয়ে বিপজ্জনক

ঘুম থেকে ওঠে ফোন হাতে নিয়ে ইনস্টাগ্রাম চালু করে স্ক্রলিং করা অনেকের নিত্য দিনের অভ্যাস। কিন্তু এই অ্যাপটি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারি? গত মাসে ফেসবুক হুইসেল ব্লোয়ার ফ্রান্সেস হিগুইন মন্তব্য করেছিলেন যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেগুলোর মধ্যে ইনস্টাগ্রাম সবচেয়ে বিপজ্জনক।  
 
ইনস্টাগ্রাম যে সবচেয়ে বিপজ্জনক তা স্বয়ং তাদের নিজস্ব গবেষণায়ও ওঠে আসে। তবে সে সময় এই গবেষণার ফল ভিন্নভাবে প্রকাশ করা হয়। ইনস্টগ্রামের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটি কতটা জটিল এবং ভিন্ন আঙ্গিকের তা বোঝার জন্য এই গবেষণা করা হয়েছে। 

এজন্য রাজনীতিবিদরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করে চলেন। ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের মধ্যে পাঁচজন তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ভয়ানক ঘটনার বর্ণনা শুনিয়েছেন। ইনস্টাগ্রামের সঙ্গে তাদের কী ঘটেছিল, বিবিসি তা জানার চেষ্টা করেছে। 

দানি, যিনি এখন ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করাকে খুবই ঘৃণা করেন। অথচ ২৯ বছর বয়সী দক্ষিণ ওয়ালসের এই বাসিন্দা ইনস্টাগ্রামের ওপর ভর করে নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এজন্য তিনি ট্রান্সপ্লানের মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তনকারীদের নিয়ে একটি কমিউনিটি গড়ে তোলেন। কিন্তু তিনি এর মাধ্যমে অপব্যবহারের শিকার হয়েছেন। 

দানি নিজেও ছিলেন লিঙ্গ পরিবর্তনকারী মানুষ। তিনি তার ছবিগুলো সবসময় ইনস্টগ্রাম ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতেন, কিন্তু তার ছবিগুলোতে এত কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হত যে শেষ পর্যন্ত তিনি এখান থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন। 

দানি বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে ভালোই আছি, আমার কাছে মনে হয়েছে ইনস্টাগ্রাম নেশাগ্রস্ত মানুষের জন্য, এখানে ব্যক্তিত্ব বলতে কিছু থাকে না। 
 

বে দানি এর এমন মন্তব্যের বিরোধিতা করে ইনস্টাগ্রামের বৈশ্বিক সম্পর্কের ভাইস-প্রসিডেন্ট বলেন, উঠতি বয়সী মেয়েরা ইনস্টাগ্রামকে উপভোগ করেন। 

হ্যানাথ, যিনি ছয় থকে দশ ঘণ্টা করে প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পড়ে থাকতেন। তিনি যখন ১৪/১৫ বছরের তরুণী ছিলেন, তখন থেকেই এটিকে ব্যবহার করে আসছেন। 
 
এখন তার বয়স ২৪। বর্তমানে তিনি স্কটল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ও স্নাপচ্যাটের নোটিফিকেশন চেক করা প্রতিদিন আমার অভ্যাসে পরিণত হয়। এরই মধ্যে আমি বুঝতে পারি যে আমি টিকটকে আসক্ত হয়ে পড়েছি। দিনের একটি বড় সময় আমি টিকটকে পড়ে থাকতাম। কিন্তু পরে আমি এখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করি।  
 
তিনি আরও বলেন, আমি আমার শরীর নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলাম। এজন্য ইনস্টগ্রামে যারা চিকন এবং আকর্ষণীয় ফিগারের তাদেরকে অনুসরণ করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু এ ধরনের চিকন এবং আকর্ষণীয় ফিগারের কোনো মানুষ হতে পারে। হঠাৎ করে আমি অনুভব করলাম মানসিকভাবে আমি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। এরপর থেকেই আমি ইনস্টাগ্রামে তাদেরকে আনফলো করি। 

খন আমি তাদেরকে ফলো করি যারা বডি নিয়ে ইতিবাচক চিন্তা করে। আমি বুঝতে পেরেছি যে প্রত্যেক মানুষের শারীরিক গঠন আলাদা আলাদা। এজন্য যারা আমাকে পছন্দ করে আমি তাদের অনুসরণ করি। এখন আমি আমার শরীর নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। তবে, ইনস্টাগ্রামে ছবি প্রকাশ করলে অনেকে ঘৃণাজনিত মন্তব্য করে থাকেন। 

অনেকে বলে থাকে আমার ওজন কমানো উচিত, কারণ আমি নাকি অনেক মোটা, এই মন্তব্যগুলো আমাকে আমার শরীরে প্রতি মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়। 

উত্তর লন্ডনের স্কুল শিক্ষার্থী স্কারলেট এবং আনিসা বিবিসিকে বলেন, তারা সোশ্যাল মিডিয়ার ভয়াবহতা নিয়ে খুবই সচেতন। 

স্কারলেট ফেসবুক ছাড়া অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে। তার বয়স ১৫ বছর। সে ইউটিউবের কনটেন্টগুলোকে বেশি অনুসরণ করে। এছাড়া খারাপ মন্তব্য থেকে সে সব সময় নিজেকে এরিয়ে চলে।  আনিসার বয়সও ১৫ বছর। খারাপ মন্তব্যের কারণে অনেক অ্যাকাউন্ট থেকে সে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। সে অনলাইনে এমন কিছু দেখেন যা আসলে তিনি দেখতে চাননি। 

তারা দুজনেই একে বিষক্ত পরিবেশ বলে মন্তব্য করেছেন। 

তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন ১৫ বছরের স্কুল শিক্ষার্থী লিয়া। তিনি বলেন, আমার অনেক বন্ধু রেয়েছে যারা অনেক খারাপ ছবি ও ভিডিও দেখে থাকেন। যা তাদের এই বয়সে দেখা ঠিক নয়। এজন্য আমার মা আমাকে এর থেকে দূরে রেখেছেন। 

এদিকে ফেসবুকের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন নাম দেওয়া হয়েছে মেটা যার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত থাকবে ইনস্টাগ্রামসহ অন্য সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ইতোমধ্যে ইনস্টাগ্রামকে শিশুদের কাছে নিরাপদ করতে ইনস্টাগ্রাম কিডস নামে একটির সুবিধা চালু করার ঘোষণা দিয়েছে ফেসবুক। 

জাগরণ/এমইউ